‘মাঝে-মধ্যে মন চায় ক্রিকেট ছেড়ে কুতকুত খেলি’
আইপিএল-এর প্রস্তুতি বৈঠক
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের যেভাবে শনৈ শনৈ উন্নতি হচ্ছে, ধারণা করা যায় আগামীতে যে কোনো দলকে সহজেই নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে। আলামত ইতোমধ্যে পরিস্ফুট হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট যে আসলেই এগিয়েছে অনেকদূর তার প্রমাণ ইন্ডিয়ার আইপিএল আদলে বাংলাদেশে বিপিএল গঠন। সম্প্রতি সংঘটিত হয়েছে বিপিএল-এর প্রস্তুতি বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত সারাৎসার গ্রন্থনা করেছেন শফিক হাসান
যাদের অংশগ্রহণে প্রস্তুতি বৈঠক
সঞ্চালক
মাকুন্দা নোমান
বক্তা
ডাকু জাহাঙ্গীর, অধিনায়ক, ঢাকা ডাকঢোল
কানা বক্কর, অধিনায়ক, চট্টগ্রাম পাহাড়পুত্র
মোকলেস সেন্সলেস, অধিনায়ক, খুলনা ওয়ান্ডারাস
যতীন উকিল, অধিনায়ক, বরিশাল কীর্তনখোলা তীরে
মিন্নত আলী, অধিনায়ক, রাজশাহী বাদশাহী
বিল্লু মিয়া, অধিনায়ক, রংপুর রঙ্গতামাশা
হাসমত দেওয়ান, অধিনায়ক, সিলেট তিনটি পাতা দেড়টি কুঁড়ি
সূচনা বক্তব্য : মাকুন্দা নোমান
উপস্থিতিকে মহতী শুভেচ্ছা। মহতী শুভেচ্ছার কারণ, মহতী কাজ। মহৎ মানসিকতা না থাকলে কি বিপিএল গঠন করা সম্ভব হতো! এই ক্রিকেট দল নির্দিষ্ট কোনো স্থান নয়, পুরো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। সাধারণ জ্ঞানের বই পড়েন এমন মানুষ মাত্রই জানেন, বাংলাদেশে এখন সাতটা বিভাগ। সাতটা বিভাগের খেলোয়াড় সমন্বয়ে এই দল। আজ শুধু সাত দলের অধিনায়করা বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পাবেন। প্রথমে বক্তব্য দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি জনাব ডাকু জাহাঙ্গীরকে। অধিনায়ক, ঢাকা ডাকঢোল।
ডাকু জাহাঙ্গীর
প্রথমে একটা বিষয় ক্লিয়ার করি, ডাকু জাহাঙ্গীর নাম শুনে অনেকেই ভয় পেয়ে যান। ভেবে বসেন, কালা জাহাঙ্গীর সমতুল্য কেউ কিনা! যারা এমনটি মনে করেন তারা আসলে পিওর গর্দভ। আমি অতিশয় ভদ্র ছেলে। প্রমাণ হিসেবে কমিশনারের সার্টিফিকেট সাথে রেখেছি। কমিশনারকেই নিয়ে আসতাম কিন্তু শালা কী একটা চারিত্রিক কেসে বর্তমানে জেলে। নামের আগে ডাকু শব্দটা যুক্তটা হওয়ার কারণ আমার বিধ্বংসী মনোভাব। আমার তা-বে বল-ব্যাট যেভাবে কেঁপে ওঠে, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা করে বলে চামচারা এই নাম রেখেছে। ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই!
সঞ্চালক
এখন বক্তব্য প্রদান করতে উসখুস করছেন জনাব কানা বক্কর। অধিনায়ক, চট্টগ্রাম পাহাড়পুত্র।
কানা বক্কর
নতুন বক্তব্য আর কী দেবো, যখন বক্তব্য দিয়েই ফেলেছি লালদীঘির মাঠে! গত বছর লালদীঘির মাঠে যে কালজয়ী বক্তব্য দিয়েছিলাম তাতে আর মনে করি না বক্তব্য দেয়ার দরকার আছে। সারাজীবন ভালো বক্তৃতা একটা দিলেই যথেষ্ট। ভালো বক্তৃতাটা দিয়ে ফেলেছি। আপনারা যখন বলেছেন দয়া করে বক্তব্য একটা দিই! মিডিয়া কাভারেজও এখানে জড়িত। একটা কথাই বলতে চাই, আইপিএল-এর আদলে বিপিএল কেন? বিপিএল-এর আদলে আইপিএল নয় কেন? আমরা কেন ইন্ডিয়াকে অনুকরণ করবো? উল্টো ইন্ডিয়ারই তো আমাদের অনুকরণ করা উচিৎ। যে দেশের নাম বাংলায় একটা ইংরেজিতে আরেকটা সে দেশকে কেন লাইমলাইটে তুলে আনবো! বিনিময়ে ওরা কোনো ম্যাচজয়ের গৌরব আমাদের দেবে!
সঞ্চালক
বুঝতে পারছি জনাব বক্করের দেশপ্রেম উথলে উঠেছে। তিনি যে এদেশে একটু সমস্যা হলে ইন্ডিয়ার দিকে ছুট লাগান বক্তব্য দেয়ার প্রাক্কালে সেটা স্মরণ রাখলে ভালো হতো! এখন বক্তব্য পেশ করবেন মোকলেস সেন্সলেস। অধিনায়ক, খুলনা ওয়ান্ডারাস।
মোকলেস সেন্সলেস
আমার নাম মোকলেস, ফাউল কিছু দেখলে হই সেন্সলেস। আরো অনেক কারণেই সেন্সলেস হই। এ সংগঠনের আয়োজকদের বলেছিলাম, আমার নাম থেকে সেন্সলেস শব্দটা বাদ দিয়ে সুন্দর কোনো শব্দ বা কবিতা বসিয়ে দিতে। কিন্তু তারা করেনি, এই নামেই নাকি আমি মহিমান্বিত। আগামীতে দেশের ক্রীড়ামোদীরা যদি ভেবে বসে আমি সত্যিকারের সেন্সলেস তখন আমার সেন্স ঠিক থাকবে না! বক্তৃতা দিতে উঠেছি, দুইটা কথা বলে নিই। ভাইসব, এদেশের আজ ক্রিকেটের এমন দুরবস্থা যে মাঝে-মধ্যে আমার মন চায় ক্রিকেট ছেড়ে কুতকুত খেলি! কিন্তু তাও পারি না। কুতকুত খেলতে হয় এক পায়ে। আমি তো উভয়পন্থী! বৈঠকের মাধ্যমে বিসিবির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, ভেবে দেখুন ক্রিকেটের নাম পাল্টে কুতকুত রাখা যায় কিনা। তাহলে অন্তত কুতকুত খেলতে পারছি ভেবে শান্তি পাবো!
সঞ্চালক
ধন্যবাদ কুতকুত খেলোয়াড় সেন্সলেস সাহেবকে। তার ইচ্ছা নিশ্চয়ই অপূর্ণ থাকবে না। এখন বক্তব্য রাখছেন যতীন উকিল। অধিনায়ক, বরিশাল, কীর্তনখোলা তীরে।
যতীন উকিল
নামের কারণে অনেকে মনে করে আমি বুঝি সত্যিকারের উকিল। কেউ কেউ গিরিঙ্গিমার্কা কাগজপত্র নিয়ে ছুটেও আসে। মূর্খমানবদের উদ্দেশে বলতে চাই, আমি উকিল নই কিল দেয়ার গোঁসাই। মানে আর কেউ যদি আমাকে উকিল ভেবে ভুল করে...! জেনে নিজেদের জ্ঞানভা-ার সমৃদ্ধ করুন, উকিল আমাদের পারিবারিক পদবি। আমাদের বংশের সবাই উকিল। এমনকি গর্ভস্থ ছয় মাস বয়সী আমার ছেলেটাও! ওকালতি যদি করতেই হয় আমি হবো ক্রিকেটের উকিল!
সঞ্চালক
বক্তব্য রাখবেন জনাব মিন্নত আলী। অধিনায়ক, রাজশাহী বাদশাহী।
মিন্নত আলী
রাজশাহী নামের মধ্যেই একটা বাদশাহী ভাব আছে! সুতরাং আমার পরিচয় নিশ্চয়ই নতুন করে দিতে হবে না। এদেশে দাবাকে বলা হয় বাদশাহী খেলা। কিন্তু রাজশাহী এবং আমার নামের প্রতি সুবিচার করতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে অনুরোধ করছি, ক্রিকেটকেই বাদশাহী খেলা হিসেবে ঘোষণা দিন। না দিলে আমি মনে কষ্ট পাবো!
সঞ্চালক
বক্তব্য রাখার জন্য মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসছেন জনাব বিল্লু মিয়া। অধিনায়ক, রংপুর রঙ্গতামাশা।
বিল্লু মিয়া
মনে করেছিলাম আমার প্রাণের নেতা কবি এরশাদের সামনে কবিতার ভাষায় বক্তৃতা দেবো। কিন্তু তিনি কই, আপনারা ঢুকতে দেননি নাকি তিনিই আসেননি? তিনি না এলে আমার বক্তৃতা দেবো না। আমার বক্তৃতা শুনতে চাইলে তাকে হাজির করুন। হুঁ!
সঞ্চালক
ধন্যবাদ বিল্লু সাহেব, আপনার সুন্দর বক্তব্যের জন্য। সর্বশেষ বক্তব্য রাখার বাসনা পোষণ করেন জনাব হাসমত দেওয়ান। অধিনায়ক, সিলেট তিনটি পাতা দেড়টি কুঁড়ি।
হাসমত দেওয়ান
অনেক বেল্লিক আমাকে হাবা হাসমত ভেবে ভুল করে বসে। আমি হাবা নই, চালাক হাসমত। বরং যারা আমাকে হাবা ভাবে তাদের বাবা। বিপিএল-এর কর্মকর্তা এবং দর্শকরা আশা করি এ ধরনের ভুল করবেন না। ক্রিকেট বিষয়ে কিছু বলবো না; এই বিষয়ে দৈনিক মাঠ পেরিয়ে নদী পত্রিকায় একটা নিবন্ধ লিখিছি, ওটা পড়ে নেবেন।