somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অরবিন্দুর পাঠশালা: প্রান্তিক শিশুদের আশার আলো

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘জন্মদিন’ শব্দটি শুনলেই মনের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ জাগে। চোখের পাতায় ভেসে ওঠে বর্নিল আয়োজনের চিত্র- রঙিন বেলুন, বিশালাকার উপাদেয় কেক, মোমবাতি আর শিশুদের কল-কাকলি। এতোসব আয়োজন থাকে ক্ষণিকের জন্য; বড়জোর এক-দু’দিন। কিন্তু অরবিন্দুর ‘জন্মদিন’ চলে হররোজ। শিশুদের নিত্য পদচারণায় মুখর থাকে তার ‘জন্মদিন’ নামের অবৈতনিক পাঠশালা। ঠাকুরগাঁওয়ের অজ পাড়াগাঁয়ে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের আলোকিত করতে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন সরকারি কর্মচারী অরবিন্দু রায়। ভিন্নধর্মী এই পাঠশালাটি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার উজ্জ্বলকোঠা গ্রামে। সন্ধ্যা নামলেই শিশুরা দলবেঁধে ছুটে আসতে থাকে অবৈতনিক এই পাঠশালায়। মাত্র ১০জন শিশু নিয়ে পাঠশালার যাত্রা শুরু হলেও এখন তা দাঁড়িয়েছে ১৭৫-এ।
গত বছরের ১ নভেম্বর সেবা আর শিক্ষার আলো ছড়াতে স্থানীয় পরিবার কল্যাণ বিভাগের কর্মচারী অরবিন্দু রায় এলাকার কয়েকজন যুবককে নিয়ে এ কাজ শুরু করেন। বর্তমানে দুজন বেকার যুবকসহ ৫জন এ পাঠশালায় শিক্ষা দান করছেন। উজ্জ্বলকোঠা ছাড়াও পাঠশালায় পড়তে আসছে বাঙ্গালী কাড়া, রামদেবপুর, ডাবগ্রাম, রাঘবপুর, অতরগাঁওসহ ৮টি গ্রামের শিশুরা। পাঠশালা চালু হওয়ায় শিশুদের লেখাপড়া নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকরা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। অভিভাবক বাসন্তী রানী, হিমেল সরকার, ললিত রায়সহ অনেকেই বাংলানিউজকে বলেন, ‘কৃষিতে তেমন ভালো হচ্ছে না। সংসারে টানাটানি। তিন-চার জন ছেলেমেয়ের লোখাপড়ার চালাতে হিমসিম খাচ্ছিলাম আমরা।’
তাদের মন্তব্য, ‘এই পাঠশালাটি যেন আমাদের জন্য আর্শীবাদ। পাঠশালাটি বন্ধ হলে অনেক আলো নিভে যাবে। তাই সবার সহযোগিতা চাই।’ হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি ধর্মশালায় এ পাঠশালা চালু হলেও এখানে নেই বসার ব্যবস্থা। নেই আলোর ব্যবস্থা। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও শিশুরা কনকনে শীত উপেক্ষা করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুলের পাশাপাশি বিনা খরচে বাড়তি পড়ার সুযোগে খুশি শিশু শিক্ষার্থীরা। উজ্জ্বলকোঠা উচ্চবিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী জয়ন্তী রানী রায় বাংলানিউজকে জানায়, এ পাঠশালায় এসে লেখাপড়ায় তার মনযোগ বেড়েছে। স্কুলের পড়াগুলো এখানে এগিয়ে নেওয়া যায়। উজ্বলকোঠা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী কপিলা রানী জানায়, তাদের সংসারের অবস্থা খুবই নাজুক। লেখাপড়ারই খরচ জোটে না। প্রাইভেট পড়বে কীভাবে! এই পাঠশালা চালু হওয়ায় তার সেই ভাবনা ঘুঁচেছে। ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র জয়ন্ত চন্দ্র বাংলানিউজকে বলে, সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে পড়তে আসি। একটি হারিকেন ও বসার জন্য বস্তা সঙ্গে নিয়ে আসি। রাত ৯টায় আবার চলে যাই।’ নমিতা বলাসহ অনেক শিক্ষার্থী জানায়, এখানে বসে পড়তে অনেক কষ্ট। হাড়কাঁপানো শীতে চারপাশ খোলা তাই কষ্টের মাত্রা বাড়ছে। কিন্তু উপায় নেই, লেখাপড়া তো শিখতে হবে। অবহেলিত গরিব শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্যই এই পাঠশালার জন্ম বলে জানান উদ্যোক্তা অরবিন্দু রায়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘ দিনের আকাক্সক্ষা ছিল গ্রামাঞ্চলের অবহেলিত শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করার। উজ্জ্বলকোঠা গ্রামবাসীদের সহায়তায় এই পাঠশালা চালু করা হয়েছে। প্রতিদিন শিশুদের ভিড় বাড়ছে।’ তিনি জানান, ছোট্ট পরিসরে লোখাপাড়া চালানো খুবই কষ্টকর। শিশুদের বসার জন্য তেমন ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে হয়তো এই পাঠশালার সমস্যা লাঘব হবে।
এখানে পাঠদান করছেন, কৃষক প্রতাপ রায়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘সন্ধ্যার পর তেমন কোনো কাজ থাকে না। তাই ভালো কাজে সময় দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’ তিনি বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই ভবিষৎ প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে এ ধরনের উদ্যোগ ছড়িয়ে দিতে পারলে সোনার আলোয় আলোকিত হবে এ বাংলা।’ বাংলানিউজ
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×