
আমরা অনেক বিষয় জানি না বা তা উচ্চারিত হয়না বিবিধ কারনে । জিন্নাহর পরিবার যে মৎস্য ব্যাবসা থেকে এসেছে এটা জানতাম তবে তারা ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন এটা জানতাম না । মাছের ব্যাবসা থেকে কাপড়ের ব্যাবসায় নেমেছিলেন তারা । এই লেখাটি Bakul Rani Biswas এর পেজ থেকে নেওয়া । আমরা জিন্নাহর পিছনে ২৩ বছর দৌড়েছি অতঃপর দিক বদল ।
এরকম ঐতিহাসিক লেখা পেলে ছাপিয়ে দেব , বিরক্ত হবেন না ।
---------------------------------------------------------------------------------
ভারতের গুজরাট রাজ্যের পানেলি মতি গ্রামে মেঘজিভাই ঠাকুর নামে এক ব্রাক্ষণ মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। সমুদ্রপাড়ের শহর। মাছের ব্যবসাপাতি ভালোই চলছিলো। রুজি রোজগার বেশ।
এসব দেখে হঠাৎ বাধ সাধলো লোকাল পুরোহিতরা। ব্রাহ্মণ কিভাবে মাছের ব্যবসা করে ! এজন্য অনেকটা হুট করেই মাছ ব্যবসা আর আমিষ গ্রহণের অজুহাতে সপরিবারে সেই ব্রাহ্মণকে তারা সমাজচ্যুত করেন সমাজপতিরা। ধোপা-নাপিত বন্ধ। পূজা আর্চণা-সামাজিক নিমন্ত্রণ বন্ধ।
এভবে চলতে থাকলে একসময় সেই ব্রাক্ষণ মাছের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে আবার তার বর্ণে ফিরে আসার চেষ্টা করলেন, তবুও বাকিরা তাকে অচ্ছুৎ করে একঘরে ফেলে রেখে দিলো।
ফলস্বরূপ, সেই ব্রাহ্মণের পুত্র পুঞ্জলাল ঠাকুর এইসব অবমাননায় এতটাই ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি নিজে সহ তাঁর চার ছেলেকে নিয়ে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং বোম্বেতে স্থায়ীভাবে চলে আসেন।
এই পুঞ্জলাল ঠাকুরের মেজো ছেলের সাথে আমরা পরিচিত। তিনি কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
তবে এই লেখাটা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে নিয়ে না। জিন্নাহর একমাত্র উত্তরাধিকার, তার মেয়ে দিনা জিন্নাহকে নিয়ে।
জিন্নাহ নিজে বিয়ে করেছিলেন এক পার্সী রমনী রতনবাঈকে। তাদের একমাত্র কন্যা দিনার জন্ম ১৯১৯ সালের ১৫ই আগস্ট। ঠিক ভারত-পাকিস্তানের ভাগের দিন এবং গণিতের হিসেবে দেশভাগের আটাশ বছর আাগে।
১৯৩৮ সালে এক পার্সি যুবকের প্রেমে পড়েন উনিশ বছর বয়সী দিনা। নিজে অমুসলিম বিয়ে করলেও একমাত্র মেয়ে এক অমুসলিমকে বিয়ে করবে এইটা কখনোই মেনে নিতে পারেননি কায়েদে আজম।
পাকিস্তানের সর্বেসর্বা হতে চলছেন তিনি, ক্ষমতার মোহে বিভোর সবকিছু। তবে মেয়ে ছিলেন অনড়। বাবার নিষেধ সত্ত্বেও তিনি পার্সী- বংশোদ্ভূত ভারতীয় নেভিল ওয়াদিয়াকে বিয়ে করেন।
১৯৪৩ সালে তার স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বোম্বেতে নিজের পিতামহের বানানো পৈত্রিক নিবাসে বসবাস শুরু করেন।
এরপর কালে কালে দেশ ভাগ হয়। এপারের মানুষ ওপারে যায়, ওপারের মানুষ এপারে। জিন্নাহ তখন পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল। প্রবল পরাক্রমশালী ব্যক্তি। মেয়েকে বললেন তার কাছে চলে আসতে করাচিতে। তখন মেয়ে বাবাকে প্রশ্ন করেন- "আমার মায়ের কি হবে ? তুমি কি মায়ের কবর বোম্বে থেকে পাকিস্তানে নিয়ে যেতে পারবে?"। স্পষ্ট জানিয়ে দেন বাবাকে যে ভারতেই থাকছেন তিনি। আমৃত্যু বলে গিয়েছেন- Bombay is my city.
হ্যা দিনা গিয়েছিলেন পাকিস্তানে একবার। ১৯৪৮ সালে। পিতার শেষ্যকৃতি অনুষ্ঠানে। এরপর আর যান নি। ব্যবসাপাতিতে মন দেন। শক্ত হাতে হাল ধরেন।
আজও ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী নাসলি ওয়াদিয়া। দিনা জিন্নাহর ছেলে, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নাতি। নাসলি ওয়াদিয়ার দুই সন্তান- জাহাঙ্গীর এবং নেস। বর্তমানে আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের অন্যতম মালিক নেস ওয়াদিয়া।
ভাগ্যের এক নির্মম পরিহাস- লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান আদায় করে নেওয়া জিন্নাহর সব উত্তরাধিকারই ভারতীয় নাগরিক, পাকিস্তানে কেউ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



