somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) কারণে বিশ্ব শান্তি এবং নিরাপত্তায় ঝুকি বৃদ্ধির সম্ভবনাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতিসংঘে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব

১৭ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ প্রথম বারের মত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝুকি এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একটা আনুষ্ঠানিক সভা আয়োজন করেছে। এই সপ্তাহেই সভা অনুষ্ঠিত হবে। ব্রিটেনের পক্ষ থেকে সভার প্রস্তাব করা হয়েছে। সামনের দিনগুলিতে বিশ্ব অর্থনীতি, নিরাপত্তার এবং বলতে গেলে জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখবে। এই ব্যাপারে কিছু ঝুকি এবং চ্যালেঞ্জও আছে যে কারণে এআইকে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অধীনে নিয়ে আসার প্রয়োজন বোধ করছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা। পারমাণবিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যেমন ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি এজেন্সি আছে একই ধরণের একটা কর্তৃপক্ষ তৈরির চিন্তা ভাবনা করছেন বিশ্বের নেতারা।

এই কর্তৃপক্ষ বৈশ্বিক পরিসরে নৈতিকতা, নিরাপত্তা, প্রাইভেসি এবং আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উপর এআইয়ের নেতিবাচক প্রভাব সংক্রান্ত নিয়ম নীতি তৈরি করবে এবং এই বিষয়গুলির ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করবে। এই কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য হবে এআইয়ের পূর্ণ সুবিধা মানুষের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা আবার একই সাথে মানব জাতির শান্তি এবং নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয় তা নিশ্চিত করা।

একথা অনস্বীকার্য যে এআই মানুষের বহু উপকারে লাগছে এবং সামনে আরও লাগবে। এই প্রযুক্তি আমাদের জীবনের অনেক কাজকে সহজ করে দিবে। কিন্তু যত ভালো উদ্ভাবন বা প্রযুক্তিই হোক না কেন নিয়ন্ত্রণ না থাকলে বিপদের সম্ভবনা থাকে। যেমন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ক্লোনিং প্রযুক্তি ইত্যাদি। এই পোস্টের উদ্দেশ্য এআইয়ের দোষ খুঁজে বের করা না বরং এ আইয়ের উপর নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করা।

গত ১২ জুলাই, ২০২৩ তারিখে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলেও এআই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাই কমিশনার ভল্কার তুর্ক প্রশ্ন রেখেছেন যে এআইয়ের সীমা কি হওয়া উচিত? মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে সামনের দিনগুলিতে কি হবে এআই এবং নতুন প্রযুক্তির প্রকৃতি বা ধরণ? এই প্রশ্ন সমাজ, সরকার এবং ব্যক্তিকেও ভাবাচ্ছে।

কোন সন্দেহ নেই যে মানব জাতির কল্যাণে ভবিষ্যতে এআই আরও অনেক ভুমিকা রাখতে পারবে। এআই বহু বিষয়ে মানুষের উপকারে লাগতে পারে। যেমন বিভিন্ন বিষয়ে আগাম পূর্বাভাস এবং অনুমান করার দক্ষতা বৃদ্ধি, জ্ঞান এবং তথ্য আম জনতার জন্য সহজলভ্য করা, বৈজ্ঞানিক গবেষণার গতি বৃদ্ধি, আগের চেয়েও অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে তথ্যকে যাচাই বাছাই করার ক্ষমতা বৃদ্ধি, সৃষ্টিশীল কাজ দ্রুত সময় এআইয়ের সাহায্যে করা ইত্যাদি। কিন্তু আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে যে এআইয়ের অপকারিতার থেকে যেন মানব জাতি নিরাপদ থাকে।

ভবিষ্যতে এ আইয়ের সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়ে বিশ্ব নেতারা চিন্তিত। যেমন স্বৈরশাসকের হাতকে এ আই শক্তিশালী করতে পারে। ভয়ংকর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র এআই দ্বারা পরিচালিত হয় (autonomous weapons system - AWS)। তাই ভুল বা অপ ব্যবহারের ঝুকি আছে। পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ এ আইয়ের সাহায্যে করা হলে সেটাও ভয়ানক হতে পারে। সামাজকে সুবিধা মত নিয়ন্ত্রণ করার হাতিয়ার হতে পারে এ আই। মানবাধিকার হরণ করার মত নজরদারি এবং সেন্সরশিপ আরোপ করা সম্ভব এ আইয়ের সাহায্যে। রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে এই কাজ করা হতে পারে। এআই প্রযুক্তিতে পরিচালিত ফেসিয়াল রিকগনিশন ব্যবস্থা পাবলিক প্লেসে গণ নজরদারিতে পরিনত হতে পারে। এটা মানুষের প্রাইভেসিকে সঙ্কুচিত করতে পারে।

ইতিমধ্যেই সম্ভাব্য ক্রিমিনালদের উপর নজরদারির ক্ষেত্রে এআই প্রয়োগ করার কুফল মানুষ দেখছে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষ অপরাধ করার আগেই তাকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের আচরণ থেকে বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে কাদের অপরাধ করার সম্ভবনা বেশী। এই তালিকায় যাদের নাম আসছে এদের উপর পুলিশের নজরদারি, সন্দেহ বেশী থাকছে। যদিও তারা এখনও পর্যন্ত অপরাধই করে নি। এতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে নিরপরাধ মানুষ। এই তালিকার মানুষদের কেউ কোন কারণে অপরাধ করে ফেললে বিচারের ক্ষেত্রে তারা পক্ষপাতিত্বের শিকার হতে পারে। ফলে বিচার ব্যবস্থা নিরপেক্ষ না থেকে প্রভাবিত হতে পারে । ডেটা এনালাইসিসের ফলাফলের ভিত্তিতে কোন বিশেষ রেইসের বা জাতির মানুষের প্রতি পুলিশের সন্দেহ বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন অভিযোগ এসেছে অনেক দেশে । ফলে সেই জাতি/ রেইসের নিরীহ মানুষও বিপদে পড়ছে। এছাড়া সমালোচনা হচ্ছে যে অনেক এআই সিস্টেম সাদা মানুষের চেহারা যতটা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পাড়ছে কালোদের ক্ষেত্রে ততটা সঠিকভাবে পাড়ছে না। কারণ যাই হোক না কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। ফলে মানুষ পক্ষপাতিত্ব এবং বর্ণ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। কর্মী নিয়োগের সিস্টেম তৈরির ক্ষেত্রে সাদাদের উপাত্ত বেশী থাকার কারণে এই সিস্টেম প্রয়োগের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে সিস্টেম কালোর চেয়ে সাদা মানুষকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

এআই প্রযুক্তি তার নিজ প্রয়োজনে অগণিত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে রাখে। ফলে আগের চেয়ে অধিক মাত্রায় উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে যখন এআই আরও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে। আমাদের অনেক গোপনীয় তথ্য হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারে। পৃথিবীতে ১০০% হ্যাকিং প্রুফ কোন সিস্টেম নাই। তাই হ্যাকিংয়ের সাহায্যে যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগনের তথ্যও জানা সম্ভব।

এআই খুব ভালো একটা প্রযুক্তি এটা স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু বিশ্ব নেতারা অনুভব করতে পেড়েছেন যে এখনই এআই সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি করা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এই উদ্দেশ্য নিয়েই জাতিসংঘে প্রথম বারের মত নেতৃস্থানীয় দেশগুলির নেতারা একত্রিত হবেন। আশা করা যায় তাদের এই প্রচেষ্টা মানব জাতির জন্য কল্যাণকর হবে।

সূত্র -
education.unoda.org
fairtrials.org
ohchr.org
news.abplive.com
weforum.org

ছবি - analyticsvidhya.com
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১২:২১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিক্ষাঙ্গনে অপ্রীতিকর ঘটনার মুল দায় কুৎসিত দলীয় লেজুরভিত্তিক রাজনীতির

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৫

সোস্যাল মিডিয়ার এই যুগে সবাই কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবি সাজতে চায়। কিন্ত কেউ কোন দ্বায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে রাজী নয়। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটা মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে । এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোমলমতিদের নিয়ে আমি কি বলেছিলাম?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪



আমি বলেছিলাম যে, এরা ভয়ংকর, এরা জাতিকে ধ্বংস করে দেবে।

ড: ইউনুসের সরকারকে, বিশেষ করে ড: ইউনুসকে এখন খুবই দরকার; উনাকে টিকিয়ে রাখতে হলে, কোমলমতিদের থামাতে হবে; কিভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিটিয়ে মানুষ মারার জাস্টিফিকেশন!

লিখেছেন সন্ধ্যা প্রদীপ, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৩

এদেশে অনেক কিছুই সম্ভব।বর্তমান এলোমেলো সয়য়ে যা সম্ভব না বলে মনে করতাম তাও সম্ভব হতে দেখেছি।তবে মানুষকে কয়েক ঘন্টা ধরে পিটিয়ে মারাকে ইনিয়েবিনিয়ে জাস্টিফাই করা যায় এটা ভাবিনি।তাও মেরেছে কারা?
একদল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত গভীর ষরযন্ত্র লিপ্ত। মুর্তি ভাঙ্গা,আগুন বিস্ফোরণ ও বোমা হামলা হতে পারে তাই দেশবাসীর সর্তক থাকুন।

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪৪


পিনাকী ভট্টাচার্য ও বললেন ভারত ভেঙ্গে ১০ টুকরা হওয়ার পথে। যাদের বিন্দুমাত্র ভূ-রাজনৈতিক জ্ঞান আছে তারা এই একই কথা বলবে৷ আমি সেটা পিনাকীর আগেই বলেছিলাম। যাদের দিল মে হিন্দুস্তান তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আহা তোফাজ্জল

লিখেছেন সামিয়া, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৪




মৃত্যু এখন এমনি সহজ
ভিডিও করতে করতে;
কথা বলতে বলতে
ভাত খেতে দিতে দিতে;
কনফিউজড করতে করতে
মেরে ফেলা যায়।

যার এই দুনিয়ায় কেউ অবশিষ্ট নাই
এমন একজনরে!
যে মানসিক ভারসাম্যহীন
এমন একজনরে!
যে ভবঘুরে দিক শূণ্য
এমন একজনরে!
যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×