somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্কুল বয়দের ভালবাসা এবং দু'টি তাবিজ নামা

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার গলায় সব সময় একটা তাবিজ বাঁধা থাকত। মা আমার পর এই তাবিজটার যত্ন নিতেন। আমার বুঝ হওয়ার পর থেকে আমি এই তাবিজটা গলায় লটকিয়ে থাকতে দেখতাম। এই তাবিজের কারণে স্কুলে সহ পাঠীরা আমার নামের আগে আলাদা একটা বিশেষণ লাগিয়ে দেয়, "তাবিজ সাহু" কেউ "মাধুলি সাহু" আবার কেউ "কবজ সাহু" বলে ডাকত। রুপালি কালারের তাবিজটাতে বড় অক্ষরে লেখা ছিল আল্লাহু।
বাচ্ছা বয়সে মাঝে মাঝে কৌতূহল জাগত এটার ভিতরে কি আছে। কিন্তু মায়ের মাইরের ভয়ে তাবিজের এক পাশে লাগানো মোমের প্রলেপটি খোলার সাহস পেতাম না। একটা পর্যায়ে এসে তাবিজ আমার জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে গেল। নবম শ্রেণিতে আমার ক্লাস রোল এক। অষ্টম শ্রেণিতে আমার তিন ছিল, রেশমা নামের মেয়েটির ছিল এক । মেয়েটিকে আমার ক্লাস সেভেনে থাকতে ভাল লাগা শুরু করে। অষ্টমে এসে ক্রাস খাই। নবমে তাকে কল্পনার রাজ্যে আশ্রয় দেই। রেশমার সাথে আমার ভাল খাতির ছিল। এটা অনেকের কাছে ভাল লাগত না। বিশেষ করে রোল দুই জাহিদের। সে সব সময় আমার উলটা পাল্টা চলত।

ইতর টাইপের কারণে রেশমা তার ধারে কাছেও ঘেঁষত না। কিন্তু অন্যান্য মেয়ের সাথে তার ছিল গলায় গলায় ভাব। এই বয়সে অনেক মেয়ে তাকে প্রুপোজও করেছে কিন্তু রেশমার কারণে আমলে নেয়নি। রেশমার আরো কাছে যাওয়ার জন্য আমি লেখা পড়ায় অধিক মন যোগ দেই। বিকালে খেলাধুলার পরিমান কমিয়ে দেই, বন্ধুদের সাথে আগে থেকে কম আড্ডা দিতে থাকি। ফলে বার্ষিক পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করি। এতে জাহিদের কপালে চিন্তার ভাজ পরে। তার পরিবার থেকে হাল্কা বকাঝকা খেয়েছে। রেশমার মন অধিক পরিমাণ খারাপ হলেও তার শান্তণা এই যে, আমার এক আর তার দুই হয়েছে আর জাহিদের তিন। জাহিদ তার আগে আসতে পারেনি এতে সে হাঁপ ছেড়ে বেচেছে, সেটা সে একদিন আমাকে কথায় কথায় বলেছিল। সে এক একদিন জিঙ্গেস করল,

রোল কেমতেরে এক হল?
কেমতে আবার, পড়া লেখা করে।
আমার বিশ্বাসস হয়না।
তাহলে তোর কি মনে হয়?
কিছুই না!
বলে রেশমা আমার গলার দিকে এক নজরে তাকিয়ে থাকে। আমি কিছুটা লজ্জা প্রবণ হই। পরে আবিস্কার করি সে আমার গলার দিকে তাকিয়ে নয় তাবিজের দিকে তাকিয়ে আছে। রেশমা হয়ত আমার রোল এক হওয়ার বিভিন্ন কারণ বিশ্লেষণ করেছে, সে কারণ গুলোর সম্ভাব্য একটি হিসেবে তাবিজ কে চিহ্নিত করেছে।

আমি দ্রুত তাবিজটাকে কাপড় নিচে ঢেকে রাখলাম যাতে না দেখা যায়, কারণ মা বলেছিলেন ফকির বাবার শর্ত দিয়েছেন, এই তাবিজে বদ নজর লাগলে হারিয়ে যাবে।

ইদানিং জাহিদের গলায়ও তাবিজ শোভা পাচ্ছে। তারটা পরিবারের কেউ দেয়নি নিজেই দিয়েছে। এ নিয়ে বন্ধুরা অনেকে হাসাহাসি করেছে। আমি তাকে সার্পোট দিছি, আমার সাথে একজন কে পাওয়া গেছে।

নাইনে উঠে লেখা পড়ায় চাপ বেশি হয়েছে, বিষয় ভিত্তিক হওয়ার কারণে। জাহিদের ইচ্ছা ছিল কর্মাস নিবে কিন্তু রেশমা সায়েন্স নেওয়ার কারণে সেও সায়েন্স নিয়েছে। আমার অবস্হা ছিল তাই। রাতে পড়তে বসে রেশমা কে নিয়ে প্রায় কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যেতাম। এক দিন একটি চিঠি লিখি রেশমাকে নিয়ে। পরদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে চিঠিটা তার হাতে দিলাম। সে জিঙেস করল কি? আমি বললাম হ্যান্ড নোট, রাতে পড়তে বসে পড়বি, পড়ে আমাকে জানাবি। তার মুখটা একটু লাল আর হাসি হাসি দেখলাম।

তার পরদিন স্কুলে যাওয়ার পথে রেশমার জন্য অপেক্ষা করলাম, উদ্দেশ্য এক সাথে যাব। রেশমা যথা সময়ে আসল। আমার লজ্জা লজ্জা করছিল তারও একই অবস্হা। আমি কেমন আছো জিঙেস করতেই একটা হাসি দিল, তাতে আমার দিল পুড়ে যাচ্ছিল। তার পর সে বলল,

লিখছ কি তুই?
হ... আমি, ভাল হয়নি।
জানিনা। তবে একটা কথা তোর গলায় এই মাদুলিটা কবে থেকে বেঁধেছিস?
জানিনে, তবে বুঝ হওয়ার পর থেকে গলায় দেখছি।
তার মানে ছোটকালে তুই রুগুথা, বেরাম্মা আছিলি, রুগির মুখে ভালবাসার কথা ফুটছে। বলে রেশমা খিল খিল হাসি দিল, আমি কিঞ্চিত লজ্জা অপমানবোধ করলাম। সেদিনকার মত এখানেই শেষ।

তারপর তিন দিন পর্যন্ত আমার শরীরে জ্বর ছিল, চর্তুথ দিন সুস্হবোধ করলে স্কুলে যাই, গিয়ে শুনি হঠাৎ তার মামাত ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই সে তিন দিন ধরে স্কুলে আসে না। স্যারদের সবাই কে দাওয়াত করছে বিয়েতে যাওয়ার জন্য। আমাদের ক্লাসের সব ছেলে-মেয়েদের কে দাওয়াত করে রেশমা কার্ড পাঠিয়েছে। কার্ডের কভারে লেখা ছিল,

প্রিয়,
তাবিজ সাহু, তাবিজ জাহিদ এবং তার সহ পাঠীরা।

আমি এক নজর তাকালাম তারপর ক্লাস না করেই বাড়িতে আসলাম। বিকেলে মাঠে পায়চারি করতে থাকলাম। একবার ভাবছি রেশমার সাথে দেখা করব। গিয়ে বলব, এই দেখ আমি তাবিজ ফেলে দিছি, তাবিজ ছাড়া সু্স্হ আছি। সাঁজের আগ মহুর্তে জাহিদ কে দেখলাম আমার দিকে হেটে আসতে। কাছে এসে আমার হাত ধরে বলল,
জানিস দোস্ত আমার তাবিজটা না নদীতে ফেলে দিয়েছি। এখন নিজে থেকে হাল্কা হাল্কা লাগছে। আর তুই আমারে ক্ষমা করে দিস। রেশমার কাছে আমি বলেছি, ছোট কালে তোর হাঁপানি ছিল, তাই তোর গলায় সেই জন্য তাবিজ বাঁধা।
আমি হু.... বলে পাশ কাটালাম, তারপর দেখলাম জাহিদ তাদের বাড়ির দিকে হন হন করে চলে যাচ্ছে।
কি মনে করে আমিও মাধুলিটা গলা থেকে খুলে ফেললাম....

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:০৬
৩৩টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×