একটি, মাত্র একটি চোখ নিয়েই ক্রিকেট দুনিয়া মাতিয়ে গিয়েছিলেন তিনি, মৃত্যুর আগে সে চোখটিও দান করে গেছেন মনসুর আলী খান পতৌদি।
এ পৃথিবী বৃহস্পতিবার ছেড়ে গিয়েছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক পতৌদি (৭০)। তার মৃত্যুর ঘণ্টাখানের মধ্যে চোখটি খুলে নেওয়া হয় বলে টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে। তার এ চোখটি অন্য কারো মাধ্যমে থাকবে সজীব।
মাত্র ২০ বছর বয়সে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মনসুর আলীর ডান চোখ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কম দেখতেন ওই চোখে; তবে রেকর্ড বলে, বিশ্বের বাঘা বাঘা বোলারদের মোকাবেলায় তার একটি চোখই ছিলো যথেষ্ট।
ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে নয়া দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। মৃত্যু হয় সেখানেই। হাসপাতালের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. সুমিত রায় সাংবাদিকদের বলেন, "মৃত্যুর আগেই একমাত্র ভালো বাম চোখটি দান করে যান মনসুর আলী খান পতৌদি। পরিবারের অনুমতি নিয়ে মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চোখটি অপসারণ করা হয়। এটি এখন হাসপাতালের আই ব্যাংকে রাখা আছে।"
এক সপ্তাহ আগে চোখ দান করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পতৌদি, তখন তিনি পুরোপুরি সচেতন। আর তা জানিয়ে যান স্ত্রী কলকাতার ঠাকুরবাড়ির সন্তান শর্মিলা ঠাকুরকে। শর্মিলাই এ কথাটি চিকিৎসকদের জানান।
পতৌদির দান করে যাওয়া চোখে কে দেখবেন, তা এখনো স্থির হয়নি বলে চিকিৎসকরা জানান।
পতৌদি পরিবারের শেষ নবাব মনসুর আলী ক্রিকেটেও নবাবীয়নার ছাপ রেখে গেছেন। ভারতের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন তিনি। বলা হয়, ক্রিকেটে ভারতের জিততে শেখা হার হাত ধরেই।
মাত্র ২১ বছর বয়সে ভারতীয় দলের অধিনায়ক হওয়া এই ক্রিকেটার পরিচিতি পেয়েছিলেন টাইগার পতৌদি নামে। ১৯৬১ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেকের পর ক্যারিয়ারে ইতি টানেন ১৯৭৫ সালে। ৪৬টি টেস্টে ৩৪.৯১ গড়ে করেন ২ হাজার ৭৯৩ রান। নেতৃত্ব দিয়ে নয় টেস্টে জেতান ভারতকে।
সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৪ সালে 'অর্জুন' ও ১৯৬৭ সালে 'পদ্মশ্রী' পুরস্কার পান মনসুর আলী। ক্রিকেটের পর রাজনীতিতেও নেমেছিলেন তিনি, তবে সুবিধা করতে পারেননি। দুই বার দুই স্থান থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি, কিন্তু হেরেছেন। শেষ বার ১৯৯১ সালে ভোপালে কংগ্রেসের টিকিট নিয়েও কাজ হয়নি।
মনসুর আলীর বাবা ইফতেখার আলী খান পতৌদি বিয়ে করেছিলেন ভোপালের শেষ রাজার মেয়ে সাজিদা সুলতানকে। ইফতেখার নিজেও ছিলেন ক্রিকেটার। দুটি দেশের হয়ে টেস্ট খেলার বিরল সুযোগ হাতে গোনা যে কজনার রয়েছে, ইফতেখার তাদেরই এক জন। জন্মভূমির পাশাপাশি ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলেছিলেন তিনি।
দুই পুরুষের ধারা মেনে মনসুর আলীর সন্তানরা অবশ্য ক্রিকেটে আসেননি। বরং তাদের মা বলিউড তারকা শর্মিলার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তারা পা ফেলেছেন রূপালি জগতে।
মনসুর-শর্মিলার দুই সন্তান সাইফ আলী খান ও সোহা আলী খানও সুঅভিনেতা হিসেবে এরই মধ্যে নাম কুড়িয়েছেন। এই দম্পতির আরেক মেয়ে সাবা আলী খান।
সূত্রঃ বিডিনিউজ২৪.কম

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



