somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতি রোমন্থন

০৬ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুক্রবার দিনটা আমাদের কাছে মনে হয় বরাবরই একটু বেশী প্রাধান্য পেতো। ওইদিন কারও স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি নাই, সবাই নামতো একসাথে। তাদেরই কয়েকজন - সাব্বির, রাতুল, অন্তিক, ইপু, ইতমাম, নিবিড়, অনিক, সাগর, সামি, অতনু। সবার বয়স এক না হলেও কাছাকাছি। এক এক করে সবার বর্ণনায় আসি। শুক্রবার নামাজের টাইমে যেই ছেলেটা ফেসবুকে বসার জন্য নামাজে দেরী করে ফেলতো এবং প্রায়শই নামাজ মিস করতো তার নাম সাব্বির। মাথায় আজাইরা সব বুদ্ধি গিজগিজ করে। এই ছেলেটা নামাজের পর প্ল্যান করতো বিকালে কি খেলবে, কয়টার সময় সবাই নিচে নামবে। সাথে কিছু মাত্রাতিরিক্ত বুদ্ধিমান পোলা আর কিছু ধার্মিক পোলাও থাকতো। ফ্রিজভী ট্রিমেনডাজ (রিজভী) তেমনই এক ছেলে। ভাই বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় ১ম হয়েছিল। ভায়ের সম্মান রাখতেই কিনা কে জানে - সেও আজ বুয়েটে পড়ে। সারা বছর দেখা পাওয়া ভার। পড়ালেখায় ভীষন ব্যাস্ত। ভাগ্য ভালো থাকলে নামাজের পর তার দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু পরীক্ষা যেইদিন শেষ ওইদিন হুট করে ফোন। বিকালে নামবা না? তার সাথেই থাকে সফটয়্যার ম্যান (শোভন)। সেও বুয়েটের ছাত্র। আস্তা দিন যন্ত্রপাতি দিয়া কি কি যে বানায় কে জানে। একদিন শুনলাম এমন একখান রিমোট বানাইসে যা দিয়ে নাকি বাসার নিচে থেকেও কম্পিউটার অফ করে দেওয়া যাবে। আরেকবার বললো, কলের নিচে হাত রাখলে নাকি আপসেই পানি পরা স্টার্ট হয়ে যাবে, হাত সরাইলে পানি পরা বন্ধ হয়ে যাবে। ভালোই লাগে ওর এইসব উদ্ভাবন এর কথা শুনতে। এর সাথে থাকবে রকিব মামা (রাকিব) আর জামাই (ফারহান)। ভাগ্য সু-প্রসন্ন হলে ধার্মিক চুষনির (সাকিব) দেখাও পেয়ে যেতে পারেন। এদের সাথে মাঝে মাঝে তরুণ উদীয়মান ক্রিকেটার নিশাত (আশিক) কেও দেখা যায়। যে এখন নাকি ল পড়তেসে। আমাদের বন্ধুদের অনেকেই আশা দেখে পরবর্তীতে রেপ কেস খাইলে নিশাত আইসা বাঁচাইবো, যদিও গ্যারান্টি নাই। সাথে থাকবে চাপা (সামি)। যে কিনা বিভিন্ন বিয়ে বাড়িতে গিয়ে ১৩-১৮ পিস রোস্ট খায় (ওর মুখেই শোনা, সত্যতা যাচাই করা হয় নায়)। যে কিনা বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিভাবান ক্রিকেটার। সে নাকি সেন্টার এর মাঠে জাতীয় টিমের বোলার মঞ্জুরুল ইসলামের বলে ছক্কা হাঁকিয়েছে (সত্য মিথ্যা জানি না)। সাথে থাকবে অন্তিক, ইপু, রাতুল, নিবিড়, সাগর, অতনু, রাতুল, ইতমাম, অতনু সহ আরও অনেকে। তারপর তারা মসজিদের পিছনে গিয়ে বিড়ি ফুকবে। ইপু বারবার আশে-পাশে তাকাবে কেউ দেখতেসে কিনা। এর মাঝে গিভসন (রাকিব) আসবে। ৬ ফুট ২ ইঞ্চির বিশাল দেহী পোলাটারে আমার ভালোই লাগে। মাথায় বুদ্ধি একটু কম কিন্তু মনটা ভালো। সে এসে একটা লাইটস ধরাবে। বিড়ি পর্ব শেষে সবাই আমার বাসার সামনে। আজকে বিকালে খেলা হবে। সবাই নামবে এই মতস্থির হইলো। আরও কিছুক্ষণ আড্ডা। ইপু বেশী দেরি করে না, তার নাকি আবার কুইজ আছে। আমার মোবাইলে অলরেডী ২ বার আব্বার মোবাইল থেকে ফোন আসছে, খাওয়ার ডাক পরছে। যাই হোক আরও কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে সবাই সবার বাসায় যায়।

খাওয়া দাওয়ার পর যথারীতি ফেসবুকে অনলাইন। ইপু, নিবিড়, ইতমাম আর রাতুলকেও অনলাইন দেখা যাইতেসে। ৪ টা বাজার পর পরই জে.এম.বি. মিজানের ডাকাডাকি। ভাইয়া নামবেন না? আমি বলি - নামবো! তুমি এককাজ করো রাতুলদের কে ডাকো আমি নামাজটা পরেই নামতেসি। ও চলে যায়, আমি নেটেই বসে থাকি। সবাই নামে আরও আধা ঘন্টা পর। রাতুল নিচে নামছে, কানে মোবাইল। ইপু-নিবিড় ফাইজলামি করতেসে। সাগর আর ইতমাম তা দেখে হাসতে হাসতে শেষ। সবার ডাকাডাকি তে অবশেষে নিচে নামি। ইতমাম আর নিবিড় বলে - দূর মিয়া এতক্ষণ লাগে? আমি তাৎক্ষণিক একটা অজুহাত দাঁড় করাই। অন্তিক তখনও আসে নাই। গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে গেছে। আধা ঘন্টা ধরে ফোন দিলে নাকি বলতেসে চলে আসছি আর ৫ মিনিট। অবশেষে আরও ১০ মিনিট পর আসলেন জনাব। যাই হোক এখন খেলা শুরু করা দরকার। রাতুলের কান থেকে ফোন তখনও নামে না। ১ টিমে আমি, রাতুল, সামি, ইতমাম আরেক টিমে অন্তিক, ইপু, নিবিড়, সাগর (বেশীরভাগ সময়ে এমনই টিম হইতো)। সামি আর আশিক খ্যাপ খেলতে অন্য খানে গেছে। আমরা ব্যাটিং পাইলাম। কিন্তু ১০ রানেই ২ উইকেট পরে গেলো। আমিও আউট রাতুলও আউট। কি করা যায়? উপস্থিত বুদ্ধি। অন্তিক দোস্ত এটা তোরা জিতসিস, নতুন একটা খেল। তোরা আগে ব্যাটিং। অন্তিক-ইপু রাজি। ৬ ওভারের খেলা। ওরা ৪৩ রান করলো। আমাদের ব্যাটিং শুরু। রাতুল প্রথমেই বল পুকুরে পাঠাইলো। এইবার পুকুর থেকে বল আনার পালা। একে একে রাস্তার সব ইট পাথর পুকুরে ছুড়ে ছুড়ে বল পাওয়া গেলো ২০ মিনিট পর। সন্ধ্যা হয়ে যাইতেসে। সবার মাঝে ঢিলেমি। সবাই নড়ে কি চড়ে না। আযান দিয়ে দিলো। ইপু কয় আজকে আর খেলুম না। নিবিড়ও তাল মেলায়। ইতমাম তো আযানের সাথে সাথে বাড়ির দিকে দৌড়। ঠিক আছে কি আর করা? খেলা শেষ। সবাই যার যার মত বাসায় যায়।

রাতে কারেন্ট যাওয়ার সাথে সাথে ইপুর ফোন - মামা নামবি? গান-টান গামু, বিড়ি-বুড়ি খামু। আবার জিগায়। রাতুলকে ফোন দিলাম, নাম তারাতারি আর ইতমাম রে আর নিবিড় রে জানায়ে দে। একটু পর সবাই নামলো। ইপু বলে মামা ছোট্টনুনু (অতনু) আর গাধা (অনিক) - রে ফোন দে। অনিক কইলো আইতেসি। আর অতনু বুয়েট হল এ। একটু পর আসবে। এর মাঝে সাগর আর অনিকও একসাথে আসছে। ব্যাস গিটার আর বিড়ি কিনে রাতুলদের ছাদে। যাওয়ার সময় চাপার সাথে দেখা, খেলা শেষ করে আইছে। আইসাই নিশাতের বদনাম। আজকে নিশাত যা খেলছে ওরেই জিগাইস। আমি না থাকলে তো...ইপু কয় - ওই চাপা থাম। অন্তিকও তাগাদা দেয় তারাতারি চল ছাদে। সবাই ছাদে উঠলো - ততক্ষণে অতনুও আইসা পড়ছে। সবাই মিলে গান আর বিড়ির ফাঁকে ফাঁকে আড্ডা, এ ও কে পচাইতেসে। একটু পর কারেন্ট চলে আসে। রাতুল বলে উঠে - ধুর বেটা কারেন্ট টা আসার দরকার আছিলো? দরকার না থাকলেও কিছু করার নাই। যাইতে হবে। সবাই নিচে নামে। ইপু বলে মামা দেখতো জামায় বিড়ির গন্ধ আছে নাকি? রাতুল কয় নাই। ইতমাম আর নিবিড় ওইদিকে কইতাসে - ধুর মিয়া এতোক্ষন পরেও গন্ধ থাকে নাকি? তাও ইপুর চিন্তা যায় না। অন্তিককে বলে - মামা ১ টা হ্যাপিডেন্ট নে তো। তারপর সবাই সবার বাসায় চলে যায় ইপু হ্যাপিডেন্ট চুষতে চুষতে বাসায় ঢুকে, আমিও বাসায় চলে যাই।

এভাবেই পার হতো আমাদের একেকটা দিন। এমন কাহিনি হয়তো এ দেশের অধিকাংশ ছেলেরই আছে। হয়তো নাই। কে জানে? খুবই আহামরী কোন দিন না আবার একদম সাদা-মাটা দিনও না। কিন্তু এখন আমি প্রচন্ড বাজে ভাবে এই দিনগুলোকে মিস করি। সকল বন্ধুদের জন্য ভালোবাসা।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×