এই শরতে মন জানি কেমন পালাই পালাই করছে। ই”েছ করছে এক ছুটে চলে যাই বান্দরবানের পাহাড়ে। তারপর সেখান থেকে গাড়িপথে এ পাহাড়, সে পাহাড় ডিং্িগয়ে, নদী-লেকের আশ্চর্য ল্যান্ডস্কেপ ছুঁয়ে আরও গহীনে। না-না পথচলা এখানেই শেষ হবে না। এরপরও ছোট নৌকা নিয়ে বান্দরবানের লুকিয়ে থাকা অঢেল সৌন্দর্যসুধা পান করতে হাজির হতে ই”ছা করছে সৌন্দর্যের সীমানায় ’রেমাক্রিতে’।
তো আর দেরি কিসের? ’ভ্রমণ বাংলাদেশ’ এর কয়েকজন বন্ধু মিলে রওনা হয়ে গেলাম বান্দরবান হতে থানচির উদ্দেশ্যে। পার্বত্য জেলাগুলোর প্রাণকেন্দ্র বান্দরবান শহর থেকে থানচি যাওয়ার রা¯তাটি যেন কোন মহান চিত্রকরের তুলিতে আঁকা কতগুলো দৃশ্যাবলির এক অবাক সমন্বয়। যেতে যেতে এর প্রেমে মানুষ পড়বেই। অšতত কয়েক’শ মোড়, পাহাড়ী রা¯তার চড়াই উতরাই অভিবাদন জানায় থানচি পর্যšত। থানচিতে দুপুরের খাবার সেরে বি.জি.বি. ক্যাম্পে রির্পোট করেই মানিক মাঝির নৌকাতে চড়ে রওনা করলাম রেমাক্রির উদ্দেশ্যে। সাঙ্গু নদীর দু’ধারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমরা যখন ’রেমাক্রি ফলস’ এর মুখে এসে পৌঁছালাম, তখন পড়šত বিকাল। আধো আলোয় ’রেমাক্রি ফলস’ যেন এক মাযাবী রূপ ধারন করেছে। হা করে এর অপরূপ রূপ দেখতে থাকলাম। একটু পর সন্ধ্যা নামলে আমরা চলে এলাম রেমাক্রি বাজারে। রেমাক্রিতে একমাএ গেষ্ট হাউজে আমাদের থাকার ব্যব¯’া হল। একটু বিশ্রাম নিয়েই আমরা বেরিয়ে পড়লাম রেমাক্রি বাজার ঘুরে দেখতে।
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হল এটি যেন এক কল্পলোক। প্রকৃতি যেন এখানে উজার করে রেখেছে এর রূপের ঝাঁপি। চারদিকে মেঘ আর পাহাড়ের এক অপূর্ব সমন্বয়। ছোট ছোট মেঘের ভেলায় চড়ে কোন এক অপরূপা রাজকন্যা যেন নেমে এসেছে পাহাড় রাজার দেশে। নীল আকাশ হতে সেই রাজকন্যাকে সোনার মুকুট পরিয়ে সূর্যের আলো নেমে আসে পৃথিবীর বুকে। প্রথম আলোর উঞ্চ পরশে ঘুম ভাঙ্গে সকলের।
সকাল ৮টার মধ্যে না¯তা সেরে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা রওনা হলাম রেমাক্রির মূল আকর্ষণ ”নাফাখুম জলপ্রপাতের” উদ্দেশ্যে। রেমাক্রি হতে গাড়ি তো দূরের কথা নৌকা ও চলাচল করতে পারে না বলে নাফাখুম পর্যšত পুরো রা¯তাটাই পায়ে হেটেই যেতে হয়। নাফাখুম যাওয়ার রা¯তাটা বড় সুন্দর, ঘন সবুজ পাহাড়ি জঙ্গল, তার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে অসম্ভব সুন্দর একটি ঝিরি। এই ঝিরি ধরে প্রায় আড়াই ঘন্টা হাটার পর হঠাৎ করেই উদয় হল একটি জলপ্রপাত, ’নাফাখুম’।
ঘন্টা দু’য়েক সেখানে কাটিয়ে, মন ভরে এর সৌন্দর্য উপভোগ করে আমরা ফিরতি পথ ধরলাম। যে পথে এসেছি সে পথেই ফিরছি। তারপরও সবটুকু পথই যেন নতুন নতুন লাগছে। হাটতে হাটতে এক সময় চলে এলাম ’রেমাক্রি ফলস’ এর মুখে। ভর দুপুরের তপ্ত রোদে ফলস এর পানি চিক চিক করছে। ৮-৯ টি ধাপে সাজানো স্রস্টার এই সৃষ্টি সকলেরই মন কারতে বাধ্য। ঘন্টা খানেক ফলস এর পানিতে দাপাদাপি করে আমরা ফিরে এলাম রেমাক্রি বাজারে।
বিকেলে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। রেমাক্রির চারপাশের সৌন্দর্য যেন অন্য এক মাএা পেয়েছে এই বৃষ্টির ফলে। পাহাড়ী সবুজ যেন আরও সবুজ হয়ে গেল। প্রকৃতি যেন আপন ছন্দে নাচতে শুরু করেছে নাম না জানা পাখির সুরে, পাহাড়ের গা বেয়ে বয়ে আসা ক্ষনিকের ঝণ্র্ার তালে। সে এক অ™ভূত মায়া, যে মায়া রেমাক্রিকে করে তোলে পার্বত্য পারিজাতে। সেই মায়ার বাধন ছিঁড়ে ইট কংক্রিটের কর্মব্য¯ত শহরে ফিরে আসা বড়ই কষ্টের।
তথ্য কনিকা: রেমাক্রি ইউনিয়নের লোক সংখ্যা প্রায় ৪০০০। অধিকাংশ লোকই কৃষি নির্ভর। পাহাড়ে জুম চাষই এদের জীবিকা অর্জনের অবলম্বন। পুরো ইউনিয়নে মোট ৫০ টির মত পাড়া রয়েছে। তবে শুধু রেমাক্রি বাজারকে কেন্দ্র করে পাড়া রয়েছে ৭-৮ টি। এদের মধ্যে রেমাক্রি বাজার পাড়া, পেনেদং পাড়া, কলা পাড়া, ব্রুপিং পাড়া উললেখযোগ্য।
জাতি: মারমা, এিপুরা, ম্রো, খমী, বম এই পাঁচ জাতি গোষ্ঠির দেখা মিলবে এখানে।
উৎসব: এখানকার প্রধান প্রধান উৎসবগুলো হল সাংগ্রাই, ওয়াছো, ওয়ায় গ্যই, বড় দিন এবং কথিং চিবর দান।
কি কি দেখবেন: রেমাক্রি ফলস, নাফাখুম জলপ্রপাত, লাংলুক খং বা বাদুর গুহা।
কিভাবে যাবেন: ঢাকা হতে বাসে করে বান্দরবান। বান্দরবান হতে বাস অথবা চান্দের গাড়িতে করে থানচি। থানচি বাজার হতে নৌকা ভাড়া চলে যাওয়া যায় রেমাক্রিতে। ৬-৭ জন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিটি নৌকার ভাড়া পড়বে ৪০০০-৫০০০ টাকার মত।