ভাবি এখন ঢাকায়!
এটা কোনো সংবাদ না। সংবাদ হচ্ছে, ভাবিকে নিয়ে আমি এখন স্ট্যাটাস দিই না―এ নিয়ে মানুষের অভিযোগ! তবে কি ভাবির সাথে আমার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে!?
কত আর দেয়া যায়―স্ট্যাটাস দিতে দিতে তো স্ট্যাটাসের মানই নামিয়ে ফেলেছি! নতুন করে লিখবোই বা কী―আমার ভাবি আমার অহংকার, ভাবি এলে ঢাকা শহর প্রাণচাঞ্চল্যে জেগে ওঠে, চলে গেলে অন্ধকারে ঢেকে যায়, ভাবির উপস্থিতি টের পেয়ে পাখি ডাকে/ নদী বয় কুলকুল করে/ ফুল ফোটে―সৌরভ ছড়ায়, ভাবির হাতের ছোঁয়ায় শুকনো মরিচটি আমার কাছে অমৃতের স্বাদ নিয়ে আসে... মোটামুটি এসব শোনাতে শোনাতে ফেসবুক বন্ধুদের কান পচিয়ে ফেলেছি! বিরক্তির শেষ সীমা অতিক্রম করতে চাইনি।
আমার কাছে আমার ভাবি পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হতে পারেন কিন্তু এটাকেই আদিখ্যেতা ভাববেন এমন মানুষের সংখ্যাও তো খুব একটা কম না! এরা সস্তা আবেগ বলে উড়িয়ে দেবেন।
তার পরে এসব উটকো কর্মকাণ্ডে ভাবি বিরক্তি বোধ করেন কি না এমন একটা আশঙ্কা তো ছিলোই। থামিয়ে দেবো কি না―যেই না ভাবির মতামত চাইলাম, ভাবি সহাস্যে বললেন, আমার পাগলামি আমি চালি যেতে পারি, তাঁর কোনো অসুবিধা নাই!
গ্রিন সিগন্যাল তো পেলাম, কিন্তু ভাবিকে নিয়ে কত আর মাতামাতি করবো? যদি বঙ্গোপসাগরের সব পানি কালি হয়ে যায়, আর বাংলাদেশের সব গাছ কেটে কাগজ বানানো হয় (ধরে নিলাম আমার কম্পিউটার নাই) তাহলেও তো ভাবিকে নিয়ে লেখা শেষ হবে না! তাঁর গুণকীর্তনের ছোট একটা অংশও শেষ করা যাবে না।
কিন্তু এটা তো আমার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়, তাতে জাতির কী! তার ওপর ভাই তো আছেনই―এখন পর্যন্ত প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন, সব স্ট্যাটাস সয়ে যাচ্ছেন কোন দিন আবার বলে বসেন, 'নিজের বিয়ের খবর নাই, অন্যের বউ নিয়ে হুদাই স্ট্যাটাস বাড়ানো...'!
সব মিলিয়ে অফ হয়ে গিয়েছি। কিন্তু বন্ধু স্থানীয়রা এখানে-ওখানে ধরে বসলো, 'ভাবি কই?'
বলি, 'ভাবি আছেন।'
'কই দেখি না তো!'
'ভাবি ছিলেন, ভাবি আছেন, ভাবি থাকবেন।'
'স্ট্যাটাস কই?'
'স্ট্যাটাসও আছে। এমন ভাবির দেবরের স্ট্যাটাস লো হওয়ার কারণ নাই।'
'আরে ফেসবুক স্ট্যাটাস...।'
এবার একটু ধন্ধে পড়ে যেতেই হয়! যারা ভাবিকে চেনে না, তারা স্ট্যাটাসের পাশাপাশি ভাবির পরিচয়ও জানতে চায়! এই শ্রেণির মানুষকে কখনোই ভাবির পরিচয় সম্পর্কে বলি না। এর পেছনে আমার একটা ছোটলোকি আছে―আমার ভাবিকে আমি সবার ভাবিতে পরিণত করতে চাই না!
বর্ণিত দুই শ্রেণির মানুষই এখন ধরেছে―ভাবিকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিতে হবে, এই ধরনের স্ট্যাটাস তারা খুব মিস করে। কিন্তু আমি তো থেমে গিয়েছি! ভাবি আমার গোপনে লেখা কবিতার মতো থাক, তুলে রাখা দামি পোশাকটির মতোই হয়ে থাকুন, প্রাত্যহিকতায় তাঁকে আর নামিয়ে আনবো না। দেবীর আসন থেকে তাঁকে আমি মানবীর আসনে নামিয়ে আনার দরকারই বা কী।
কিন্তু নাদান পাবলিক মানবে না, কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর―স্ট্যাটাস স্ট্যাটাস, ভাবি ভাবি...।
শেষমেষ বিরক্ত হয়ে বললাম, 'তোমরাই বরং বিয়ে করে ফেলো, তোমাদের বউ তো আমার ভাবি হবে; নতুন ভাবি নিয়েই স্ট্যাটাস দেবো।'
'দেবে তো? আসলেই দেবে? তোমার প্রাণপ্রিয় ভাবির আসন অন্যকে ছেড়ে দেবে!'
'বলেছি তো, দেবো।'
'স্ট্যাটাসে আমার নামও দেবে?'
'দেবো, এমনকি ভবিষ্যৎ সন্তানের নামও দিতে পারি।'
যতই হ্যাঁ বলি, কারোরই বিশ্বাস হতে চায় না! শেষে বলতে বাধ্য হই―'ঠিক আছে, দেড়শ টাকা দামের স্ট্যাম্প কিনে আনো, স্ট্যাম্পে লিখিত দিই...'।
তাতেও কি আর বিশ্বাস হয়! একটু খুঁতখুঁতানি থেকেই যায়! যেই না বললাম, 'ভাবির কসম' তখন সবার বিশ্বাস হলো―না, এইবার হবে; কথা যখন দিয়েছে স্ট্যাটাসও দেবে!
কমসে কম দশজন অবিবাহিত তরুণ কোমরে গামছা বেঁধে বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছে। হায়, জানা ছিলো না, আমার স্ট্যাটাসের এত মূল্য, কাউকে তা বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিতে পারে!
এখন আষাঢ় মাস, ভর বর্ষাকাল। বৃষ্টিও ভালোই হচ্ছে। কয়েক মাস পরেই শীত আসছে। লক্ষণ দেখে অনুমান করছি এবার বরফ জমানো শীত পড়বে।
এই বর্ষায় আগামী শীতে যদি দশটি মেয়ের বিয়ে হয়েই যায়, এদের সুনিদ্রা হবে। গভীর নিদ্রার কারণে এরা জানবে না, মাঝরাত কাকে বলে, রাতের সৌন্দর্য কেমন।
কারো কারো জীবনপাত্র উছলেও পড়তে পারে! কিন্তু এরা কখনোই জানবে না, বুঝতে চাইবে না সেই মহান মানুষটির কথা, কার কারণে তাদের এই সুনিদ্রা, কার বদৌলতে জীবন্ত একটা কোলবালিশ পেয়ে গেলো সময়ের আগেই!
সেই প্রাতঃস্মরণীয় মহান মানুষটির কথা এরা জানার চেষ্টাও করবে না!
ইয়ে... আমার কথা বলছি না, ভাবি ছিলেন বলেই তো এত কিছু। মহান কিংবা মহীয়সী বলে যদি কেউ হন―সেটা অবশ্যই ভাবি, আমার গুণবতী ভাবি!