আমার মেয়ে শায়লা।
বয়স মাত্র ছয় বছর।
গায়ের রঙ ফর্সা না,শ্যামলা।
কিন্তু সত্য বলতে আমি জীবনে দেখা সবচাইতে সুন্দর নারী আমার মেয়ে।
যখন জন্মের পর আমি যখন ওর দিকে তাকালাম আমি রীতিমত আশ্চর্য হয়ে গেলাম।
আমাকে সৃষ্টিকর্তা এত সুন্দর উপহার দিলেন!!!!!!
আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না।
নিজেকে অশেষ ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছিল।
অফিসে মনই টিকত না,
খালি মনে হত কক্ষন গিয়ে ওকে কোলে নিয়ে আদর করব,
তিন বছর বয়েসে ও আমাকে বাবা বলে ডাকতে শিখেছে,
আর যাবতীয় বিষয় ও গ্লাস আর প্লাশ বলে ডাকে।
আমার ছোট্ট মেয়ের চোখ দুইটি খুবই সুন্দর।
দেখলে মন শান্তির হাওয়া বয়ে যায়।
ইচ্ছা করে সারাদিন ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে।
একবার হল কি ওর ঠান্ডা হল।
সারাদিন জ্বর ও ছিল।
রাতে অবস্থা বেগতিক হয়ে গেল।
আমি পাগল হয়ে গেলাম,
কী করব বুঝতে পারলাম না।
হাসপাতালে ছুটে গেলাম।
ডাক্তার চিন্তিত।
আমি হতবাক হয়ে গেলাম।
সারাদিন আল্লাহর কাছে বললাম"আল্লাহ তুমি আমার মেয়েকে ঠিক করে দাও।যে করেই হোক ঠিক করে দাও।আমাকে নিয়ে যাও কিন্তু আমার মেয়েকে নিও না,হে করুনাময়।"
একদিন পর অবস্থা ভাল হল। জ্ঞান আসার পর আমাকে যখন বলল"বা-বা"
আমার জীবনের স্বর্ণময় মুহূর্ত,
যাকে কিনতে কেউ পারবে না,
মুল্য যার কাছে মূল্যহীন।
মেয়ে আমার আগুনকে ভয় পাই।
খুব ভয় পাই।
একবার ও না জেনে জলন্ত মোমবাতির উপর হাত রেখেছিল।
তারপর থেকে আগুনকে ভয় পায়।
আমি ওকে বলতাম"মা ভয় পাস না।আমি থাকতে আগুন তোর ধারে কাছে আসতে পারবে না।"
ও তখন আনন্দে হেসে উঠে আমার কোলে উঠে পড়ত।
সেদিন ছিল শুক্রবার।
অবরোধ ছিল।
ওর মা আমাকে বলল"ওগো অনেকদিন মাকে দেখি না। আজ চল না যায় যাত্রাবাড়ীতে?।"
আমি না করছিলাম।
ওর মা মানল না,
ও বলল"আরে কিছুই হবে না। চল ত।"
জোর করে গেল।
সকালে গেলাম
ওখানে রাত হয়ে গেল।
বাসে উঠলাম আটটায়।
ওর মা বলল"পানি খাব।নিয়ে আস ত এক বোতল।"
আমি নামলাম।
দোকানে যেতে যেতে দেখলাম,
এক লোক এসে একটা পেট্রল বোমা মারল বাসে,
দাউদাউ করে জ্বলে উঠল বাস,
আমি হতবাক ও নির্বাক হয়ে গেলাম।
তখন সবশেষ
আমার মেয়ের সারা শরীর পুড়ে গেছে
মেয়ের মারও।
দগ্ধ সারা শরীর,
আমার মেয়ে আগুনকে ভয় পেত,
আমার মেয়ে আগুনকে ভয় পেত,
হাসপাতালে নিতে পারলাম না
নিয়ে গেছে উপরওয়ালা,
চার বছর পর সেই লোককে দেখা যায়,
ঢাকার আনাচে কানাচে,
সারাদিন একটা কথা বলে,
আমার মেয়ে আগুনকে ভয় পেত,
আমার মেয়ে আগুনকে ভয় পেত,
সারাদিন কাদে আর এককথা বলে।