সেই বিনিদ্র রাতগুলোতে আধবোজা চোখে শবের মত পড়ে থাকি বিছানায়। নরম বিছানাটা আমাকে সে বেঞ্চটার কথা মনে করিয়ে দেয়।
একবার ইচ্ছে করে নিজেকে হারাতে বসেছিলাম। বিকেলের আলপনা আঁকা মূহুর্তগুলোকে উপেক্ষা করে, অধীর অপেক্ষার পর দেখা প্রিয় চোখের পাতার কাঁপনকে তাচ্ছিল্য করে, শক্ত করে ধরে রাখা কোন হাতের বাঁধনকে আলগোছে খুলে দিয়ে ইচ্ছে করেই ভুল করেছিলাম।
আত্মনিখোঁজের সে সময়ে এক হব বলে ছুটে গিয়েছিলাম সবুজাভ অরণ্য আর ফেনিল সাগরের কাছে। ওরা আমাকে আলিঙ্গনে বলেছিল ‘শুধুমাত্র আলিঙ্গনে এক হওয়া যায়’।
সূখের মুহুর্তগুলো খুবই ক্ষনস্থায়ী। শীতের রাতে গরম গরম চা ঠান্ডা হতে যেমন সময় লাগে ঠিক তেমন। কিংবা এই মাত্র সামনে দেখা পাখিটার ডানা দিগন্ত রেখায় বিলীন হওয়ার মতই তাৎক্ষণিক। তবুও সবাই অপেক্ষা করে। বছরের পর বছরের অপেক্ষার গল্প অবলীলায় চাপা পড়ে যায় কয়েক মুহুর্ত আয়ু পাওয়া সুখের কাছে।
সটান দাঁড়িয়ে এক পাহাড় আমাকে দেখে হেসেছিল খুব। ও ভেবেছিল পৃথিবীর টান শিথিল করে ওর শিরস্থান খুলে নেওয়া অসম্ভব। ওর অজ্ঞাতে ছিল এর চেয়ে শত সহস্রগুন তীব্র আকর্ষন এখন পরাজিতদের দলে। ওর অজ্ঞতা আমার মধ্যে রাগের বদলে সমবেদনার উদ্রেক ঘটিয়েছিল।
সে পাহাড়ের চুড়ায় কেউ বানিয়েছিল বেঞ্চটা। দুজনের একটা বেঞ্চ। অন্যপাশ খালি রেখে আমি দখল করেছিলাম একপাশটা। জানি সেখানে কেউ এসে বসবে। নিশ্চুপ মৌনতায় বসে বসে অসীম আকাশ দেখবে, তীর্যক চাহনিতে উপকূলের সাথে প্রেমে মত্ত সাগরের ঢেউ দেখে তার ভুল ভাঙবে। সে ভুল ভাঙার অবশেষে না বুঝেই অনেকখানি বুঝে নিবে সে।
দখিনা জানালা খুলে দেখেনি সে। দরজার চৌকাঠ মাড়ানোর সাহস হয়নি তার। তার জন্য প্রেরিত উষ্ণতার গল্প না শুনেই ফিরিয়ে দিয়েছে সে।
অনতিদূরের জল-কূলের প্রেম জলীয়বাষ্প হয়ে উড়ে আসে। উড়ে এসে ভিজিয়ে দেয় বেঞ্চ আর বেঞ্চের একমাত্র আশ্রয়ীকে। তীব্র ঝাপটার মধ্যেও আমি চোখ মেলে থাকি। চোখ মেলে দেখতে থাকি কেমন করে পৃথিবীর সব গানিতিক, জ্যামিতিক তত্ত্ব লুঠিয়ে পড়ছে বেঞ্চের তলায়। সব সূত্র, সব বিধি নির্দ্বিধায় স্বীকার করে চলেছে এ আকাশ অসীম, এ আকাশ বিশাল।
মহৎ কোন কিছুর কাছে, বিশাল কোন কিছুর কাছে ছোট হওয়ার মধ্যে তৃপ্তি আছে। এ কারনেই হয়ত স্রষ্টার প্রতি আনুগত্যে এত প্রশান্তি। সুখের অতিশয়্যে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসে। যে সৌন্দর্যে চোখ ঝলসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাকে চোখ বন্ধ করে উপভোগ করতে হয়। কেউ চায়না আনন্দের একটা মুহুর্তও খরচের খাতায় নাম লিখাক।
সহসা আমি বুঝতে পারি কেউ একজন এখানেই আছে। আমি বেলী ফুলের মিষ্টি একটা গন্ধ পাই। কেউ এক একজন চুলে বেলী ফুল গুঁজে দিতে ভালবাসে। আমি শব্দ পাই নূপুরের, কাঁচের চুড়ির। কেউ একজনের হাত ভর্তি থাকে কাঁচের চুড়িতে, পায়ে জড়িয়ে থাকে শৃঙ্খলহীন নূপুর।
চোখ বন্ধ থাক, শব্দরা নিকটবর্তী হয়, সুবাস তীব্র হয়। অনুভব করি কেউ একজন আলতো পায়ে এসে দাড়িয়েছে আমার পিছনটায়। সে আমার মাথায় হাত রাখে। একজন চোখবন্ধ মানুষের মাথায়। তার নরম আংগুল ঝিরঝির বাতাসের মত প্লাবন তুলে আমার চুলে আর আমি কাশফুলের মত দুলতে থাকি। সুহাসিনী প্রকৃতির নীরবতার ইতি টানে
-এত অভিমানী কেন তুমি? তুমি কি জাননা তোমাকে ছাড়া আমার কত কষ্ট হয়?
সুহাসিনী জানেনা যারা প্রচন্ড ভালবাসতে পারে তাদের অভিমান করার ক্ষমতাও বেশি।
I was spending my time in the doldrums
I was caught in the cauldron of hate
I felt persecuted & paralyzed
I thought that everything else would just wait
While u r wasting ur time on your enemies
Engulfed in a favor of spite
Beyond ur tunnel vision reality fades
Like shadows into the night.
***অনেক দিন পর ব্লগে লগ-ইন করলাম। বছর দেড়েক প্রায়। একটা সময় ব্লগিং নেশার মত ছিল। নেশা মানে পড়ার নেশা, লেখা হত কম। নস্টালজিক, রিয়েল ডেমোন, আরিশ ময়ুখ, মাহী ফ্লোরাদের (আরো অনেকের) লেখাগুলো অনেক মিস করি।
**লিরিকটি 'পিংক ফ্লয়েড' এর Lost for Words এর।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:০৫