সাধারণভাবে একটা গোষ্ঠী বা দল হিসাবে মুক্তিযোদ্ধারা অবশ্যই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার কি সাত খুন মাফ? পরবর্তীতে এদের মধ্যে কি অনেকে বিপথে যায়নি? এদের অনেকের আচরন কি দেশ ও সমাজ বিরোধী ছিল না? বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের মধ্যে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। যেমন মেজর ডালিম, কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশিদ, কর্নেল ফারুক। বঙ্গবন্ধু যে কুখ্যাত রক্ষীবাহিনী গঠন করেছিলেন তার অধিকাংশ সদস্য ছিল মুক্তিযোদ্ধা। রক্ষীবাহিনীর কুকর্ম ঐ সময়ে সর্বজন বিদিত ছিল। ফলে ১৯৭৫ সালের পরে এই বাহিনীর বিলুপ্তি ঘটে। জাসদে অধিকাংশ সদস্য ছিল মুক্তিযোদ্ধা। জাসদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা কর্মী বাড়াবাড়ির চরম করেছিল। অনেক হত্যাকাণ্ড, ব্যাংক ডাকাতি, অগ্নিসংযোগের সাথে তারা জড়িত ছিল। ঐ সময়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টিতে তাদের ভুমিকা ছিল। ওনাদের কি সমালোচনা করা যাবে না?
২০১৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকি বীর উত্তম জামাত এবং রাজাকারের পক্ষে কথা বলেছেন নিয়মিত । যার কারণে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে অংশগ্রহণকারীরা তাকে নব্য রাজাকার বলতে বাধ্য হয়। কাদের সিদ্দিকি ও তার ভাইদের উৎপাতে টাঙ্গাইলের মানুষ আতঙ্কিত।
বিএনপির মন্ত্রী সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু বিভিন্ন রকমের দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের জন্য তিনি চরমভাবে সমালোচিত ছিলেন। ওনার মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী এই সব খারাপ কাজের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না? কারণ তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। আওয়ামীলীগের এক সময়ের মন্ত্রী মায়া (মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পৃষ্ঠপোষকতা এবং দুর্নীতির জন্য সমালোচিত ছিলেন। তার ছেলেও বড় সন্ত্রাসী। মায়া মুক্তিযুদ্ধের ক্রাক প্লাটুনের সদস্য ছিলেন।
ডেস্টিনির প্রতারণামুলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন সাবেক সেনা প্রধান এবং মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার হারুন- অর- রশিদ বীর প্রতীক। এই কারণে আদালত তাকে সাজা-ও দেয়। এছাড়া সেক্টর কমান্ডার ফোরাম তাকে বহিষ্কার করে। মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলে কি ওনার খারাপ কাজের সমালোচনা করা যাবে না?
সিরাজ সিকদার নিঃসন্দেহে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কিন্তু তার গঠিত সর্বহারা পার্টি বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড, লুটপাট ইত্যাদি এবং দেশে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য প্রচণ্ডভাবে সমালোচিত ছিল। রাষ্ট্রীয় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং ক্রস ফায়ার করে। এই ক্রস ফায়ার অবশ্যই কাম্য ছিল না।
আমি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে দুর্নীতি করতে দেখেছি। আমি নিশ্চিতভাবে জানতাম যে সে ছোটখাটো দুর্নীতিতে জড়িত। তিনি আমার সিনিয়র সহকর্মী ছিলেন। আওয়ামীলীগের মন্ত্রী নাসিম মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কিন্তু আমরা তার কুকীর্তি সম্পর্কে জানি।
তাই মুক্তিযোদ্ধা হলেই কেউ সমালোচনার ঊর্ধ্বে না। জিয়াউর রহমান বিতর্কিত ছিলেন স্বাধীনতা বিরোধীদের দেশের রাজনীতি এবং নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। দেশের মেধাবী ছেলেদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন তিনি নিজের দল গঠনের প্রয়োজনে। সামরিক বাহিনীতে হাজারের অধিক সদস্যকে উনি লোক দেখানো বিচারে বা বিনা বিচারে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। এই ধরণের অনেক মুক্তিযোদ্ধার উদাহরণ দেয়া যায় যারা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে খারাপ কাজের সাথে জড়িত ছিলেন।
তাই গোষ্ঠী হিসাবে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানিত হলেও অনেক মুক্তিযোদ্ধার পরবর্তী কাজকর্ম সমর্থন যোগ্য না। বর্তমানের স্বৈরাচারী সরকার নিরীহ মানুষ হত্যার জন্য দায়ী। এই সরকারের এই কর্মকে যে সব মুক্তিযোদ্ধা সমর্থন করছেন তারা ভুলের মধ্যে আছেন। সেটা বুঝে হোক কিংবা না বুঝে-ই হোক না কেন। ৭১ তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেও এখন তারা অন্যায়কেই অনেকে সমর্থন করছেন। এই ব্লগেও সেই ধরণের মুক্তিযোদ্ধা দেখা যাচ্ছে। কোন মুক্তিযোদ্ধার কাছে থেকে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী জনগণ এই ধরনের আচরন আশা করে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০২৪ রাত ১০:৫৮