স্কুলগুলিতে ইউনিফর্ম পড়ানোর একটা কারণ হোল ধনী, গরীব, উঁচু, নিচু সামাজিক ভেদাভেদ যেন স্কুলের বাচ্চাদের মনোজগতে প্রবেশ না করতে পারে। গত ২১ মার্চ তারিখে বগুড়া শহরের একটা মেয়েদের স্কুলের বাচ্চারা অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে সকাল থেকে রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত রাস্তায় এবং স্কুলের ভিতরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ঐ স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রীর মা হলেন বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা জজ। ঐ স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীরা শিক্ষকদের নির্দেশে পালা করে প্রতিদিন তাদের ক্লাস রুম ঝাড়ু দেয়। অন্যান্য ক্লাসেও একই নিয়ম। জজ ম্যাডামের মেয়ে ঝাড়ু দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এটা নিয়ে অন্য ছাত্রীদের সাথে তার বচসা হয়।
বাসায় গিয়ে সে ব্যাপারটা তার মাকে জানায় এবং ফেইসবুকে তার সহপাঠীদের নিয়ে কিছু আপত্তিকর কথা বলে। সে তার সহপাঠীদের বস্তির মেয়ে বলে উল্লেখ করে। সে বিচারকের মেয়ে তাই সব নিয়ম তার জন্য প্রযোজ্য না। তার মত সুবিধা পেতে হলে তাদের মাকেও জজ হতে হবে।
এই মন্তব্যের জবাবে তার কয়েকজন সহপাঠীও পাল্টা মন্তব্য করে প্রতিবাদ জানায়। পরের দিন জজ ম্যাডাম স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে নির্দেশ দেন এই সহপাঠীদের অভিভাবকদের ডাকার জন্য। তিনি নিজে স্কুলে হাজির হন এবং অভিভাবকদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন। জজ ম্যাডাম ছাত্রীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হুমকি দেন। তাদেরকে জেলে পাঠাবেন এই কথাও বলেন। এক পর্যায়ে দুইজন অভিভাবক ভয়ে বা বাধ্য হয়ে তার পা ধরে মাফ চান।
এই ঘটনার পরে ছাত্রীরা রাস্তায় এসে অবরোধ করে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাও জজ ম্যাডামের পক্ষ নেন। তিনিও ছাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন এবং টিসি দেয়ার হুমকি দেন। অন্যান্য শিক্ষকেরা গা বাঁচিয়ে চলেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে রাতে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, পুলিশের অতিরিক্ত এস পি ঘটনাস্থলে চলে আসেন। অনেক বুঝিয়ে রাত সাড়ে ১০ টায় ছাত্রীদের ঠাণ্ডা করা হয় এবং আশ্বাস দেয়া হয় যে সেই জজ ম্যাডামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেষ খবর হোল গতকাল হাই কোর্ট থেকে লিখিত নির্দেশ দিয়ে ঐ জজ ম্যাডামকে বিচারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে পোস্টিং দেয়া হয়েছে ঢাকায়।
এই শিশুরা প্রতিবাদ করে দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। ওদের কাছ থেকে আমাদের বড়দের অনেক কিছু শেখার আছে। জজ হতে গেলে নৈতিকতা জানতে হয়। বিসিএস পাস করলে জজ হয় কিন্তু অহমিকা থাকলে আর নৈতিক শিক্ষা না থাকলে এই ধরণের ব্যক্তিরা সমাজের জন্য সমস্যা তৈরি করে। দুই একদিন আগে দেখলাম এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে স্যার বলতে বাধ্য করেছে একজন ডিসি। এগুলি ভালো কথা না।
সূত্র -
dbcnews.tv/articles/
newsbangla24.com/education/222536/The-judge-of-Bogra-lost-his-judicial-power
ইনডিপেন্দেট টিভি
ছবি - পদ্মা নিউজ