somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রিকস (BRICS) কি পশ্চিমা দেশগুলির একচেটিয়া অর্থনৈতিক এবং ভু-রাজনৈতিক প্রভাবকে কমাতে পারবে?

২৪ শে জুন, ২০২৩ সকাল ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চায়না এবং সাউথ আফ্রিকা হোল বর্তমান বিশ্বে দ্রুত বর্ধনশীল বৃহৎ অর্থনীতির দেশ যারা সম্মিলিতভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের অর্থনীতিতে আধিপত্য কায়েম করবে বলে মনে করা হয়। ২০০১ সালে জিম ও’নেইল নামক একজন প্রখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ এই ভবিষ্যৎ বাণী করেন। ও’নেইল নেতৃস্থানীয় বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাক্সের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাক্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রাক্তন চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের সময় ট্রেজারির কমার্শিয়াল সেক্রেটারি ছিলেন। উনিই ব্রিকস ইকোনমিক থিউরির প্রবক্তা।

উপরের পাঁচটা দেশের নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ব্রিকস নামক এই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মুলক সংগঠনের নামকরণ করা হয়েছে। ২০০৬ সালে ব্রিকস যাত্রা শুরু করে। এই ৫ টি দেশ ছাড়াও ইতিমধ্যে আরও প্রায় ২৫ টি দেশ ব্রিকসে যোগ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তার মধ্যে বাংলাদেশও আছে। বাকি দেশগুলি হোল;

আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, বাহরাইন, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, আফগানিস্তান, বেলারুস, কাজাকিস্তান, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, সেনেগাল, সুদান, সিরিয়া, থাইল্যান্ড, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, উরুগুয়ে, ভেনিজুয়েলা এবং জিম্বাবুয়ে।


ব্রিকস রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি হবে অন্যের ব্যাপারে নাক না গলানো, সমতা, উভয় পক্ষের মঙ্গল চিন্তা। আগামিতে জি-৭ এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ব্রিকসকে দেখা হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে জি- ৭ এর চেয়ে ব্রিকস রাষ্ট্রগুলির হিস্যা এখন আকারে বড়। ইতিমধ্যে ২০১৪ সালে ব্রিকস নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক চালু করেছে যেটা বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের সাথে সামনের দিনগুলিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া ব্রিকস তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির বৈদেশিক মুদ্রার সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য একটা সঞ্ছিতি তৈরি করবে। এই সঞ্ছিতির সাহায্যে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মুদ্রাকে অনাকাঙ্ক্ষিত অবমূল্যায়ন এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি থেকে রক্ষা করার উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া ব্রিকস আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং যোগাযোগ এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে সুইফট (SWIFT) এর বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশ ২০২১ সালে ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্রিকসের মূল সংগঠনে অংশ নেয়ারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এই বছরের আগস্টে ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিকসের সদস্য বৃদ্ধির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

নতুন সদস্য ছাড়াই উদ্যোক্তা ৫ টি ব্রিকস দেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৩২১ কোটি। অর্থাৎ বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৪২%। জনসংখ্যা, আয়তন এবং জিডিপির ভিত্তিতে ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া এবং চায়না বিশ্বের প্রথম ১০ টি দেশের অন্তর্ভুক্ত। ব্রিকসের ৫ টি দেশই জি ২০ এর সদস্য রাষ্ট্র। প্রথম দিকে শুধু অর্থনীতি নিয়ে কাজ করলেও সামনের দিনগুলিতে বিশ্ব ভু-রাজনীতির ক্ষেত্রেও ব্রিকস ভুমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ব্রিকসের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক আশা ব্যঞ্জক কথা যেমন শোনা যায় তেমনই এই সংগঠনকে নিয়ে সমালোচনাও আছে। ২০০১ সালে ব্রিকসের ধারণা অর্থনীতিবিদ ও’ নীলের মাথায় আসার পরে বিশ্বের অর্থনীতি এবং রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ব্রিকসের ধীর গতিও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রতি বছর সম্মেলন হলেও সম্মেলনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সময় বেশী লাগছে। এছাড়া এই গ্রুপের সদস্য রাষ্ট্র চীন এবং ভারতের মধ্যে বিরোধকে অনেকে ব্রিকসের জন্য হুমকি মনে করছেন। অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের চেয়ে চীনের অর্থনীতি আকারে অনেক বেশী বড় এটাও একটা সমস্যা হতে পারে। ফলে এই সংগঠন চীন দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভবনা আছে। এক দিকে চীন অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে আরেক দিকে ব্রাজিল অর্থনৈতিক মন্দায় পতিত হয়েছে ২০১৫ সালে। অর্থনৈতিকভাবে ভারতও খুব ভালো অবস্থানে আছে এই কথা বলা যাবে না। বরং নিজেদের অনেক অভ্যন্তরীণ সমস্যায় তারাও জর্জরিত। রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে পুরো বিশ্ব একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া নিজেও আগের মত দৃঢ় অবস্থানে নাই। ব্রিকসের কর্ম তৎপরতায় এই বিষয়গুলি প্রভাব ফেলবে।

এখন প্রশ্ন হোল বাংলাদেশ ব্রিকসে যোগ দিলে কতটা লাভবান হবে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে ৫টি ব্রিকস উদ্যোক্তা রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের আমদানি বেশী এবং রপ্তানি খুব কম। ২০২১-২২ সালে আমদানি ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলার আর রপ্তানি ছিল মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ তারচেয়ে ৪ গুন বেশী রপ্তানি করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রে এবং ৭ গুন বেশী রপ্তানি করে থাকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে। এ ছাড়া বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), যাবতীয় আর্থিক কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, উন্নয়ন এবং অবকাঠামো ঋণের সিংহভাগ এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের প্রায় সব উৎসই ব্রিকস বহির্ভূত দেশে। বাংলাদেশ মুলত ব্রিকসের দুই দেশ ভারত এবং চীনের জন্য বড় বাজার। তাই ব্রিকসে যোগ দিয়ে ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার অতি আশা হতাশার কারণ হতে পারে। বাংলাদেশ হয়তো ব্রিকস থেকে ঋণ পেতে পারে। কিন্তু এই ঋণ আমাদের জন্য কতটা ভালো হবে সেটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে। ঋণের টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার না করতে পারলে সেটা আমাদের গলার কাঁটা হতে পারে। অর্থাৎ ব্রিকস থেকে সুফল তোলার সবচেয়ে বড় বাধা অর্থনৈতিক বৈষম্য। বাংলাদেশের বর্তমান বাণিজ্যঘাটতি, যেখানে আমদানি রপ্তানির চেয়ে অনেক বেশি, সেখানে ব্রিকসের সুবিধা আদায়ে একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

বর্তমানে বিশ্বের রাজনীতি এবং অর্থনীতি একচেটিয়াভাবে পশ্চিমাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সেটার বিকল্প হিসাবে ব্রিকসের আবির্ভাব ঘটেছে। কিন্তু ব্রিকস যদি তাদের পরিকল্পনায় ভুল করে এবং ধীর গতিতে চলে সেই ক্ষেত্রে ভালোর চেয়ে খারাপ হওয়ার সম্ভবনা আছে। পশ্চিমাদের সাথে সু সম্পর্ক বজায় রেখে ব্রিকসকে আগাতে হবে। ভারসাম্য তৈরি করতে গিয়ে যেন নতুন সংঘাতের জন্ম না নেয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ব্রিকসের কোন সদস্য রাষ্ট্র যেন অনৈতিক কোন প্রভাব না তৈরি করতে পারে সেই ব্যাপারে অন্য সদস্যদের সতর্ক থাকতে হবে। আসলে ব্রিকস সফল না ব্যর্থ হবে সেটা জানার জন্য আমাদের আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে।

সূত্র - theconversation.com
প্রথম আলো
উইকিপিডিয়া
ছবি - দা বাংলাদেশ মোমেনটস
প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ২:২০
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কবে হবে ভোর?

লিখেছেন পাজী-পোলা, ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৫

আর কত অন্ধকার গাঢ় হলে ভোর হবে?
আর কত শলাকা পুড়ালে বুকের দহন মিটবে?
আর কত নিকোটিন পূর্ণ হলে এই হৃদয়ে তোমার মৃত্যু হবে?

বিকলাঙ্গ ফুসফুস, তোমার আশায় কেবল দম বাড়ে
আর কত নিরাশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আমার আমিতে আমিময়

লিখেছেন জেরী, ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৩৮

করোনাকালীন সময়ে যখন মুখে মাস্ক পড়া লাগত তখন থেকেই এই অদ্ভুত অভ্যাস দেখা দিল।মাস্ক পড়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যাই পরিচিত মানুষরা,রিলেটিভরা এমনিকি আমার কাছের একবান্ধবী ও দেখি আমাকে চিনে না।বান্ধবী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাঙন গগনে ঘোর ঘনঘটা || একটা অদ্ভুত ও বিচিত্র সুরের রবীন্দ্রসঙ্গীত || বেশ কিছুদিন পর আবার ফিরে এলাম গানে

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৫০

শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথযামিনী রে।
কুঞ্জপথে, সখি, কৈসে যাওব অবলা কামিনী রে।
উন্মদ পবনে যমুনা তর্জিত, ঘন ঘন গর্জিত মেহ।
দমকত... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কথা রাখেনি। না, রাখার ক্ষমতা নেই ?

লিখেছেন স্প্যানকড, ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ ভোর ৪:২৪

ছবি নেট ।

ন হন্যতে বইটি মৈত্রীয় দেবীর যা উনি লিখেছিলেন ফরাসি লেখক মির্চা এলিয়াদের লা নুই বেংগলীর জবাব স্বরুপ।মৈত্রীয় দেবীর দাবি তিনি মির্চার প্রেমে পড়েন নি তিনি প্রেমে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসলেই কি সরকার এবার পারবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ ভোর ৬:৫৫




সরকারী দলের কোন প্রার্থী হারতে চাইবে না। অত:পর যারা হারবে তাদের সবাই যদি বলে নির্বাচন সুষ্ঠ হয় নাই। যারা নির্বাচনে আসে নাই তারা তো বলবেই নির্বাচন সুষ্ঠ হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×