somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রবীন্দ্রনাথের শেষ কটা দিন কেমন কেটেছিল?

১১ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১৯৪১ সালে জীবনের শেষ দিনগুলোয় অসুখে ভুগছিলেন কবি। সারা জীবন চিকিৎসকের কাঁচি থেকে নিজেকে বাঁচিয়েছেন, এবার বুঝি আর তা সম্ভব নয়। হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি চলছেই। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
শান্তিনিকেতনে ছিলেন তখন। এরই মধ্যে অবনীন্দ্রনাথ বেশ কিছু গল্প লিখেছেন। সেগুলো পড়ে দারুণ আনন্দ পেলেন কবি। বললেন, আরও লিখতে। অবন ঠাকুর রানী চন্দকে গল্প বলে যান, রানী চন্দ সে গল্প শুনে লিখে ফেলেন। তারই কিছু আবার দেওয়া হলো রবীন্দ্রনাথকে। তিনি পড়লেন, হাসলেন এবং কাঁদলেন। রানী চন্দ এই প্রথম এমন করে রবিঠাকুরের চোখ থেকে জল পড়তে দেখলেন।
রানী চন্দ ছিলেন রবীন্দ্রনাথের প্রিয়ভাজন, শান্তিনিকেতনের শিক্ষার্থী ও চিত্রশিল্পী এবং রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত সচিব অনিল চন্দের স্ত্রী। চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের কথাই বললেন। রবীন্দ্রনাথের তাতে মত নেই। তিনি বললেন, ‘মানুষকে তো মরতেই হবে একদিন। একভাবে না একভাবে এই শরীরের শেষ হতে হবে তো, তা এমনি করেই হোক না শেষ। মিথ্যে এটাকে কাটাকুটি ছেঁড়াছেঁড়ি করার কি প্রয়োজন?’
কিন্তু যে যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন তিনি, তার উপশমের জন্য দেহে অস্ত্রোপচার করতেই হবে—এই হলো চিকিৎসকদের মত। আর সেটা করতে হলে শান্তিনিকেতনকে বিদায় জানিয়ে চলে আসতে হবে কলকাতায়। তাই শেষবারের মতো শান্তিনিকেতন ছাড়লেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ২৫শে জুলাই বেলা তিনটা ১৫ মিনিটে রবীন্দ্রনাথ এলেন জোড়াসাঁকোর বাড়িতে।
খবরটা গোপন রাখায় স্টেশনে কিংবা বাড়িতে ভিড় ছিল না। পুরোনো বাড়ির দোতলায় ‘পাথরের ঘর’-এ তিনি উঠলেন। স্ট্রেচারে করে দোতলায় নিতে হলো তাঁকে। ২৬শে জুলাই রবিঠাকুর ছিলেন প্রফুল্ল। ৮০ বছরের খুড়ো রবীন্দ্রনাথ আর ৭০ বছর বয়সী ভাইপো অবনীন্দ্রনাথ অতীত দিনের নানা কথা স্মরণ করলেন। হাসলেন প্রাণখুলে। ২৭শে জুলাই সকালে রবীন্দ্রনাথ মুখে মুখে বললেন একটি কবিতা, টুকে নিলেন রানী চন্দ।
কবিতাটির প্রথম কয়েকটি পঙক্তি হলো: ‘প্রথম দিনের সূর্য প্রশ্ন করেছিল সত্ত্বার নতুন আবির্ভাবে, কে তুমি, মেলে নি উত্তর।’ ৩০শে জুলাই ঠিক হয়েছিল তাঁর দেহে অস্ত্রোপচার হবে। কিন্তু সেটা তাঁকে জানতে দেওয়া হয়নি। তিনি ছেলে রথীন্দ্রনাথকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কবে অপারেশন হবে’। রথীন্দ্রনাথ বললেন, ‘কাল-পরশু’। আবার রানী চন্দকে ডাকলেন কবি, লিখতে বললেন: ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি/ বিচিত্র ছলনাজালে/ হে ছলনাময়ী।’ ডা. ললিত এলেন একটু পরে। বললেন, ‘আজকের দিনটা ভালো আছে। আজই সেরে ফেলি, কী বলেন?’ হকচকিয়ে গেলেন কবি। বললেন, ‘আজই!’ তারপর বললেন, ‘তা ভালো। এ রকম হঠাৎ হয়ে যাওয়াই ভালো।’
বেলা ১১টায় স্ট্রেচারে করে অপারেশন-টেবিলে আনা হলো কবিকে। লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে অপারেশন করা হচ্ছে। ১১টা ২০ মিনিটের দিকে শেষ হলো অস্ত্রোপচার। ভারী আবহাওয়া উড়িয়ে দেওয়ার জন্য কবি রসিকতা করলেন, ‘খুব মজা, না?’
শরীরে যথেষ্ট যন্ত্রণা হয়েছিল অপারেশনের সময়। কিন্তু তা বুঝতে দেননি কবি। সেদিন ঘুমালেন। পরদিন ৩১শে
জুলাই যন্ত্রণা বাড়ল। গায়ের তাপ বাড়ছে। নিঃসাড় হয়ে আছেন। ১লা আগস্ট কথা বলছেন না কবি। অল্প অল্প জল আর ফলের রস খাওয়ানো হচ্ছে তাঁকে। চিকিৎসকেরা শঙ্কিত। ২রা আগস্ট কিছু খেতে চাইলেন না, কিন্তু বললেন, ‘আহ! আমাকে জ্বালাসনে তোরা।’ তাতেই সবাই খুশী। ৩রা আগস্টও শরীরের কোনও উন্নতি নেই। ৪ঠা আগস্ট সকালে চার আউন্সের মতো কফি খেলেন। জ্বর বাড়ল।
৫ই আগস্ট ডা. নীলরতন সরকার বিধান রায়কে নিয়ে এলেন। রাতে স্যালাইন দেওয়া হলো কবিকে। অক্সিজেন আনিয়ে রাখা হলো। ৬ই আগস্ট বাড়িতে উৎসুক মানুষের ভিড়। হেঁচকি উঠছিল কবির। পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী ডাকছিলেন, ‘বাবা মশায়!’ একটু সাড়া দিলেন কবি। রাত ১২টার দিকে আরও অবনতি হলো কবির শরীরের।
৭ই আগস্ট ছিল ২২ শ্রাবণ। কবিকে সকাল নয়টার দিকে অক্সিজেন দেওয়া হলো। নিশ্বাস ধীরে ধীরে ক্ষীণ হতে থাকল কবির। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে তা একেবারে থেমে গেল।

সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:১২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×