এই পোস্টে যা লিখছি সেটা আমার কল্পনা মাত্র। তারপরেও লিখছি। তবে কল্পনার পিছনে যুক্তি আছে আমার। আমি প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের জন্য নীচের কাজগুলি করতাম।
১। একটা নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখতাম আমার শাসনকাল সমাপ্তের সময়ে। সেই নির্বাচনে আমি পরাজিত হলেও পরের বারের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার মন মানসিকতা ধারণ করতাম। ভদ্রলোকে রাজনীতি যেন করতে পারে সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতাম। এটা কঠিন কাজ। কারণ এখন গুন্ডা, মাস্তান, প্রতারক এরা রাজনৈতিক মাঠ দখল করে আছে। সৎ এবং ভালো লোকদের নিয়ে দল গঠন করতাম। এই দল দাঁড়া করাতে অন্তত ৫ বছর লাগবে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশে মানুষ খুব স্বার্থপর। নিজের গায়ে না লাগা পর্যন্ত অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না এবং ভালো কাজে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আসতে চায় না।
২। সরকারি কর্মচারীরা যেন দুর্নীতি না করতে পারে সেই ব্যবস্থা নিতাম। প্রয়োজনে আধুনিক প্রযুক্তি এবং গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নিতাম। ২০০৭ সালে দুর্নীতি বেশ কমে গিয়েছিল। প্রয়োজনে সেই ধরণের ব্যবস্থা নিতাম। বর্তমানে দুর্নীতি করলেও সরকারি চাকুরেদের শাস্তি হয় না বললেই চলে। ছোট মাত্রার দুর্নীতি প্রমাণিত হলেও চিরদিনের জন্য চাকরী চলে যাবে সেই ব্যবস্থা করতাম। এখন যেমন সরকারি লোকেরা ভাবে তাদের চাকরী যাবে না। এই মন মানসিকতা পরিবর্তন করে ফেলতাম। দুর্নীতিবাজদের জন্য সরকারি চাকরীকে কঠিন করে ফেলতাম।
৩। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে নিজের দেশে সেই পণ্যগুলিকে উৎপাদনের ব্যবস্থা করতাম। ভারত বহু বছর পর্যন্ত আমদানির উপরে কঠোর নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল। ফলে ওদের দেশে অনেক শিল্প গড়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীদেরকে এই ব্যাপারে প্রণোদনা দিতাম যেন তারা বাংলাদেশে গাড়ি, কম্পিউটার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, মেশিনারিজের পার্টস তৈরি করার কারখানা এই দেশে তৈরি করে এবং বিদেশে রপ্তানি করে। শ্রম সস্তা হওয়ার কারণে এবং কর্মক্ষম মানুষের হার বেশী হওয়ার কারণে বাংলাদেশ এখন মানুফ্যাকচারিংয়ে অন্য অনেকে দেশের চেয়ে ভালো করবে। উপরের পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে দেশে গার্মেন্টসের পাশাপাশি মাঝারি শিল্পের অনেক কারখানা গড়ে উঠবে। ফলে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হবে। শ্রম সস্তা হওয়ার কারণে অন্য দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় আমরা ভালো করবো।
৪। প্রতিটা ঘরের জন্য অন্তত একজন উপার্জনক্ষম মানুষ নিশ্চিত করতাম। জাতীয় পরিচয় পত্রের সূত্র ধরে একজন নাগরিকের সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জাতীয় সার্ভারে রাখতাম যেন এই ধরনের পরিবার খুঁজে পেতে সমস্যা না হয়। বেকার সমস্যা সমাধানের পুরো দায়িত্ব সরকারের উপর দিতাম। পূর্বের মত বস্ত্রশিল্প, পাট, চিনি, খাদ্য, বনজ সম্পদ সহ আরও যে কর্পোরেশনগুলি ছিল সেগুলিকে পুনরায় চালু করতাম। কিছু ভর্তুকি দিয়ে হলেও এই প্রতিষ্ঠানগুলি রাখতাম যেন বেকারদের এই কর্পোরেশনগুলিতে চাকরী দেয়া যায়। সিবিএ যেন বাড়াবাড়ি না করতে পারে তার জন্য সামরিক বাহিনীর লোক সেখানে বসাতাম। এছাড়া প্রতিটা বড় প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে ৫% লোক বেকারদের থেকে নেয়ার আইন করতাম। অর্থাৎ যারা কোন ভাবেই চাকরী পাচ্ছে না তাদেরকে দিয়ে এই ৫% কোটা পূর্ণ করতাম। সরকার তার জন্য সামান্য কিছু ট্যাক্স সুবিধা এই বড় প্রতিষ্ঠানকে দিবে।
৫। ছাত্র অবস্থায় রাজনীতি করা আইন করে বন্ধ করে দিতাম। রাজনীতিতে সহিংসতার মূল কারণ ছাত্র রাজনীতি। ১৯৭০ সাল আর ২০২৩ সাল এক সময় না। এটা আমাদের বুঝতে হবে।
৬। শিক্ষা এবং গবেষণার বাজেট বর্তমানের চেয়ে অনেক গুণে বাড়িয়ে দিতাম। প্রচলিত সস্তা এম বি এ, বিবিএ কমিয়ে মানুষকে কারিগরি শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতাম।
৭। প্রতিটা মসজিদ, মন্দির, গির্জাতে গরীব এবং অসহায় লোকের একটা তালিকা থাকবে। স্থানীয় লোকেরা সেই তালিকা তৈরিতে সাহায্য করবে। মানুষের দান খয়রাতের মাধ্যমে একটা তহবিল তৈরি করা হবে। সাথে সরকার প্রতিটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু বরাদ্দ রাখবে যেন গরীব মানুষ কষ্টে না থাকে।
৮। সমবায়ের মাধ্যমে বড় মাপের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ফান্ড তৈরি করে বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য করার প্রতিষ্ঠান চালু করতাম। সফল সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলিকে আন্তর্জাতিক ঋণের ব্যবস্থা করে দিতাম কম সুদে।
৯। এছাড়া রেশন কার্ড চালু করতাম সবার জন্য। একটা পরিবারের জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমান রেশন বরাদ্দ দিতাম যেন ভালো ভাবে বাঁচার জন্য খাদ্য মানুষ কম দামে পায়।
১০। আয়করের একটা বড় অংশকে এলাকা ভিত্তিক করে ফেলতাম। অর্থাৎ মনে করেন দিনাজপুরের কোন করদাতা কর দিলে সেই টাকার একটা অংশ দিনাজপুরের কোন প্রকল্প বা কাজে ব্যয় করা হবে এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করতাম। ফলে কর আদায় হবে বেশী।
১১। বাংলাদেশের অডিট ফার্মগুলিকে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতাম যেন তারা কোন প্রতিষ্ঠানের ভুয়া হিসাবের উপর নিরীক্ষা প্রতিবেদন না দেয়। এই অডিট ফার্মগুলিকে লাইনে আনতে পারলে দেশের প্রাইভেট কর্পোরেট সেক্টর লাইনে চলে আসবে। কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি দিতে পারবে না।
১০। বড় আকারের ক্যাশ লেনদেনের উপর নিষেধাজ্ঞা দিতাম যেন কর ফাঁকি কেউ দিতে না পারে। ফলে দেশের পাইকারি ব্যবসায়ীরাও কর দিতে বাধ্য হবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের উপর নজরদারি বাড়িয়ে দিতাম। এগুলির উদ্দেশ্য হল কেউ যেন কর ফাঁকি দিতে না পারে। আমাদের দেশের ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত এখনও কাঙ্ক্ষিত পরাজায়ে আসেনি। এই অঞ্ছলের অনেক দেশের চেয়ে খারাপ।
১১। দেশের প্রতিটা পুলিস স্টেশনে একজন কর্মকর্তাকে ইভ টিজিং প্রতিহত করার দায়িত্ব দিতাম। তার দায়িত্ব হবে গার্লস স্কুল এবং ঐ এলাকায় কোন ইভ টিজিং যেন না হয় সেটা নিশ্চিত করা। এই কর্মকর্তার সাথে ঐ এলাকার গণ্য মান্য কিছু মুরুব্বী লোককে এই কাজে জড়িত রাখতে হবে। ছাত্র রাজনীতি না থাকলে বাংলাদেশে ইভ টিজিং ৮০% কমিয়ে ফেলা কোন ব্যাপারই না।
১২। পুলিশ বাহিনী সহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলিকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতাম। পুলিশে নিয়োগ আর্মির মত কঠিন করে দিতাম। পুলিশ বাহিনীকে ঠিক করা আরও সহজ কারণ তারা কমান্ডের মাধ্যমে চলা শৃঙ্খলিত একটা বাহিনী। উপরের দিকে এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে নজরদারি করলে এই বাহিনীকে ৫ বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের বানানো সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।
১৩। নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং অন্যান্য উপকরনের দাম যেন সিন্ডিকেটের হাতে না পড়ে সেটা নিশ্চিত করতাম। বর্তমানে আসলে দেশে যে অরাজকতা তার বেশীর ভাগের কারণ সরকারি দলের লোকেরা। ক্ষমতায় যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য দলের প্রধানরা গুণ্ডামি, মাস্তানি, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজী করার সুযোগ করে দেয় দলের ছোট, বড় এবং মাঝারি নেতাদের জন্য।
১৪। ভ্রাম্যমাণ ন্যায্য মূল্যের খাদ্য পণ্যের সরবরাহ আরও বাড়িয়ে দিতাম। বর্তমানে সরকার যা দিচ্ছে সেটা অপ্রতুল। সরকারের বর্তমানে চালু থাকা সোশ্যাল সিকিউরিটি রাখতাম এবং প্রয়োজনে আরও বৃদ্ধির চেষ্টা করতাম।
১৫। প্রতিটা জেলায় ১০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৪ টি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল বানাতাম। খরচ পড়তো ৬৪,০০০ কোটি টাকা। মোট বাৎসরিক বাজেটের ১০% ও না। এটা করা এখন বাংলাদেশের জন্য কোন ব্যাপার না।
১৬। ঢাকা মুখিতা বন্ধ করতাম। বিভিন্ন সরকারি অফিসগুলি বিভাগগুলিতে নিয়ে গেলে এবং তাদের কাজের স্বাধীনতা দিলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষককে ঢাকায় আসতে হতো না। শিল্প কেন্দ্র সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে দূরে কোথাও নিয়ে যেতাম। এতে ঢাকার উপরে চাপ কমত।
১৭। প্রতিটা জেলায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি সহ অন্যান্য কল কারখানা নির্মাণের ব্যবস্থা করতাম যেন মানুষ গ্রাম বা উপশহরে থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করে কারখানায় আসতে পারে। সরকারি রেল এবং বাসের ব্যবস্থা করতাম শ্রমিকদের জন্য।
১৮। ঢাকার টাউন সার্ভিস বাস সরকারের উপর দিয়ে দিতাম। সকল প্রাইভেট বাস বন্ধ করে সরকারি বাস চালু করতাম।
১৯ । হুন্ডি যারা করে এদের ধরে জেলে পাঠাতাম বা ফাঁসি দিতাম। এরাই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে।
২০। দেশের ব্রিজ, সুড়ঙ্গ, ফ্লাই ওভার, মহাসড়কসহ বড় বড় নির্মাণ কাজ দেশের ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে করাতাম। কোন কারণে দেশের ইঞ্জিনিয়ার না পারলে বিদেশের লোক ভাড়া করতাম। বিদেশী ঋণে এই কাজগুলি করাতাম না। ফলে স্বাধীনতা থাকবে।
২১। আমাদের দেশের তরুণ তরুণীদের মধ্যে নার্সিং এবং মেরিন পেশায় ভালো করার অনেক সুযোগ আছে। এই দুইটা সেক্টরে বহু তরুণ, তরুণীর চাকরী হওয়া সম্ভব দেশে এবং বিদেশে। এই বিষয়ে আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করতাম যেন তারা দেশে বিদেশে চাকরী পায়।
২২। দেশের বাইরে তরুণ তরুণীরা যেন আরও সহজে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করতাম। প্রয়োজনে বিদেশে যাওয়ার জন্য স্টুডেন্ট লোনের ব্যবস্থা করতাম।
২৩। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে দেশকে শিল্প এবং সেবা নির্ভর অর্থনীতিতে নিয়ে যেতাম। কারণ আমাদের দেশে জমি কম কিন্তু মানুষ বেশী। এই দেশে কল, কারখানা বেশী প্রয়োজন। কারণ শ্রম সস্তা, মানুষ বেশী। অনেক উন্নত দেশে ফ্যাক্টরী কমে যাচ্ছে। তারা অন্য দেশে ফ্যাক্টরি করছে যেখানে খরচ কম।
২৪। অনলাইন আউটসোরসিংয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা ভালো করছে। এই আয় বৃদ্ধির জন্য ফ্রি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতাম।
আসলে ঘুরে ফিরে চিন্তা করলে দেখা যায় আমাদের মূল সমস্যা দুর্নীতি, অযোগ্য নেতা, সুশাসনের অভাব এবং দুর্বল গণতন্ত্র চর্চা, মেধাহীন এবং লোভী আমলার সংখ্যা গরিষ্ঠতা, অদূরদর্শি পরিকল্পনা, শিক্ষা এবং বিজ্ঞানে পিছিয়ে থাকা। আমরা হয়তো এই দেশকে উন্নত দেখে যেতে পারবো না। তবে এখন থেকে ৫০ বছর পরে এই দেশের মাথপিছু আয় হবে অন্তত ৩০,০০০ ডলার। তখন রাজনীতিবিদরা এই দেশের সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে পারবে না। মানুষ তখন নিজের ভবিষ্যৎ নিজেই গড়তে পারবে। তবে দুর্নীতি তখনও যদি থাকে তাহলে মানুষের করের টাকা নিয়ে লুটপাট চলতেই থাকবে। তবে এই জাতি ২০ বছর পরেই অনেক সাফল্য অর্জন করবে এই দেশের গরীব মানুষের প্রচেষ্টার কারণে। সেখানে সরকারের অবদান খুব বেশী থাকবে না। সরকারের লোকেরা সৎ হলে আরও ২৫ বছর আগেই এই দেশ আরও ভালো অবস্থানে থাকতো।