যেভাবেই হোক মোঙ্গলদের বিস্তারিত ইতিহাস জানা হয়নি হয়নি ম্যাপ দেখার । আজ ফেসবুকে এসব পেয়ে কপি করলাম এবং অন্যান্য ব্লগারদের জন্য ছেপে দিলাম । মুল পোস্ট শেখ শাহরিয়ার কামাল ভুইয়া , ইতিহাসের পাঠশালা থেকে আহরিত ।

মোঙ্গল সম্রাজ্য, পৃথিবীর ইতিহাসে স্থলভুমিতে সবচেয়ে বড় সম্রাজ্য নাম। চেঙ্গিস খানের প্রতিষ্ঠিত এ সম্রাজ্য আয়তন ছিলো ২,৪০,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার[১৩০৯সালের হিসাব অনুসারে]। মোঙ্গলরা হাতে ৪০মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করেছিলো। চেঙ্গিস খান ১২২৭সালে মারা যান। মৃত্যুর পর তার ইচ্ছানুসারে সম্রাজ্যকে চার ভাগে বিভক্ত করে তার চার ছেলেকে দেওয়া হয়। এরা সবাই চেঙ্গিস খানের প্রথম স্ত্রী বর্তির সন্তান ছিলেন। পরবর্তীতে চারটি অংশ স্বতন্ত্র খানাত রাজ্যে রুপান্তর হয়। তিনটি অংশ ইসলামের ছায়াতলে আসে। এসব খানাতের উত্থান পতন নিয়ে কিছু কথাঃ
গোল্ডেন হোর্ডঃ চেঙ্গিস খানের বড় ছেলে ও সবচেয়ে সুযোগ্য সন্তান জোচি বংশধরা এখানাত শাসন করতো। চেঙ্গিস বেঁচে থাকা অবস্থায় জোচিকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। ইউরোপে বিস্তীর্ণ এলাকা এরা শাসন করতো। বর্তমান রাশিয়া, পোল্যান্ড, ইউক্রেন,বুলগেরিয়া বেশির ভাগ এদের দখলে ছিলো। ১২৫৪সালে বারকি খান মোঙ্গল খানদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাবে ইসলামের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। ১২৫৮সালে চেঙ্গিস খানের আরেক নাতি হালাকুর হাতে বাগদাদের করুণ পরিণতি ঘটে। ঘটনার ছয়মাস পর বারকি ব্যাপারটা জানতে পারেন। তিনি ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তিনি হুমকি দিয়ে হালাকুকে চিঠি লিখেন। ১২৫৯সালে হালাকুর শক্তি উৎস তার ভাই ও খাগান মোঙ্কে খান মারা যায়।[মোঙ্গল সম্রাটকে খাগান বলা হতো] তার স্থানে বসেন হালাকুর আরেক ভাই কুবলাই খান। কিন্তু এতে ব্যাপক গৃহবিবাদ আরম্ব হয়। তাদের ছোট ভাই আরিক বোকে নিজেকে খাগান হিসাবে ঘোষণা দেয়।এ বিরোধে বারকি আরিক বোকেকে সমার্থন করেন। আইনে জালুতের পরাজয়ে প্রতিশোধ নিতে প্রায় দুই লক্ষাধিক সেনা নিয়ে হালাকু মধ্যপ্রাচ্যে ফিরে আসে। খবরটা শুনে সুলতান বাইবার্স বারকির কাছে সাহায্য চান।বারকি সাহায্যে এগিয়ে আসেন। ফলশ্রুতিতে ১২৬২ সালে হালাকু-বারকির মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। তিনি হালাকুর বাহিনীকে কচুকাটা করেন। যুদ্ধে হালাকু প্রায় লক্ষাধিক সৈন্য হারায়। তার শক্তি কমে যায়। মধ্যেপ্রাচ্য তার জয়যাত্রা এখানে সমাপ্তি হয়। গোল্ডেন হোর্ড দীর্ঘদিন মামলুকদের মিত্র হিসাবে কাজ করেছিলো।অনেকদিন ইলখানাতের সাথে তারা একটানা যুদ্ধে করেছে ।তাদের কারণে ইলখানাত আরব ভূখন্ড আর অাগ্রাসন চালাতে পারে নি। হোর্ডের পতন হয় তৈমুর লং হাতে। দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধের বিবাদে দুর্বল হয়ে পড়ে গোল্ডেন হোর্ড৷১৩৮১সালে শাহজাদা তুর্কতুমিশ তৈমুরের সহায়তা ক্ষমতায় আসীন হন।পরে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে তাদের পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ শুরু হয়। ১৩৯৫সালে তৈমুরে হাতে গোর্ড ধ্বংস হয়ে যায়। বেঁচে থাকা গোল্ডেন হোর্ডের বংশধররা ছোট ছোট খানাত শাসন করতো। ১৫০২সালে ওসমানীয় সমার্থিত ক্রিমিয়ান খানাতের হাতে পুরাপুরি হারিয়ে হারিয়ে যায় গোল্ডেন হোর্ড।
ইলখানাতঃ ইলখানাত চেঙ্গিসের ছোট ছেলে তলুইয়ের ভাগের অংশ। ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, জর্জিয়া, তুরস্ক ও পাকিস্তানের কিছু অঞ্চল তার অধীনে ছিল।তুলুইয়ের ছেলে ছিলেন হালাকু খান। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছিলেন।১২৬২সালে গৃহযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে তার শক্তি কমতে থাকে৷যুদ্ধের পর তিনি কিংবা উত্তরসুরীরা মধ্যপ্রাচ্য কখনোও আধিপত্য বিস্তার করতে পারে নি। ১২৯৫সালে ইলখানাতের খান মাহমুদ গাজান ইসলাম গ্রহণ করেন। তবে সুন্নী মামলুকদের বিপরীতে শিয়া মতবাদ তিনি গ্রহণ করেন।ইলখানাতের সবচেয়ে বিখ্যাত শাসক ছিলেন মাহমুদ গাজান। তিনি বেশ কয়েকবার মামলুকদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযান চালিয়েছেন।তবে সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লায় ভারী। তিনি মামলুকদের হটাতে ফ্রান্সের সাথে মিত্রতা করেন।সুন্নী চাগতাই খানাতের সাথেও বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছেন। ইলখানাতের পতন ঘটে ১৩৩৫সালে। তবে মানুষের হাতে নয়, মহামারী প্লেগের কারণে। প্লেগে ইলখানাতের শাসক আবু সাইদ মারা যান। পুরো খানাত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। যোগ্য কোনো শাসক না থাকায় স্থানীয় আমীররা স্বাধীন ভাবে নিজেদের অংশ শাসন করতে থাকে।১৩৫৩সালের মধ্যে ইলখানাত পুরাপুরি হারিয়ে যায়।
চাগতাই খানাতঃচেঙ্গিস খানের দ্বিতীয় ছেলে চাগতাইকে মধ্য এশিয়াভিত্তিক খানাতের দায়িত্ব দেওয়া হয়।কিরগিজিস্তান চীন উজবেকিস্তান তাজিকিস্তান কাজাখস্তান আফগানিস্তান, পাকিস্তান তুর্কমেনিস্তান, মঙ্গোলিয়া ভারতের অংশবিশেষ নিয়ে এ খানাত ছিলো। ১২৪২সালে চাগতাই মারা যাওয়ার পর খানাত স্বাধীনতা হারায়।শাসনকার্যে খাগানদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।খাগান তার ইচ্ছামতো শাসন করতে পারতো।১২৬৬সালে চাগতাই খান গিয়াসউদ্দিন বারাক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।এরপর থেকে দীর্ঘদিন নিজেদের স্বাতন্ত্র্যতা বজায় রেখেছিলো তারা। তারা কুবলাই-কাইদু যুদ্ধে কাইদুকে সমর্থন করেছিলো। চাগতাই খানাত বেশ কয়েকবার ভারতবর্ষে অভিযান চালায়। পরবর্তীতের ১৩৪০সালে ধর্মের কারণে খানাতে বিভক্তি দেখা যায়। মুসলিম অংশটি ১৩৭০ সালে তৈমুরের হাতে ধ্বংস হয়ে যায়। আমির হোসাইন ছিলেন শেষ শাসক। অন্য অংশটি ১৬৭৮সালে ধ্বংস হয়ে যায়।
ওগতাই খানাতঃ চেঙ্গিস খানের তৃতীয় পুত্র ওগেদাই খানের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুর্ব এশিয়া তথা চীনভিত্তিক মোঘল অধীকৃত অংশ। চেঙ্গিস খানের পরে ওগদাই খান মোঙ্গলদের খাগান হন।তার মৃত্যুর তার ছেলে গুয়ুক খান খাগান হন। গুয়ুক মারা গেলে সাময়িক খাগান হন স্ত্রী কাইমিশ। ১২৫১ সালে মঙ্কে খান মোঙ্গলদের নতুন খাগান হিসাবে নির্বাচিত হয় নেন। এরমধ্য দিয়ে খাগান পদবী ওগদাই পরিবার থেকে তলুইয়ের পরিবারে চলে যায়।একটা সময় ওগদাই পরিবার খানাতের একটা বিশাল অংশ হারিয়ে ফেলে।পুর্ব এশিয়ার বিশাল অংশ তুলুইয়ের ছেলে খাগান কুবলাই খান দখল করে। এবংশের সেরা খান ছিলেন কাইদু খান।তিনি প্রথম গৃহ যুদ্ধে আরিক বোকের পক্ষে ছিলেন। ১২৭০সালে কুবলাই-কাইদু ৩০বছর মেয়াদি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।১৩০২সালে কাইদু মারা যায়। তার সাথে ইতি ঘটে ওগদাই খানাতের। কাইদুর বংশধররা ছোট ছোট খানাত শাসন করতো।
ইউহান সম্রাজ্যঃতুলুইয়ের ছেলে কুবলাই তার ভাই মঙ্কে মারা গেলে ১২৬০সালে খাগান হন। তার আরেক ভাই আরিক বোকের সাথে তার খাগান পদ নিয়ে ১২৬২-১২৬৬ সাল পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। কুবলাই যুদ্ধ জয়ী হয়ে খাগান পদে আসীন হয়।১২৭১সালে ইউয়ান সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে নিজেকে চীনা সম্রাট হিসাবে ঘোষণা দেন। নিজেদের পুরোনো রাজ্য উদ্ধারের জন্য কাইদু তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দেয়। যুদ্ধে গোল্ডেন হোর্ড,চাগতাইরা কাইদুর পক্ষে আর ইলখানাত কুবলাইয়ের পক্ষে ছিলো।৩০বছর মেয়াদি এ যুদ্ধে সমাপ্তির আগে কুবলাই ১২৯৪সালে মারা যায়। কাইদুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। কুবলাইয়ের পরে খাগান পদবী নামেমাত্র পদবীতে পরিণতি হয়। গৃহযুদ্ধের প্রভাবে মোঙ্গলদের অন্য খানাত গুলো নিজেদের সম্পুর্ন স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা দেয়। কুবলাইয়ের বংশধর এ পদবী ব্যবহার করতো।
১৩৬৮সালে মিং সম্রাজ্যের হাতে এ সম্রাজ্যের পতন হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ৯:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



