এই সময়ে এটি এক বিরল অভিজ্ঞতা । আমার ছোট বেলায় গ্রামের বাড়িতে আব্বা ২৭ রমজান বেশ ঘটা করেই করতেন । ছাগল জবাই হতো , সব্জি , ডাল আর ভাত । আমি ঐ সময়টা শীতকাল পেয়েছি বলেই নতুন চালের ভাত রান্না হতো বিশাল ডেগে । কলাপাতা কেটে আনত আমাদের কিষাণরা । তারপর তা পুকুরে ভাল করে ধুয়ে রেখে দিত । কলাপাতা আসত পরিচিত কারো বাড়ি হতে এবং তিন চারশ লোকের আয়োজন হতো । সেই পাক আমলে তিনশ লোক চাট্টিখানি কথা নয় । আমাদের থানা সদরে সামান্য লোক ছিল । সরকারী অফিস আর থানার স্টাফ দিয়ে জনা পঞ্চাশ মানুষ হতো । পুরাতন বাড়ি থেকে আর পাশের গ্রামগুলো থেকে বাকি মানুষ আসত । প্রথমেই ইফতার বা রোজা খোলা যাকে বলে সেটি কয়েকটি কলাপাতা দিয়ে তার পর পিয়াজু , বেগুনি , ছোলা আর মুড়ি এবং চিড়া কলা মাখা দিয়ে রোজা খুলে আব্বার তৈরি মসজিদে মাগরিব আদায় হতো । ঘণ্টা খানেক পরে মুল খাওয়ার পালা । মাংস , ভাজি , ডাল দিয়ে রাতের খাবার বা ইফতারির দ্বিতীয় পর্ব । ডাল যাতে গড়িয়ে না পড়ে তার জন্য সবাই খুব কসরত করত । ঐ সময় মানে ৬০এর দশকে গ্রামে ডেকোরেটর ছিল না যাতে প্লেট ভাড়া করে আনা যায় । বিয়েবাড়িতেও কলাপাতার প্রচলন ছিল । সবাই খেয়ে দ্রুত রওনা দিত বাড়িতে যাওয়ার জন্য , সবাই পায়ে হেটে । এদের মধ্যে একজনের কাছে তিন ব্যাটারির টর্চ অতি অবশ্যই থাকত। বাইসাইকেল বা রিকশা একটা স্বপ্ন ছিল । সবশেষে কলাপাতা নিয়ে নদীতে ফেলে দিত । শুধু এসব উৎসবে নয় মিষ্টির দোকানে ছোট কলা পাতায় মিষ্টি আর সন্দেশ পাটের সুতলি দিয়ে বাঁধা হতো । শুধু রসগোল্লা মাটির মালসায় দিয়ে কলা পাতায় মুখ মুড়ে দিত , এটি শহরেও প্রচলিত ছিল । ক্রমশ জীবন জীবিকা পাল্টেছে এবং কলাগাছ রোয়া হ্রাস পেয়েছে বা কলা না কাটা পর্যন্ত পাতা দিতনা গেরস্থ । এখন মেলামাইন দখল করেছে কলা পাতার জায়গা । আমি পঞ্চান্ন বা তার বেশি বছর আগের কথা বলছি । অনেক দুরের আত্মীয় স্বজনরা আসতে পারতেন না দূর রাস্তা অতিক্রম করার ঝামেলায় ।
ছবি - সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৪