
করোনা কালে অনলাইন খাবারের বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়িতে চুই ঝালের ব্যাপারটা উঠে আসে । প্রথমেই চুই এর বৃত্তান্ত বর্ণনা করি । চুইঝালের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম piper chaba এবং এটি পিপারেসি পরিবারের। পান ও চুইঝাল একই পরিবারের সহোদর। চুইঝাল সাধারণত ২ ধরনের—ঝাড় চুই এবং গেছো চুই।
চুইয়ের কাটিং যেকোনো হালকা উঁচু জায়গায় বা গাছের গোড়ায় রোপণ করা যায়। উঁচু জায়গায় চুইঝাল গাছ ভালো হয়, গোড়ায় পানি জমলে গাছ পচে যায়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ও আশ্বিন-কার্তিকে চুইঝালের লতা লাগানোর উপযুক্ত সময়। একটি চুই গাছের পুরো অংশ স্বাভাবিকভাবে এক থেকে দেড় মণ পর্যন্ত হতে পারে।চুই গাছে ফুল-ফল উভয়ই হয়। চুইয়ের পুরুষ-স্ত্রী ফুল আলাদা লতায় জন্মে। পরাগায়ন প্রাকৃতিকভাবেই সম্পন্ন হয়। ফুল লাল, লম্বাটে। দূর থেকে দেখতে অনেকটা মরিচের মতো। কাছে গেলে ফলের প্রাকৃতিক নান্দনিক কারুকার্য ধরা পড়ে। বীজ থেকে চারাও হয়। শুধুমাত্র চুইয়ের চারা বিক্রি করে খুলনার অন্তত ১০ কৃষক লাখপতি হয়েছেন। খুলনার পাশাপাশি যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাতে এর ব্যাপক চাষ দেখা যায়।
বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি চুই মানভেদে ৪০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ঈদের বাজারে এই দাম ২ হাজার টাকাও ছাড়িয়ে যায়।
মাটির নিচের অংশ শিকড় চুইয়ের দাম সবচেয়ে বেশি। এরপর কাণ্ড, ডাল এসবও ভালো দামে বিক্রি হয়।
ছোটবেলায় চুইঝাল বেশ চলত আমাদের বাড়িতে । গরু খাসি মায় কি বুড়ো মুরগিতেও চুইএর ডাল দেয়া হতো । মুখে মাদকতায় মেশানো একটা ঝাল ভাব অনুভুত হতো । ৫/৬ মিনিট পরে ঝাল ভাবটা উধাও হতো । গরুর বা খাসির মাংসে চুই নেই এটা ভাবাটাও অন্যায় ছিল । আমি ৭০ দশকের শেষ দিকে চুই পছন্দ করেন এমন লোকেদের জন্য খুলনা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসতাম ।
শুক্রবার অনেকদিন বাদে সিরাজের চুই গোস্ত খেলাম বাপ বেটি মিলে। স্বাদ অসাধারন তবে মাংস বুড়ো গরুর ছিল বলে ওখানে মজতে পারিনি । চুই দিয়ে রান্না করে দেখতে পারেন কেমন এই চুই ঝাল ।
খুলনা বিভাগের ৪ জেলায়, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইলে মোট ১১০ হেক্টর জমিতে চুইয়ের চাষ হচ্ছে। এর মোট উৎপাদন প্রায় ১৯০ মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে মোট ৩ হাজার ৫৭০ জন কৃষক এসব জেলাতে চুই চাষের সঙ্গে যুক্ত।
ছবি তুলতে মনেই ছিল না তাই স্টার থেকে ছেপে দিলাম ।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



