somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টেলিপ্যাথি

১৫ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টেলিপ্যাথি,
এমন এক যোগাযোগ মাধ্যম, যেটাতে
মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট কিংবা
ইথারের কোন সাহায্য ছাড়াই আপনি
অপর ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে
পারবেন, অথবা জানতে পারবেন
আগাম কোন সুসংবাদ, বিপদের
পূর্বাভাস এমন অনেক তথ্য ! তবে এজন্য
দরকার প্রচুর ধ্যানমগ্ন সাধনা এবং
আত্মবিশ্বাস! এই টেলিপ্যাথি নিয়ে
আমাদের. জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন
আহমেদের ছিল. ব্যাপক আগ্রহ, যা তার
লেখা হিমু সিরিজ. পড়লে জানা যায়


কোন ব্যক্তি তার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের
সাহায্য বা ছাড়া অন্য ব্যক্তির নিকট
তথ্য বা ভাব স্থানান্তর করার
প্রক্রিয়াকে বলা হয় মনালাপন বা
অতীন্দ্রিক বা আধ্যাত্মিক
যোগাযোগ। অর্থাৎ মনের সাহায্যে
দূরের কারও সাথে যোগাযোগ করা।
পরিচিত কেউ বিপদে পড়লে আপনি
হয়ত টের পেয়ে যান কিংবা স্মরণ
করলে আপনিও বুঝতে পারেন। ইংলিশ
পরিভাষায় এর নাম telepathy
(টেলিপ্যাথি)। শব্দটি এসেছে
প্রাচীন গ্রিকভাষা থেকে।tele অর্থ দূর
(distant) এবং patheia/pathos অর্থ
অনুভূতি/বোধ (feeling), উপলব্ধি
(perception), প্রবল অনুরাগ/আবেগ
(passion), দুর্ভোগ (affliction), ইত্যাদি
অভিজ্ঞতা । তার মানে ইন্দ্রিয়ের
সাহায্য ছাড়া নিজের মনোভাব দূরে
প্রেরণ করা এবং অন্যের থেকে গ্রহণ
করা।
মনোবিজ্ঞানে টেলিপ্যাথির বাংলা
পরিভাষা ‘ইন্দ্রিয়াতীত যোগাযোগ’।
অতীন্দ্রিয়’র সমার্থক শব্দ যেমন-
আধ্যাত্মিক, অলৌকিক, দেহতত্ত্ব,
ব্রহ্মজ্ঞান, অতিপ্রাকৃত ইত্যাদি বহু
আছে।
পৃথিবীর সব দেশে সব সমাজে
অতীন্দ্রিক যোগাযোগের ব্যাপারটি
প্রাচীনকাল থেকে বিদ্যমান। আধুনিক
গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা ও
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে
অতীন্দ্রিক যোগাযোগ একটি
আকর্ষণীয় বিষয়। দেখা যায়, এসব গল্প
কাহিনীর সুপার হিরো এবং সুপার
ভিলেনরা এবং ভিন গ্রহের প্রাণিরা
অতীন্দ্রিক ক্ষমতার অধিকারি।
বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে
পাশ্চাত্যে উনিশ শতকের শেষে।
টেলিপ্যাথি উদ্ভাবন করেন ইতালীয়
ক্লাসিক্যাল পন্ডিত ফ্রেডরিক
মায়ারস ( ১৮৪৩ – ১৯০১)। তিনি প্রথম
গবেষণা করার লক্ষ্যে ‘সোসাইটি ফর
সাইকিক্যাল রিসার্চ’ প্রতিষ্ঠা
করেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে
গবেষণা শুরু হয় ১৯৮২ সনে। প্রাকৃতিক
বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার
তাৎপর্যময় অগ্রগতির এক পর্যায়ে
বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব মানসিক
ঘটনাবলীর দিকে নজর দেয়। অনুমান এই
যে, প্রাণির মধ্যে চুম্বকধর্ম বা
আকর্ষণ শক্তি রয়েছে, যার নাম
সম্মোহন। এর উপর পরীক্ষণের মাধ্যমে
কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যাবে।
এই অনুমান থেকে পদার্থ বিজ্ঞানীরা
বৈদ্যুতিক চুম্বকত্বের পরিবেশে
(ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিকফিল্ড- ইএম)
বৈদ্যুতিক চুম্বকত্বের (ইএম)
পরীক্ষণের মাধ্যমে
বৈজ্ঞানিকভাবে অতীন্দ্রিক বা
আধ্যাত্মিক ঘটনাবলীর ব্যাখ্যা হয়তো
দেয়া সম্ভব বলে আশা করেছিলেন। এই
প্রেক্ষাপট থেকেই টেলিপ্যাথির
সূত্রপাত। এনিয়ে তারা বহু গবেষণা
করেছেন কিন্তু কোন ফল পাননি। তাই
পদার্থ বিজ্ঞানীরা আধ্যাত্মিক
ঘটনাবলীর সত্যতা সম্পর্কে সন্দিহান।
বিজ্ঞান আজো এর রহস্য উদঘাটন
করতে না পারলেও প্রচেষ্টা অব্যাহত
রেখেছে।
অতীন্দ্রিক যোগাযোগের সঙ্গে দুটি
মনস্তাত্ত্বিক ধারণার মিল আছে। তার
একটি মনের মধ্যে বিভ্রান্তির আশা-
যাওয়া ((delusion of thought insertion/
removal) এবং অন্যটি মনস্তাত্ত্বিক
মিথোজীবিতা বা দুই ভিন্ন জীবের
সামঞ্জস্যপূর্ণ সহ-অবস্থানের মাধ্যমে
সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন
(psychological symbiosis) । এই মিল
থাকার কারণে অতীন্দ্রিক ঘটনাবলী
নিয়ে কোন কোন মনোবিদ
মনস্তাত্ত্বিক গবেষণায় এগিয়ে
আসেন।
চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান অনুসারে
মানব মনে বিভ্রান্তির আসা-যাওয়া
বিশেষত সিজোফ্রেনিয়া বা অনুরূপ
শক্ত মনোরোগ। এধরনের মনোরোগী
অবাস্তব কল্পনা/চিন্তা করেন,
অসংলগ্ন ভাষায় কথা বলেন এবং
অস্বাভাবিক আচরণও করেন।
মনোরোগী নিজে বিশ্বাস করেন, এসব
চিন্তা তার নিজস্ব নয়, অন্য কোন
ব্যক্তি-মানুষ বা ভুত-পেতিœ বা দুষ্ট
জ্বীন বা শয়তান কিংবা শত্রুপক্ষের
ষড়যন্ত্রকারী গোপন কোন দুষ্টলোকের
যাদুটোনা তার উপর ভর করেছে। সে
(অন্য কেউ) তার (মনোরোগী) মধ্যে
ঢুকে এসব চিন্তা করে আবার বের করে
নিয়ে যায় (thought insertion/removal)।
সাধারণত এধরনের মানসিক রোগীকে
এন্টি-সাইকটিক ঔষধ বা থেরাপি
দিয়ে সুস্থ করা হয়।
কোন ব্যক্তির শৈশবের প্রথম দিকে
নিজের মন মানসিকতা এবং বাবা-
মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের অভিজ্ঞ
একাকার হয়ে থাকে। অর্থাৎ শিশু
একদিকে তার নিজের মনের অবস্থা
এবং অন্যদিকে তার বাবা-মায়ের
সঙ্গে সম্পর্কের অভিজ্ঞতার মধ্যে
কোন পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে না।
শৈশবে মনের এ অবস্থাকে বলে
মনস্তাত্ত্বিক মিথোজীবিতা। শিশুর
মানসিক ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে
এটা আর থাকে না। কিন্তু কোন
ব্যক্তির পরিণত বয়সেও শৈশবের
অবস্থার অন্তর্নিহিত মর্মার্থ খুঁজে
বের করা যায়।
অনুমান করা হয় যে, বিভ্রান্তি বা
মতিভ্রমের অভিজ্ঞতা অথবা
মনস্তাত্ত্বিক মিথোজীবিতা
মনোবিদদের মনালাপনের
আবিষ্কারের প্রতি আকৃষ্ট করেছে। এ
থেকেই মানুষের মনে বিশ্বাস
জন্মেছে যে, আধ্যাত্মিকতার
অস্তিত্ব আছে। বিজ্ঞানভিত্তিক
গবেষণামূলক তথ্যাদি এই ধারণা দেয়
যে বিকারগ্রস্থ অসামাজিক ও
আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিত্বের লোকেরা
বিশেষভাবে আধ্যাত্মিকতার প্রতি
বিশ্বাসী হন। মনোচিকিৎসক এবং
চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীরাও একই মত
পোষণ করেন।
আধ্যাত্মিক মনোবিদ্যা
টেলিপ্যাথিকে এক ধরনের
অতীন্দ্রিক প্রত্যক্ষণ অথবা
ব্যতিক্রমী পরিজ্ঞান (anomalous
cognition) রূপে বিবেচনা করে।
আধ্যাত্মিক মনোবিদদের মতে ব্যক্তি
তার অতীন্দ্রিক বা আধ্যাত্মিক
শক্তির মাধ্যমে তথ্য বা ভাব
স্থানান্তর করে। বিষয়টিকে তারা
পূর্বজ্ঞান এবং অলোকদৃষ্টির
শ্রেণিভূক্ত করেন। আধ্যাত্মিক
যোগ্যতা পরখ করার জন্য তারা
বিজ্ঞানসম্মত পরীক্ষা
(এক্সপেরিমেন্ট) করেন। তন্মধ্যে দুটি
সুপরিচিত পরীক্ষার নাম যথাক্রমে:
জেনার কার্ড (Zener cards) এবং
গ্যানজফেল্ড পরীক্ষা (Ganzfeld
experiment)। কিন্তু কোন ইতিবাচক ফল
পাননি।
মনালাপন/টেলিপ্যাথি তিন ধরনের
অতীন্দ্রিক বা আধ্যাত্মিক মনস্তত্ত্ব
কাজ করে এমন তিন ধরনের মনালাপন /
টেলিপ্যাথির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
নিম্নে দেয়া হলো:
সুপ্ত যোগাযোগ- সুপ্ত যোগাযোগে
ব্যক্তি তার আধ্যাত্মিক শক্তির
মাধ্যমে তথ্য স্থানান্তর করেন। তথ্য
প্রেরণ এবং গ্রহণের মাঝখানে সময়ের
ব্যবধান নিরীক্ষণ করা যায়। অতীত -
জ্ঞান , পূর্বজ্ঞান এবং
স্বতঃস্ফূর্তজ্ঞান লব্ধ অনুভূতি এ
যোগাযোগের মাধ্যমে স্থানান্তর
করা হয়। তার মানে মনালাপনের
মাধ্যমে কোন ব্যক্তি তার মনের
অতীত , বর্তমান ও ভবিষ্যত অবস্থা
আরেকজনের কাছে জানাতে পারেন।
আবেগ সংক্রান্ত যোগাযোগ - একে
দূর নিয়ন্ত্রিত প্রভাব বা আবেগপ্রবণ
স্থানান্তরও বলা হয়। এটি সুখ- দুঃখের
অনুভূতিকে বিকল্প অবস্থায়
স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া।
অতিসচেতন যোগাযোগ- এ ধরণের
আধ্যাত্মিক যোগাযোগে ব্যক্তি তার
মনের সচেতনার গভীরতম স্তরে
প্রবেশের চেষ্টা করেন। গোটা মানব
প্রজাতি সম্পর্কে সার্বিক জ্ঞান
আহরণের জন্য গভীর ও বিস্তৃত উভয়
জ্ঞান জগতে প্রবেশাধিকার পাওয়ার
জন্য ব্যক্তি এরূপ যোগাযোগের চেষ্টা
করেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×