বহুদিন পর্যন্ত এই দেশের লোক জানতো যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা মিথ্যা ছিল। জনগণের ধারণা ছিল শেখ সাহেবকে শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের শাসকরা এই মামলা সাজিয়ে ছিল। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে আওয়ামীলীগের লোকেরা এবং এই মামলার সাথে জড়িত অনেকে বলছেন যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সত্যি ছিল। ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় ঐ মামলার অন্যতম আসামী এবং সংসদের ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী বলেন যে ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সরকারের দায়ের করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযোগ শতভাগ সত্য ছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কথা উল্লেখ করে ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী বলেন, ‘আমরা তখন রাজনৈতিক কারণে অনেক কথাই বলেছি। তবে পাকিস্তান আমাদের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যে অভিযোগ দায়ের করেছিল, তা শতভাগ ঠিক ছিল। আমাদের পরিকল্পনা শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। ১৯৬৮ সালে আমরা ধরা পড়ি। পরিকল্পনা ছিল, একটি নির্দিষ্ট রাতের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাঙালি সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানের সবগুলো সেনানিবাস দখল করে পাকিস্তানি সৈন্যদের অস্ত্র কেড়ে নেবে। এরপর মুজিব ভাইয়ের (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) নেতৃত্বে স্বাধীনতা ঘোষণা করব। '
ঐ সময় শেখ সাহেব একবার ভারতের আগরতলায় গিয়েছিলেন। এটা সত্যি। ১৯৬৪ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু ভারতের সাথে গোপনে ষড়যন্ত্র করেছেন বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য। অথচ তিনিই আবার ১৯৭০ সালে নির্বাচনে জিতে উভয় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছেন। ১৯৭১ সালে উনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে পাকিস্তান ভাংতেন? মনে হয় না। অর্থাৎ যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়াই ছিল তৎকালীন আওয়ামীলীগের উদ্দেশ্য। একদিকে বাইরে বাইরে গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চা আর গোপনে ভারতের সাহায্য নিয়ে দেশকে দুই ভাগ করার ইচ্ছা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ওনার কাছে তাজউদ্দিন আহমেদ গিয়েছিলেন যেন তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করেন এবং ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন। কিন্তু বংগবন্ধু সেই প্রস্তাবে রাজী হননি। তিনি তাজউদ্দিন সাহেবকে বলেছিলেন যে বাসায় গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও ২৭ তারিখ হরতাল ডেকেছি। অর্থাৎ উনি ভেবেছিলেন যে ওনাকে গ্রেফতার করার পরে আর্মিরা দেশকে ঠাণ্ডা করে দিবে। পরিকল্পনা ছিল বঙ্গবন্ধু সহ আওয়ামীলীগের বড় নেতারা পালিয়ে ভারতে চলে যাবেন। কিন্তু ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না করে নিজে পাকিস্তানীদের হাতে ধরা দেন। আওয়ামীলীগ নেতাদের কোন দিক নির্দেশনা তিনি দিয়ে যাননি। যে কারণে তাজউদ্দিন আহমেদ সাহেব বাধ্য হন নিজস্ব উদ্যোগে ভারতের সাহায্য নেয়ার।
২৬ মার্চের পরে রাজনৈতিক দলের নেতারা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই সামরিক বাহিনীর কিছু বাঙ্গালী কর্মকর্তা সর্ব প্রথম ৪ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোয় স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম বৈঠক করেন। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উর্ধ্বতন ২৭ সেনা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এ বৈঠকেই দেশকে স্বাধীন করার শপথ এবং যুদ্ধের রণকৌশল গ্রহণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণকে ভাগ করা হয় ১১টি সেক্টর ও ৩টি ব্রিগেডে। অস্ত্রের যোগান, আন্তর্জাতিক সমর্থনসহ গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এ সভায়।
১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেখানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানী, তৎকালীন মেজর সিআর দত্ত, মেজর জিয়াউর রহামন, কর্ণেল এমএ রব, রব্বানী, ক্যাপ্টেন নাসিম, আব্দুল মতিন, মেজর খালেদ মোশাররফ, কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, ভারতের ব্রিগেডিয়ার শুভ্রমানিয়ম, এমপিএ মৌলানা আসাদ আলী, লেঃ সৈয়দ ইব্রাহীম, মেজর কেএম শফিউল্লাহ প্রমূখ।
জেনারেল এম জি ওসমানীর নেতৃত্বে নেয়া হয় মুক্তিযুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি। শপথ বাক্য পাঠ করানোর পর নিজের পিস্তল থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন এম এ জি ওসমানী। ওই সভায় ১০ এপ্রিল দ্বিতীয় বৈঠক ও সরকার গঠনের প্রস্তাবও করা হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। তবে সেক্টর বিভক্ত নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও এ মিটিং ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম মিটিং এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই কারও।
শেখ হাসিনার গত সাড়ে ১৫ বছর শাসন আমলে আওয়ামীলীগ গোপনে ভারতের ‘র’ এর নির্দেশনায় দেশ চালিয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে মানুষকে নির্যাতন করতো ‘র’ এর লোক। প্রায়ই হিন্দি কথা শুনতেন রিমান্ডে নেয়া আটককৃত ব্যক্তিরা। ইদানিং অনেক অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ‘র’ এর ভুমিকার ব্যাপারে তথ্য দিয়েছেন। বিডিআর বিদ্রোহের সময়ে ভারতীয় লোক পিলখানায় হত্যা এবং নিপীড়নে জড়িত ছিল এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। একজন সামরিক অফিসারের স্ত্রী বলেছেন যে তিনি হিন্দি কথা বলতে শুনেছেন যখন তারা বন্দি ছিলেন। এই কথা তিনি যেন প্রকাশ না করেন সেটা বন্ধ করার জন্য তাকে কিছুদিন আগে আর্মি থেকে লোভ দেখানো হয়েছে যে আপনার ছেলেকে আইএসএসবিতে পাস করিয়ে দেয়া হবে। কিছু দিন আগে একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এই তথ্য জনসম্মুখে আনেন।
আওয়ামীলীগের অভ্যাস হল দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব নিয়ে রাজনীতি করা। অতীতের উদাহরণ দিলাম। আর এখন ভারতে বসে করছে। জুলাই আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে শেখ হাসিনা ভারতের সাহায্য চেয়েছিলেন। অর্থাৎ আওয়ামীলীগের মূল লক্ষ্য হল ক্ষমতায় যাওয়া। সেটা দেশ বেঁচে হলেও।
সুত্র - প্রথম আলো
bssnews.net
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৩০