
কয়েক বছর আগে আমার বড় ছেলেকে তার মা আরেকজনের ছেলের সাথে তুলনা করে কি যেন বলেছিল। আমার ছেলে তখন মুষড়ে পড়ে আর বলে আম্মা ‘কমপেয়ার কইরো না’। আমি আমার ছেলেকেই সমর্থন দিয়েছিলাম। আমার স্ত্রীকে বুঝালাম যে প্রত্যেকটা মানুষ আলাদা। সবাই সব ক্ষেত্রে সফল হবে এমন না। একেক বাচ্চার পছন্দ এবং যোগ্যতা একেক রকম হয়।
আপনার ছেলে বা মেয়ে যতই খারাপ হোক, যতই সে বিপথে যাক না কেন তাকে কখনই আরেকজনের ছেলের সাথে তুলনা করা উচিত না। তাকে বুঝাতে হবে ভালো পথে আসার জন্য। কিন্তু অন্যের সন্তানের সাথে তুলনা করা ঠিক না। শিশু মনোবিজ্ঞানীরা বলেন যে এই ধরণের তুলনার ফলে ভালোর চেয়ে খারাপ হয়, বাচ্চা হীনমন্যতায় ভোগে, নিজের প্রতি ভালোবাসা কমে যায়, বাচ্চার মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিতে পারে এবং বাচ্চার মনে হতে পারে যে তাকে বাবা মা ভালোবাসে না। এমন কি একাধিক সন্তান থাকলে এক সন্তানকে বেশী ভালোবাসা এবং আরেকজনকে কম ভালোবাসা, এটাও ঠিক না। সন্তান যতই খারাপ হোক সে আপনার সন্তান এটা মনে রাখতে হবে। তার সাথে অন্যের তুলনা না করে তাকে ভালো করার চেষ্টা করতে হবে।
একই কথা স্বামী বা স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । স্বামীর উচিত হবে না আরেকজনের স্ত্রীর সাথে নিজের স্ত্রীর তুলনা করা এবং স্ত্রীর উচিত হবে না অন্যের স্বামীর সাথে নিজের স্বামীর তুলনা করা। এই তুলনার প্রশ্ন যখনই আসে তখনই বোঝা যায় যে ভালোবাসায় ঘাটতি পড়ছে। প্রকৃত প্রেমিক/ প্রেমিকা কখনও আরেকজনের সাথে তুলনা করে তার প্রেমিক/প্রেমিকাকে ছোট করে না। এই তুলনা মানে হল ভালোবাসায় ভেজাল ঢুকেছে।
দেশকে ভালোবাসার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশদের চামচামি যারা করতো তাদেরকে রায় বাহাদুর বা খান বাহাদুর উপাধি দেয়া হত। ব্রিটিশরা তাদের ক্লাবের দরজায় লিখে রাখতো ‘ডগস এন্ড ইন্ডিয়ানস আর নট অ্যালাউড’। ব্রিটিশদের এই ধরণের বিভিন্ন বর্ণবাদী আচরনকে সমর্থন করতো এই চামচারা। ব্রিটিশদের কোন খারাপ কাজ তাদের নজরে আসতো না। এরাই তখন সমাজের এলিট ছিল। পাকিস্তান আমলে অনেক বাঙ্গালী পরিবার জাতে ওঠার জন্য বাংলা ছেড়ে উর্দু বলতো। বাংলাকে তারা নিম্নমানের এবং হিন্দুদের ভাষা মনে করতো এবং উর্দুকে অভিজাত ভাষা মনে করতো। এগুলি দেশপ্রেম না। এরাও এক ধরণের রাজাকার ছিল। বাংলাদেশের অবস্থা যতই খারাপ হোক না কেন এটা আপনার নিজের দেশ এটা আপনাকে মনে রাখতে হবে। এই ব্যাপারে লিঙ্কড ইনে একটা প্রবাসী মেয়ের (মরিয়ম আকতার) লেখা ভালো লাগলো। সেটা থেকে কিছু অংশ আর তার পুরো লেখার লিঙ্ক শেয়ার করছি;
কত মানুষকে দেখলাম ২ বছরও হয় নাই বাংলাদেশ ছেড়ে আসছে, অথচ পুরোদমে অষ্ট্রেলিয়ান, ক্যানাডিয়ান সাজতে চায়। দেশের কথা উঠলেই, ‘My God, ওখানে মানুষ থাকে!? আল্লাহ্ বাঁচাইছে জান নিয়ে চলে আসছি।’ একজনকে একবার দেখলাম ৩০ মিনিট কারেন্ট নাই দেখে পোস্ট দিছে, “Oh Allah! ৩০ মিনিট কারেন্ট নাই। লিফট চলে না। বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি।অথচ সারাজীবন ৮ ঘন্টার লোড-শেডিং এ থাকতো ! এই হচ্ছে দেশ থেকে চলে আসা ভাই-বোনদের অবস্থা। এক লাইন ইংরেজি লিখতে পারে না (আমার মতোই), কিন্তু বিদেশী গ্রুপগুলাতে দেখি দিস্তার পর দিস্তা আতলামি পোস্ট দিয়েই যাচ্ছে। দেশে থাকলে জীবনেও তাদের এসব হীনমন্য ভাবনাকেন্দ্রিক লেখা কাউকে পড়াইতে অথবা চিন্তা কাউকে শোনাইতে পারত কিনা সন্দেহ (মানের কারণে), আর এখানে এসে শিয়াল বনে রাজা হইছে সবাই (মানের যদিও কোন উন্নতি হয় নাই!)। এই হইতেছে লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী, বিশেষত যারা শিক্ষিত, পয়সাওয়ালা; এবং আমেরিকা, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দেশগুলাতে আছে, তাদের অবস্থা(সবাই না)। এর বাইরে অনেকেই আছে দেশে থাকতে জীবনে কোথাও কোন ভূমিকা রাখে নাই।বিভিন্ন ডিনারে, আড্ডায়, মিটিং এ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলবে, “You know people there? uncultured, uncivilized.” “Are you seriously planning to go to Bangladesh? Don’t go. There are mosquitoes, robbers, heat and dengue!” যেসব বিদেশীদের এসব কথা বলা হয়,সেই সব বিদেশীরাই এসব মানুষকে পছন্দ করে না নিজের দেশকে সম্মান না করার জন্য। অথচ তুই ব্যাটা ঠিকই প্রতিবছর দেশে যেয়ে তোর বাপের হাড়-ভাঙ্গা খাটুনির জায়গা-জমি সব বেঁচে এখানে এসে খরচ করে তারপর দেশকে গালিগালাজ করিস!
এছাড়া নিজের দেশকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য যারা করে তাদের বিরুদ্ধে একজন ভদ্রমহিলা লিখেছেন এই লিঙ্কে গিয়ে দেখতে পারেন - বিদেশে গিয়ে নিজের দেশকে তাচ্ছিল্য নয়। ওনার লেখার কিছু অংশ নীচে দিলাম;
কত জনে কত লেখালেখি করে দেশকে নিয়ে। যা পড়লে ভালো লাগে। আমি লিখতেও পারি না। খারাপ লাগে, কষ্ট লাগে যখন দেখি এদেশেরই আলো হাওয়ায় বড় হওয়া কিছু বাংলাদেশি বাঙালী নিজের দেশকে বিদেশের সঙ্গে তুলনা করে করে নিজের দেশকে ছোট করে, অপমান করে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। নিজের দেশকে ছোট করে আপনারা কি খুব বড় হন?
দেশ হোক, সন্তান হোক, স্বামী/ স্ত্রী হোক না কেন তুলনা করা মানে ভালোবাসা কমে যাচ্ছে।
ছবি - amarkobita4u.com
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ ভোর ৬:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




