
শচিন কর্তা বা শচিন দেব বর্মণের কথা জানেনা এমন বাঙ্গালী পাওয়া দুস্কর । আমি তার সুরের ধারায় তাকে আবিস্কার করেছি । জিজ্ঞাসা করেছি কে ইনি ? শচিন দেব বর্মণ । এরপর আজতক আঁকড়ে ধরে রেখেছি কর্তাকে । প্রতিটি সৃজনশীল বিষয়ের পেছনে একজন মানুষ থাকে । তেমনি শচিন কর্তার পেছনে জীবনসঙ্গী মীরা ছিলেন উজ্জ্বল তারার মত । অজানা একজন মৃণাল কান্তি দাস সেইরকম তাগিদে লিখেছেন মীরাকে নিয়ে ।
আপনি কি মীরা দেববর্মনকে চিনেন? মীরা একটা তারার নাম। মেঘে ঢাকা তারা । ভাগ্যাহত এই নারী নিজের সমগ্র জীবন, সমস্থ মেধা, সকল আলোক কেবলই বিলিয়ে দিয়ে অন্যকে করেছেন উজ্বল থেকে উজ্বলতর। প্রতিভাবান এই নারী প্রথমে তার স্বামীকে এবং পরবর্তিকালে সন্তানকে উজ্বল করতে গিয়ে নিজের সমস্ত সমৃদ্ধি ও স্বীকৃতিকে অমূল্য বিলিয়ে দিয়েছেন।
*তোরা কে যাস্ রে, ভাটি গাঙ বাইয়া
* বর্ণে, গন্ধে, ছন্দে, গীতিতে হৃদয়ে দিয়েছ দোলা
* শোনো গো দখিন হাওয়া, প্রেম করেছি আমি
*তাক্ দুম তাক্ দুম বাজাই বাংলা দেশের ঢোল
* নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক, পায়েলখানি বাজে
* ও বাঁশি ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা পান খাইয়া যাও
* না আমারে শশী চেয়ো না
* বিরহ বড় ভালো লাগে
* রাতের আতরে ভিজাইয়া আদরে
* সুবল রে বল বল
এইসকল কালজয়ী গানের লেখক মীরা দেববর্মন। কিন্তু জগৎ এইসব গানকে শচীন কর্তার গান বলেই জানে এবং মানে।
মীরা দেববর্মণ যে শুধু তাঁর স্বামী শচীন দেববর্মণের গানের নোটেশন সংরক্ষনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন তাই নয়। স্বামী ও পুত্রের চরম উৎকর্ষে পৌঁছে দেয়ার মাপকাঠি নির্দ্দিষ্ট করেছিলেন তিনি এবং অবশ্যই নিজেকে প্রচারের আলোয় না নিয়ে এসে । থেকেছেন আড়ালে । অসামান্য সংগীতের বোধ ও শিক্ষা তাঁর ছিলো । তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার, সংগীতশিল্পী ও নৃত্যশিল্পী। প্রতিভা নিয়ে জন্মেছিলেন, সেই সঙ্গে যুগের তুলনায় সঠিকভাবে তালিমও পেয়েছিলেন।
কেবলমাত্র শচীন দেববর্মণের স্ত্রী বা রাহুল দেববর্মণের মা ছিলেন কি তিনি? শাস্ত্রীয় সংগীতের তুখোড় জ্ঞান সম্পন্ন গায়িকা, নৃত্যশিল্পী, রবীন্দ্রসংগীতেও সমান দক্ষতা, গানের কথাকার হিসেবে আধুনিক মনষ্কতা,শব্দের ব্যবহার, মাটির কাছাকাছি থাকার প্রবনতা আর চমক দেয়ার মত সুরের বিভা ছিল তাঁর ।
আমরা শচীন দেববর্মণের যে গানগুলোর সুরের আবেশে মাতাল হই ও নিয়ত গুনগুন করি সেগুলোর অনেক সুর ই মীরা দেববর্মণের সহায়তায় তৈরি হয়েছে।
মেধাবী এই শব্দসম্রাজ্ঞীকে জগৎ কোনো সম্মাননা, কোনো পুরস্কার প্রদান করেন নি। শেষ বয়সে সীমাহীন একাকীত্ব আর ব্যাধি তাকে প্রচণ্ড পীড়া দিতে থাকে। স্বামী ও সন্তানের মৃত্যুর পর পুত্রবধু, ভারতবর্ষের খ্যাতিমান শিল্পী আশা ভোঁসলে-ই ছিলেন তাঁর একমাত্র আশ্রয়। কিন্তু শেষ সময়ে এসে আশাও হাল ছেড়ে দেন। তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসেন।
যার গান ছিলো গণমানুষের গভীর ভালোবাসার প্রকাশ, বেদনার আশ্রয়, ভাবের উৎস সেই মীরা দেবী ২০০৭ সালে এই অকৃতজ্ঞ সুর-সংগীতজগতকে ছেড়ে দূর কোনো জগতে হারিয়ে যান।
আজ প্রশ্ন জাগে, কেনো এই মেধাবী মানুষটি তার সৃষ্টিকর্মের কোনো মূল্যায়নই পেলেন না? কেনো কালের গভীরে তলিয়ে গেলো তাঁর নামটি? কেনো মেঘে ঢেকে গেলো এই তারাটি?
#মীরা_একটা_তারার_নাম
মৃণাল কান্তি দাস
----------------------------------------
লেখা ও ছবি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



