somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিমানী ভালবাসা

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


- এই ওঠো, শুনছো? ওঠোতো।
- কী হইছে? এত রাতে ডাকাডাকি
করতেছো
কেন? একটু ঘুমাইতেও দিবা না?
- আমার না একটুও ঘুম আসতেছে না।
আমাকে
একটু ঘুম পারাই দেও।
- শশী এতো ন্যাকামো কিন্তু ভাল
লাগে
না। আজ অফিসে প্রচুর কাজ ছিল
শরীরটা
অনেক ক্লান্ত
আমাকে একটু ঘুমাতে দেও।
- আমাকে ঘুম পারিয়ে তারপর ঘুমাও।
- দেখো এত কিছু শুনতে ইচ্ছে করছেনা
আমায়। পারলে ঘুমাও না পারলে নাই।
- হ্যাঁ হ্যাঁ আমি একাই ঘুমাবো।
তোমাকে
ঘুম পারিয়ে দিতে হবে না। বিয়ের
আগেতো খুব বলতে, আমাকে তোমার
বুকের
উপরে রেখে গল্প করতে করতে ঘুম
পারিয়ে
দিবে। এখন কই গেছে তোমার সেই
ভালবাসা? এখনতো বিয়ে হয়ে গেছে
আমি
পুরান হয়ে গেছি আমাকে এখন আর ভাল
লাগে না তাই না?
কথাগুলো বলার পর শশী কাঁদতে
কাঁদতে রুম
থেকে বের হয়ে গেল। শশী রুম থেকে
যাওয়ার পর শুভ্র শোয়া থেকে উঠে
বসলো।
.
শশী আর শুভ্রের ভালবাসা অন্য সবার
ভালবাসার মত না। ভালবাসার শুরুতেই
ওরা
প্রতিদিন ঝগড়া করতো। অনেক মান
অভিমানের পরে যখন ঝগড়া শেষ হতো।
শুভ্র
তখন বলতো, আচ্ছা আমার সাথে ঝগড়া
করতে কী তোমার খুব ভালো লাগে?
শুভ্রের
কথা শুনে শশী মুচকি একটা হাসি
দিয়ে
বলতো হ্যাঁ গো, তোমার সাথে ঝগড়া
করতে
আমার খুব ভাল লাগে। এই জন্যই দুই
মিনিট
পর পর তোমার সাথে ঝগড়া করি। শশীর
উত্তর শুনে শুভ্র অভিমানে গাল ফুলিয়ে
বলতো, তুমি ঝগড়া করার সময় যখন
আমাকে
ছেড়ে চলে যেতে চাও তখন আমার
অনেক
কষ্ট হয় তুমি বুঝো না? শুধু শুধু অকারণে
আমাকে কষ্ট দেও। শশী উচ্চস্বরে
হাসতে
হাসতে বলতো। সবাই যদি তোমাকে
ভালবাসে তাহলে কষ্ট দিবে কে?
বিয়ের
পরে যখন আমি তোমার সাথে এভাবে
ঝগড়া
করে চলে যেতে চাইবো। তখন তুমি কষ্ট
পেয়ে প্রায় কেঁদে দিবে দিবে ভাব
হবে,
তোমার চোখ দুইটা লাল হয়ে যাবে।
তখন
আমি ফিক করে হেসে দিয়ে তোমার
বুকে
ঝাপিয়ে পড়ে, তোমাকে একটা
পাপ্পি
দিব। তখন আমার হাসি দেখে তুমি সব
কষ্ট
ভুলে যাবে। তখন আমার যে কী মজা
লাগবে
হিহিহি। শশীর পাগলামী দেখে শুভ্র
অভিমান ভুলে গিয়ে হেসে দিতো।
.
রাগ অভিমান আর ঝগড়ার মধ্যে দিয়েই
চলতে থাকে ওদের ভালবাসা। ঝগড়া
সিরিয়াস হয়ার কারণে, একজন
অভিমান
করে থাকলে অন্যজন অভিমান
ভাঙাতে
ব্যস্ত হয়ে পড়তো। যত অভিমানই হোক
পাঁচ
মিনিটেই আবার সবকিছু ঠিক হয়ে
যেত।
.
শুভ্রের পড়া লেখা শেষ হওয়ার পর
একটা
কম্পানিতে ভাল বেতনের চাকরী
পেয়ে
যায়। চাকরী পাওয়ার কয়েক মাস পরেই
শুভ্র
শশীকে সারা জীবনের জন্য নিজের
করে
নিয়ে আসে। বিয়ের পরেও ওদের
ভালবাসায়
ভাটা পরে না। নির্দিষ্ট একটা রুটিন
অনুযায়ী চলতে থাকে ওদের পবিত্র
ভালবাসা।
.
ইদানিং অফিসের কাজে ব্যস্ত
থাকায়
শুভ্র বেশী সময় দিতে পারে না
শশীকে।
শুভ্র অফিসে যাওয়ার পর শশী ফোন
দিলে
বেশীক্ষণ কথা না বলেই ফোন রেখে
দেয়
শুভ্র। শুভ্রের এই আচরণে শশী অনেকে
কষ্ট
পায় তারপরেও শশী, শুভ্রকে কিছুই বলে
না।
শশী জানে শুভ্র ওকে অনেক
ভালবাসে।
কিন্তু আজ রাতে শশীর কেন যেন ঘুম
আসতেছিল না। তাই শশী শুভ্রকে
ডেকে
বলে ওকে ঘুম পারিয়ে দিতে।
.
শুভ্র বিছানা থেকে নেমে আস্তে
আস্তে
বারান্দায় গেল। বারান্দায় গিয়ে
দেখল
শশী বারান্দার গ্রিল ধরে আকাশের
দিকে
তাকিয়ে কাঁতেছে। শুভ্র শশীর ঘাড়ে
হাত
রেখে বলল স্যরি জানু আমার ভুল হয়ে
গেছে
এবার ঘরে আসো।
- আমি ঘরে যাব না। আমাকে জানু
বলে
ডাকবা না আমি কারো জানু না।
- বললামতো স্যরি। আসলে শরীর অনেক
ক্লান্ত ছিল তারপর ঘুমের ঘোড়ে কি
না কি
বলছি। আর রাগ করে না আসো আমি
তোমাকে ঘুম পারিয়ে দিব।
- আমাকে ঘুম পারিয়ে দিতে হবে না।
তুমি
তোমার অফিস নিয়ে থাকো। তোমার
জীবনে আমাকে আর প্রয়োজন নাই।
চলে
যাও তুমি আমি তোমার কিছুই হই না।
- ঠিক আছে তুমি যখন আমার কিছুই হও
না।
তখন আমার কিছু করার নাই। আমি
অফিসের
সুন্দরী কলিগের কাছে চলে যাই।
শুভ্রের কথা শেষ হতেই ঘুরে দাঁড়ালো
শশী। শুভ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে
উচ্চস্বরে কাঁদতে কাঁদতে বললো। আমি
অসুন্দর আর খারাপ বলে আমাকে ছেড়ে
চলে
যাবা? আমাকে একটুও ভালবাসো না
তুমি।
- ভালবাসি বলেইতো ঘরে নিয়ে ঘুম
পারিয়ে দিতে চাইছিলাম। কিন্তু
তুমি কত
সহজেই বলে দিলা তুমি আমার কিছুই
না।
তোমাকে আমার প্রয়োজন নাই। এখন
আমার
কিছু করার নাই।
- এই শুভ্র তুমি কাঁদছো কেন?
- তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলছি।
তুমি
আমাকে ছেড়ে চলে যেতে বললে।
তাই
অনেক কষ্ট পেয়ে কাঁদি।
- এই আমি আর তোমাকে যেতে বলব
না। আর
কাঁদবে না বলে দিলাম।
- তুমিতো আমার আগে থেকে
কাঁদছো।
- কাঁদবোই বেশী করে কাঁদবো তুমি
আমাকে
ঘুম পারিয়ে দিলে না কেন?
- এখন চলো তোমাকে আমার বুকের
উপরে
রেখে ঘুম পারিয়ে দিবো।
- আমি যেতে পারবো না আমাকে
কোলে
করে নিয়ে যেতে হবে। এটা তোমার
শাস্তি।
.
শুভ্র শশীকে কোলে করে রুমে নিয়ে
আসলো। তারপর শশীকে ওর বুকের উপরে
রেখে গল্প করতে লাগলো। গল্প করতে
করতে
শশী ঘুমিয়ে গেল। শুভ্র ঘুমন্ত শশীর
দিকে
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। মনে মনে
প্রার্থনা করলো ওদের ভালবাসা যেন
হারিয়ে না যায়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেন
বেঁচে থাকে ওদের ভালবাসা।
.
বেঁচে থাকুক সব ভালবাসা। শুভ্র আর
শশীর
ভালবাসার মত।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×