ইয়াজিদিঃ ইয়াজিদিরা বিশ্বাস করে আদম (আ) সন্তানের সাথে বেহেশতি হুরের বিবাহের পরিণতিতে তাদের সৃষ্টি হয় আর অন্যান্য সকল ধর্মের মানুষদের সৃষ্টি হয়েছে আদম আর বিবি হাওয়া থেকে। তাদের ধারণা আদম পবিত্র হলেও হাওয়া পবিত্র নন। কাজেই অন্যান্য ধর্মের লোকেদের মধ্যে ভালো মন্দ মিশে গেলেও ইয়াজিদিদের কোন মিশ্রণ না হওয়াতে তারা পবিত্রতম।
মেলেক তাউসের আখ্যান ইয়াজিদিদের ধর্মে রয়েছে বলে তাদের শয়তানের পূজারী বলা হয়। ইয়াজিদি ধর্মমতে মেলেক তাউস ময়ূর দেবতা নামের ফেরেশতা বিধাতার নূর থেকে সৃষ্টি হয়। পরে বিধাতা আরো ছয়জন ফেরেশতা সৃষ্টি করে মেলেক তাউসকে তাদের নেতা বানান।
মেলেক তাউস অত্যন্ত অনুগত ফেরেশতা ছিলেন। সদাপ্রভু আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করলেন। এরপরে ফেরেশতাদেরকে আদেশ দিলেন আদমকে সেজদাহ করতে। সবাই সেজদাহ করলেও মেলেক তাউস করলেন না।
মেলেক তাউস সদাপ্রভুর প্রিয়ভাজন ফেরেশতা, তিনি সদাপ্রভুর অংশ, তিনি কেন মানুষকে সিজদাহ করবেন? তাই আদমকে মেলেক তাউস সিজদাহ করলেন না দেখে সদাপ্রভু খুশি হলেন। মেলেক তাউসকে মানবজাতি আর সদাপ্রভুর মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে কাজ করবার আদেশ দিলেন।
ইয়াজিদি ধর্ম মতে পাপ বাসা বাধে মানুষের ভুলে। এর সাথে শয়তান বা ইবলিশের কোনো সংস্রব নেই। তাদের ধর্মে নরক নেই। ইয়াজিদিরা পুনর্জন্মে বিশ্বাসী।
জাগরোস পর্বতমালার এই প্রাচীন অধিবাসীদের মোট সংখ্যা পাঁচ থেকে বারো লক্ষের মধ্যে। ইয়াজিদি শব্দটা এসেছে প্রাচীন পারসিক ভাষা থেকে যার অর্থ ‘পবিত্র’। প্রাক-ইসলামিক যুগে কুর্দিরাও ইয়াজদানিজম এর অনুসারী ছিল তবে পরে তারা সুন্নি মুসলিম হয়ে যায়। কালক্রমে ইয়াজিদি ধর্মে জরথুস্ত্রবাদ, ইসলাম, খ্রিস্টান আর ইহুদি ধর্মের নানা তত্ত্বের সংমিশ্রণে ঘটে। ইয়াজিদিরা একাদশ শতাব্দীর শেখ আদি ইবন মুসাফিরকে তাদের অন্যতম নবী জ্ঞান করে। ‘কিতাব আল জিলওয়া’ আর ‘মেশেফা রেস’ তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ এই গ্রন্থগুলোতে অনেক কাওল বা কবিতা রয়েছে। লোকমুখে প্রচলিত কাওলগুলো একাদশ শতাব্দীতে সংগ্রহ করে গ্রন্থরূপ দেওয়া হয়।
হেমন্তকালে 'সেজনা সেমাইয়া' নামের উৎসবে ষাড় জবাই দিয়ে তারা আসন্ন শীত ও পরবর্তী আনন্দের দিনগুলোর জন্য প্রার্থনা করে। ডিসেম্বর মাসে তারা তিন দিন রোযা রাখে।
ইয়াজিদি ধর্মে সাপ খুব গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্র। ইয়াজিদিরা মাটিতে থুতু ফেলে না বা আগুনে সহজে পানি ঢালে না। কারণ তাদের ধর্মে বায়ু, আগুন, মাটি ও পানিকে পবিত্র বস্তু হিসেবে জ্ঞান করা হয়। সূর্যের দিকে মুখ করে তারা প্রার্থনা করে।
ওসমানীয় শাসকদের আমল থেকেই ইয়াজিদিদের ওপরে অত্যাচার নিপীড়ন চলছে। সাদ্দাম পরবর্তী ইরাকেও এরা বারবার গণহত্যা ও বোমা হামলার শিকার হয়েছে। আর আইএসের হাতে অন্তত পাঁচ হাজার ইয়াজিদির মৃত্যু হয়েছে এবং হাজার হাজার ইয়াজিদি মহিলা ও বালিকাদেরকে যৌনদাসী করা হয়েছিল। ইয়াজিদিদেরকে হত্যা করবার সময় আইএস বলত যে, শয়তানের পূজারিদের বাঁচার অধিকার নাই। অনেক আরব আর কুর্দিরাও ইয়াজিদিদেরকে শয়তানের পূজারী হিসাবে দেখে।
সৌজন্যেঃAshfaqul Jalil /সিনিয়র সিটিজেন ফোরাম
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৫৮