কি ধরণের অবস্থায় পতিত হলে একটা মানুষ ভাত চুরি করে খায়। একটা অসহায় মানুষ ভাত যদি চুরি করে খায় এটা কি আসলে একটা অপরাধ? এই ক্ষুধার্ত মানুষটার ভাতের ব্যবস্থা না করতে পারার জন্য তার পাড়া প্রতিবেশী অপরাধী। আমাদের ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী পাড়া প্রতিবেশীর মধ্যে কেউ অভুক্ত থাকলে কোন মানুষের হাজার রাকাত নামাজও কবুল হবে না। এটা হাদিসে এসেছে। কারণ পাড়া প্রতিবেশীর দায়িত্ব ছিল মানুষটার খোঁজ নেয়ার। এটা কি আমরা বুঝতে পারি?
আজকের কালের কণ্ঠ পত্রিকার অনলাইন ভার্শন এবং ঢাকা মেইল থেকে জানতে পারলাম ভাত চুরির অপরাধে এক যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে বগুড়ায় ভাত চুরির চেষ্টা করায় সাব্বির হোসেন (২৩) নামে এক যুবককে হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। পরে নির্যাতনের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গত সোমবার রাতে সদর উপজেলার নিশিন্দারা ইউনিয়নের বারপুর লালিপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তিন মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, লাঠি ও কাঠের বাটাম দিয়ে এলাকার কয়েকজন লোক তাকে নির্যাতন করছে।
প্রথমে তাকে টেনেহিঁচড়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর লাঠি ও কাঠের বাটাম দিয়ে মারধর করা হয়। নির্যাতনের সময় তাকে দড়ি দিয়ে পিঠমোড়া করে বাঁধা হয়। সেইসঙ্গে দুই পা বেঁধে রাখা হয়।
এ সময় বার বার সাব্বির মাফ চাইলেও তাকে ক্ষমা করা হয়নি। স্থানীয় লোকজন জানান, বারপুর লালীপাড়া এলাকার একটি বাড়ির দোতলার রান্নাঘরের জানালা দিয়ে ভাত চুরির চেষ্টা করছিল সাব্বির। এসময় বাড়ির লোকজন দেখতে পেয়ে চিৎকার করলে সে পালানোর চেষ্টা করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে ধাওয়া করে আটক করে। এরপর তার হাত-পা বেঁধে মারধর করার পর ছেড়ে দেয়। সে মাদকাসক্ত বলেও দাবি তাদের।
সাব্বিরের নানি মরিয়ম বেগম জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি সাব্বিরকে প্রতিপালন করেছেন। তার বাবা-মা ভিন্ন এলাকায় থাকে। বাড়িতে সোমবার কোনো রান্না না হওয়ায় সে ক্ষুধার জ্বালায় হয়তো ওই পাড়ায় গিয়ে ভাত চুরির চেষ্টা করে।
পরে তাকে লোকজন ধরে বেদম মারধর করেছে। তিনি বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ, কার কাছে এর বিচার দিমো?’ নিশিন্দারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, চোর সন্দেহে বারপুর লালিপাড়ায় সাব্বিরকে নির্যাতন করা হয়েছে। সে বারপুর মধ্যপাড়ার শফিকুর রহমানের ছেলে। সাব্বির মাঝে মধ্যে কাঠমিস্ত্রির কাজ করে, তবে অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাকে তেমন কেউ কাজে নেয় না। এভাবে তাকে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্যাতন না করে তারা তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করতে পারতো।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) স্নিগ্ধ আখতার বলেন, সাব্বিরকে নির্যাতনের ভিডিওটি দেখে মর্মাহত হয়েছি। এমনভাবে কেউ নির্যাতন করতে পারে না। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কেউ মামলা দায়ের করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্যাতনকারীদের চিহ্নিত করতে সংশ্রিষ্ট ফাঁড়িকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
আমার প্রশ্ন হোল এই দেশে হাজার কোটি টাকা চুরি করে দেশের আইন প্রনেতা হচ্ছে বেগম পাড়ায় বিলাস বহুল জীবন যাপন করছে। এই চোরদের কি বিচার হওয়ার দরকার আছে? যদি বিচার হয় এদের কি শাস্তি হওয়া উচিত? যারা এই ভাত চোরকে পিটিয়েছে এদের মত বীরপুরুষ থাকার পরে এই দেশে হাজার কোটি টাকা চুরি হয় কীভাবে?
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ এবং ঢাকা মেইল
ছবিঃ রয়টার, ঢাকা মেইল এবং বাংলা২৪ লাইভ নিউজ পেপার
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৫:২৪