somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গঃ ইসরায়েলি গণহত্যা, পশ্চিমা বিশ্বের প্রহসন, গণসম্মোহন ও ঢোঁড়াসাপের ফোঁসফোঁসানি

০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসরায়েল আবার হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনে। মরছে সিভিলিয়ান মানুষ, যারা কেবল তাদের একটা অধিকারই নিশ্চিত করতে পেরেছে।
ভায়োলেন্টলি মরার অধিকার।
অবশ্য এটাকে যদি অধিকার হিসাবে দাবি করা যায় তবেই!

ছোট মুখে কিছু বড় কথা বলতে ইচ্ছা করছে। এসব কথা বড় বড় মানুষদের বড় বড় কান পর্যন্ত পৌঁছাবেনা জানি, তারপরেও।

ছোট্ট একটা দেশ। তার এত সাহস হয় কি করে, যে ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রতিবেশি দেশটির উপর এভাবে হামলা চালিয়ে যেতে পারে? ফিলিস্তিন দখল করার ইচ্ছে থাকলে নিশ্চয়ই তা এতদিনে হয়ে যেত? ইসরায়েলের ভাবভঙ্গিতে মনে হয় প্রতিটি ফিলিস্তিনি নাগরিককে পৃথিবীর বুকে নরকের স্বাদ না পাইয়ে তারা ছাড়বে না। এর কারণ কি? অবশ্যই আমেরিকার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সাহায্য।

কিন্তু বিশ্বের এক নাম্বার সুপারপাওয়ার এই পুঁচকে একটা দেশকে কেন এভাবে সাহায্য করবে? ব্যাপারটা অনেকটা লেজই কুকুর নাড়াচ্ছে-এমন হয়ে গেল না?

সারা পৃথিবীতে গণতন্ত্রের একমাত্র বৈধ ধ্বজাধারী আমেরিকা। তারা সেই অজুহাতটাই দিয়েছে সব সময়। কিন্তু একটু গভীর ভাবে চিন্তা করুন। আমেরিকার অর্থনীতির নব্বই শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে ইহুদীরা। ওয়াল স্ট্রিট, ফেডারেল রিজার্ভ ইত্যাদি সবকিছুর শীর্ষে ইহুদীরা বসে আছে। এ কারণেই ইসরায়েলের প্রতি এহেন সহনশীল মনোভাব।

এই পরিস্থিতি কিন্তু বেশিদিন আগে তৈরি হয় নি। আর এখন তো পরিস্থিতি ব্যখা করে বলার কিছু নেই। ইসরায়েল যেন সেই অতি আদরে বাদর হওয়া ছেলেটা, যার শত অন্যায়, অযৌক্তিক আবদার, পাশের বাড়ির বাচ্চাদের মাথা ঢিল ছুড়ে ফাটিয়ে দেয়া, তাদের খেলনা কেড়ে নেয়া ইত্যাদি কিছুই তার স্নেহান্ধ পিতা মাতার চোখে পড়ে না।

ইহুদীরা কিন্তু অভিশপ্ত জাতি, এটা জানেন? কখনও নিজেদের বসবাসের স্থায়ী ভুখন্ড পাবে না- এই মর্মে তাদের উপর অভিশাপ আছে। আর তাদের নিজস্ব দেশ যখন তারা পাবে তখন বুঝতে হবে কেয়ামতের সময় সমাগত- এমন কথাও বলা আছে। যে কোন ইসলামি জ্ঞানসম্পন্ন আলেমের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন। তবে আমি কেয়ামতের ভবিষ্যদ্বাণী করতে চাচ্ছি না। সে বিষয়ে আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

আমার কথা অন্য জায়গায়। পুরো পৃথিবীতে বিশেষ করে মুসলিম জাতির উপরে যে অত্যাচার চলছে, তার মূলে কে? ইসরায়েল এবং তাদের মিত্র আমেরিকা। তারা কি অজুহাতে এই অত্যাচার চালাচ্ছে? না, মুসলিম মানেই হচ্ছে টেরোরিজম, সন্ত্রাসবাদ, আল কায়েদা, বিন লাদেন, সুইসাইড স্কোয়াড, মধ্যযুগীয় বর্বরতা, দোররা, ফতোয়া, শিরোচ্ছেদ। সুতরাং এ গুড মুসলিম ইজ এ ডেড মুসলিম- এই মন্ত্র মস্তিষ্কে ধারণ করো, হৃদয়কে তালা মেরে রাখো এবং মুসলিম নিধনে ঝাপিয়ে পড়। এই প্রচারণাই তো চলছে সারা পৃথিবীতে, তাই না?

প্রচারণা টা চালাচ্ছে কারা? এবার একটু ভাবতে হবে। হলিউড সিনেমাগুলোর কথা মনে করুন। কয়টা সিনেমা দেখেছেন যেখানে একজন মুসলিম কে পজিটিভ ক্যারেক্টারে দেখানো হয়েছে? কয়টা সিনেমায় নেগেটিভ ক্যারেক্টার? তফাতটা কি সিগিনিফিকেন্ট মনে হচ্ছে? হলিউড কাদের?

নিউজ চ্যানেলগুলোয় মুসলিম টেরোরিজমের খবর যতটা ফলাও করে প্রচারিত হয়, আর কোন খবর ততটা গুরুত্ব পায়? নিউজ চ্যানেলগুলো চালাচ্ছে কারা?

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্মোহনকারী কে জানেন? আপনার ঘরের কোনায় রাখা চারকোনা বাকসো টা, যাকে আমরা টিভি বলে চিনি। সে আমাদের অজ্ঞাতসারে আমাদেরই অবচেতন মনে বিভিন্ন সাজেশন ঢুকিয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এটা ভাল, ওটা খারাপ, গায়ের রং কাল হলে বিয়ে হবে না, ফর্সা মানেই সুন্দর, রাত জেগে কথা বলাই প্রেমের একমাত্র রাস্তা, ডরেমন বিপদে সাহায্য করতে আসবে, স্টার জলসা বা জী বাংলায় যা দেখাচ্ছে তা সত্যিই ঘটছে, গোবিন্দ টিভিসি পন্যের গুনগান গাইছে মানেই সেটা সত্যিই উপকারী- সব কিছু। সব। কত বলব? বলতে গেলে শুধু সময় নষ্ট করা হবে। শুধু এটা বলি, আপনি নিজেও জানতে পারছেন না কখন আপনি এসব কথায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, কারণ এসব কথা একদিন দুই দিন নয়, বছরের পর বছর আপনার অবচেতন মনে গেঁথে দেয়ার পায়তারা চলছে। আজকের পৃথিবীতে মিডিয়া যার হাতে, তার হাতে সবকিছু। ইনফর্মেশন ইজ দ্য নিউ গড ইন দিস ওয়ার্ল্ড। আপনি হচ্ছেন মাছ, মিডিয়া মুঘল রা হচ্ছে শিকারী। টিভি হচ্ছে আপনাদের মাঝখানে অবস্থান করা বড়শির মাথায় লোভনীয় টোপ।

ষাটের দশকে একজন লোক খুঁজে পাওয়া যেত না যে এলিয়েনে বিশ্বাস করে। এখন? শতকরা সত্তুর ভাগ লোক বলবে এলিয়েন আছে। এটা আমার কথা নয়। পরিসংখ্যানে পাওয়া। কিভাবে সম্ভব হল? এলিয়েনরা নিশ্চয় এই সত্তুরভাগ মানুষের বাসায় এসে দাওয়াত খেয়ে যায় নি? এসব আসলে টিভি, সিনেমা আর মিডিয়ার গণসম্মোহনের সফলতা।

মূল কথা থেকে বহুদূরে চলে গেছি। তো মুসলিম দের বিরুদ্ধে এই প্রোপাগান্ডা চালানোর কারণ? কারণ সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর আমেরিকার বিশাল বাজেট ধরে রাখার জন্য এবং সামরিক খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢালার জন্য আরেকটা মেগাভিলেইন, এনিমি অফ দ্য ম্যাসপিপল দরকার ছিল। এমন কেউ নেই তো কি হয়েছে, বানিয়ে নাও! গিভ বার্থ টু ইসলামিক টেরোরিজম। এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। দুই পাখির নাম কি সেটা চিন্তা করে বের করার ভার আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম। কারণ আরও আছে, তবে সেটা আমি বলব না। অন্তত এখানে না।

আসলে এসব কিছুতে কিন্তু আমাদের যায় আসে না। আমরা তো ভালই আছি। খাচ্ছি, দাচ্ছি, ঘুমুচ্ছি, সন্তান উৎপাদন করছি এবং একসময় অপার শান্তি নিয়ে মারা যাচ্ছি। ফিলিস্তিন ইরাক আফগানিস্তান বা পৃথিবীর অন্য যে কোন জায়গায় মানবতার বিরুদ্ধে যে সব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তার সামান্যতম আঁচও তো আমাদের গায়ে লাগছে না, তো আবার চিন্তা কিসের মামু?

আপনি যদি এই লাইনে চিন্তা করনেওয়ালা লোকদের দলে হন, তাহলে তো কিছু বলার নেই। বরং আপনি যে এই বিশাল লেখাটার এই পর্যন্ত পড়ে ফেলেছেন, এজন্য আপনাকে একটা লম্বা স্যালুট জানাতে ইচ্ছে করছে! যাই হোক, ধরে নিন যা পড়লেন তা পাগলের প্রলাপ। এবার পড়া বাদ দিয়ে আরাম করে একটা ঘুম দিন। অনেক কষ্ট করে ফেলেছেন। চোখ দুটোকে এত কষ্ট না দিয়ে বরং সানি লিওনের বেবি ডল চালিয়ে দিন। আরাম পাবেন।

আর যদি আপনি কাতারের বাইরে দাঁড়াতে চান, যদি মনে হয় যে সৃষ্টিকর্তা আমাকে মানুষ হিসেবে খাওয়া ঘুম বংশবৃদ্ধির বাইরেও আরও কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন, জীবনটা আলু পটলের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এটা দিয়ে আরও অনেক কিছু করা যেতে পারে, সেক্ষেত্রে বলব আমার লেখাটা পড়ে কোন প্রশ্ন কি তৈরি হয়েছে আপনার মনে? সেগুলোর উত্তর খুঁজুন। সবার আগে ইন্টারনেট। তারপর বিভিন্ন বইপত্র। আমাকে জিজ্ঞেস করলে যতটা পারি সাহায্য করার চেষ্টা করব কথা দিচ্ছি।

আর বেশি জ্বালাবো না। কথা প্রায় শেষ। লাস্ট যে কথা সেটা হচ্ছে কোন রেফারেন্স বা তথ্যসূত্র দিলাম না। কোন গবেষনামূলক লেখা লেখার ইচ্ছা আমার ছিল না। আমার উদ্দেশ্য সবার মনে কিছু প্রশ্ন তৈরি করা। সেটা সম্ভব হলেই আমি স্বার্থক।

মায়ের কাছে শুনেছি, আমার নানা খুব পরহেজগার মানুষ ছিলেন। তাকে এক লোক জিজ্ঞেস করেছিল, আপনি যে এত নামায কালাম করেন, কেন? মৃত্যুর পরে যদি কিছুই না থাকে? তাহলে তো এ সবই বৃথা। আমার নানা হেসে জবাব দিয়েছিলেন, যদি কিছুই না থাকে তাহলে তো তুমিও বেঁচে গেলে, আমিও। কিন্তু যদি কিছু থাকে? তখন তোমাকে কে বাঁচাবে বাবা?

আমিও সেই কথাটাই বলতে চাচ্ছি। হয়তো আমার এসব কথাবার্তা আসলেই কোন পাগলের প্রলাপ। তাহলে তো সবই ঠিক আছে। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, যদি যা বললাম তা সত্যি হয়? ম্যাট্রিক্স সিনেমার মত আপনি একটা ব্যাটারী ছাড়া আসলে আর কিছুই নন? তাহলে?


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:২৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×