বর্তমানে বাংলাদেশের একদল চিহ্নিত বুদ্ধিজীবী ও দালাল মিডিয়ার ট্রাম্পকার্ড হলো ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’। যদিও আওয়ামী মদদে প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে হিন্দুদের প্রাধান্য, তারপরও বাংলাদেশে নাকি হচ্ছে ব্যাপক সংখ্যালঘু নির্যাতন! পাঠকগণ আসুন দেখি, এসব হিন্দুর পেয়ারের ভারতে যেভাবে মুসলমান নির্যাতন (সংখ্যালঘু নয়?) হয়ে থাকে তার কিছু নমুনা:
মীরাট শহরে দেখা গিয়েছে বারবার দাঙ্গার দৃশ্য। ১৯৩৮-এ দাঙ্গা, ১৯৪৬-এ দাঙ্গা, ১৯৪৯-এ দাঙ্গা, ১৯৬২-এ দাঙ্গা, ১৯৬৮-এ দাঙ্গা, ১৯৭৩-এ দাঙ্গা, ১৯৮২, ৮৭ ও ৯০তেও মীরাটে দাঙ্গা লাগিয়ে মুসলমানদের পাইকারীহারে হত্যা করা হয়েছে। উদ্দেশ্য মুসলমানদের অর্থনৈতিক উন্নতিকে স্তব্ধ করে দেয়া। ভারতের বাইরে রপ্তানি করার মতো শিল্পসামগ্রী উৎপন্ন হয় মীরাটে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নানা প্রকার ও নানা সাইজের কাঁচি, ছুরি, পিতল ও কাঁসার শৌখিন সামগ্রী, কাপড় রঙ ও ছাপাই প্রভৃতি। ১৯৯০ সালের ১৯’শে মেতে সমগ্র শহরে কারফিউ জারি করা হয়। তার মধ্যে উগ্র হিন্দু জনতারা সরকারি পি.এ.সি. বাহিনীর ছত্রছায়ায় অবাধে মুসলমানদের প্রাণ ও সম্পত্তির উপর হামলা চালিয়ে যায়। সরকারি হিসাব মতে। ওই দাঙ্গায় মৃতের সংখ্যা ১১৭, আহত ১৫৯। এছাড়া ৬২৩টি বাড়ি, ৩৪৪টি দোকান ও ১১৪টি কারখানা ধ্বংস করা হয়। বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা বহুগুণে বেশি। ২২শে মে রাতে হাসিমপুরা এলাকা থেকে প্রায় ৩০০ যুবককে গ্রেফতার করা হয়। তার মধ্যে প্রায় ৫০ জনকে মোরাদনগরের কাছে একটি খালের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে ভারতের সরকারি বাহিনী। খালের পানিতে ফেলে দেয়া লাশগুলো কয়েকদিন পরেই ভেসে উঠে। পি.এ.সি. হায়েনারা সেখানকার মদের দোকানটি লুট করে গ্রামের দলিত হিন্দুদের বিনা পয়সায় মদ খাইয়ে তাদেরকে নাশকতার কাজে ব্যবহার করেছিল। কয়েক দিন পরেই শহরের কাছে বাস হতে নামিয়ে খুন করা হয় ১১ জনকে। (সূত্র: ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়: গোলাম আহমদ মোর্তজা, পৃ. ২৭)
পাঠক! যেখানে আমাদের দেশে একটি হিন্দুর মরামুখও দেখা যায়নি, সেখানে তারপরও কি এদেশে হচ্ছে সংখ্যালঘু নির্যাতন? নাকি নির্যাতনের ধুয়া তুলে দেশকে বেকায়দায় ফেলে হিন্দুদের ফায়দা অর্জন?
ভারতে মুসলমানদের উপর যে নির্যাতন হয়, তাও কি সংখ্যালঘু নির্যাতন? ২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে উগ্র হিন্দুরা গুজরাটে যে স্মরণকালের ভয়াবহ মুসলিম নিধন চালিয়েছিল, সেসময় গুজরাটে ছড়ানো কতগুলো লিফলেট যোগাড় করেছিল পশ্চিমবঙ্গের লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী। এর একটিতে লেখা ছিল ‘ভারত যখন স্বাধীন হয়, তখন ভারতে ৩ কোটি মুসলমান ছিল। আজ ওরা ৩৫ কোটি।’ (সূত্র: গুজরাট দিচ্ছে ডাক, সম্পাদনা অশোক দাশগুপ্ত, পৃ. ২৬-২৮, ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়: গোলাম আহমদ মোর্তজা, পৃ. ৩৪)
যদি ২০০২ সালেই ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা ৩৫ কোটি হয়, তাহলে এই ২০১৪ সালে তা কত হতে পারে? ৫০ কোটির কম তো অবশ্যই নয়!
অর্থাৎ সংখ্যালঘু নির্যাতন নয়, গলা কেটে মুসলমানদের সংখ্যা কমাতেই ভারতে প্রতিনিয়ত দাঙ্গা হয়। আর বাংলাদেশে হচ্ছে সংখ্যাগুরু নিগ্রহ তথা মুসলমাদের হেয় করে আওয়ামী নেতৃত্বে সর্বত্র হিন্দুতোষণ। এদেশের মুসলমানগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পরও এই হিন্দুতোষণ একদিন ভারতের ন্যায় তাদের গলাতেও ছুরি হয়ে বসবে। কারণ ভারতেও কিন্তু মুসলমানগণ সংখ্যালঘু নয়!