somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা রূপকথার গল্প

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
(এবং এ গল্পের কোনও রকম ব্যাখ্যা দিতে আমি এখন প্রস্তুত নই)



আমি ছিলাম মাইল দু-চারেক দূরে
দেখতে পেলাম পাহাড়-চূড়ায় মহল;
ছায়াবিহীন জোৎস্নার প্রান্তরে
চিরকালীন ঘোড়া দিচ্ছে টহল।

যেই না খানিক হাঁপিয়ে উঠে থামি
অমনি শুনি অদ্ভূত এক সুরে
গাইছে কে গান - চমকে উঠি আমি !
কাঁদছে কে যে অনেক অনেক দূরে...

কেমন ঘোরে পৌঁছে গেলাম মহল
দেখি, একটা ফুলের কাছে নত
গানের উৎস বাগানপথেই বসে;
আমায় দেখে ভীষণ থতমত !

আমায় ডেকে বলল, 'অ্যাই, তুমি কে?'
-'অন্ধ কবি, আর তুমি কে শুনি?
ফুলটা অবাক, 'রাণীকে চেনো না?
বিরাট পাজী, মাফ চাও এক্ষুণি !'

রাণী তখন মিষ্টি হেসে ওঠে
সর্বনাশের তখন সবে শুরু !

****************************************

হঠাৎ ফুল'টা দেখিয়ে রাণী বলে,
'একটা জিনিস দিলাম তোমায় বেছে -
এই ফুলটার হাজার বছর বয়স,
এই ফুলটা মরতে ভুলে গেছে !'

আমি ভীষণ চমকে উঠি, 'সে কী !
মরবে না সে? এ কোন প্রজাতি?'
- 'প্রতিদিন সে নতুন করে ফোটে
তাই জানো তার নেই পুরাতন স্মৃতি !

তবু জানো, মহাকালের কথা
সব জমা তার পাপড়ি'র উল্টোপাশে...'
ফুল'টা বলে, 'দোহাই লাগে রাণী,
আর বোলো না, মানুষ অচেনা সে !'

রাণী'র ভীষণ হাসির শব্দে তখন
একটা ঋষি ধ্যানটা ভেঙে কেশে
চোখটা কচলে অবাক হয়ে তাকায়,
রাণী'র পাশে মানুষ নাকি? কে সে?

ফুল বলে, 'এই দ্যাখো, কাজ সেরেছে
কবি মানুষ তুমি এখন পালাও !'
আমি ভীত, কোন পথে পালাবো?
রাণী হাসে, ফুলটা তো ছুঁয়ে যাও?

ফুলটা ভীষণ চিৎকার করে ওঠে,
'কক্ষণো না, কক্ষণো না, দোহাই...'
ভুল যা করার আমি করেই ফেলি
সেই ভুলে আজও নির্ঘুম রাত পোহাই

তারপর কী হল, কী যে হল
ওসব আমার খেয়াল তো নেই সকল
আমি আজও শিউরে শিউরে উঠি
কোনটা ছিল আসল, কোনটা নকল

ইতিহাসটা তীব্র তীরের মত
বিঁধল এসে আমার দুটি চোখে !
সত্য দেখে অন্ধ হলাম আমি
অন্ধ হলাম রাণীর'ই সম্মুখে !

আমায় ভীত দেখে রাণী বলে -
'যা দেখেছ সত্য - আমি জানি,
জানি বলেই মরতে হবে আমায়'
এই বলে ফের মুচকি হাসে রাণী !

ঘোরটা আমার কাটেনি তখনও
সেই ঘোরেতে হারিয়ে ফেলি তাকে।
জেগে দেখি, কোন দেশে ফের আমি?
আমার তখন রক্ত ঝরছে নাকে।

*****************************************************

দেখি তখন মহলে কী হল।

সপ্ত-ঋষি সাত-পাঁচ না ভেবে
রাজার কানে কী যে বলে গেল;
রাজা ছিল খানিকটা পাগলাটে
ওসব শুনে আরও এলোমেলো !

সেই রাজা তাই ভীষণ ক্ষেপে গিয়ে
বলল, 'রাণী বন্দী হবে আজই !'
রাণী শুনে ফিসফিসিয়ে বলে,
'আমি নিজেই বন্দী হতে রাজি!'



রাণী বন্দী হল নিজের ঘরেই
বাইরে টহলে প্রাচীন সে ঘোড়াগুলি
এদিকে রাণী'র সঙ্গী কে হল জানো?
মরতে ভুলে যাওয়া সে ফুলের কলি।

রাণী হেসে ফুলকে প্রশ্ন করে,
'জানো, রাজা কী নিয়ে চিন্তিত?'
অবাক চোখে ফুল তাকিয়ে বলে,
'ওসব আমি খেয়াল করি নি তো!'

রাণী হাসে, 'ফুল তুমি বেশ আছো,
নিজের মনে এমনি সুখেই থেকো,
অন্ধ কবি আবার যদি আসে,
তার জন্যে গল্পগুলো রেখো?'

কবিকে সব সইতে বলো তুমি?
সত্য যে কী - সে তো আমিই জানি।
ওরা তোমার বিচার করার কে আজ?
রাণী, পালাও তুমি! পালাও রাণী!

রাণী শুধুই মুখটা টিপে হাসে
অন্ধ কবি'র ছন্দ নীল বাতাসে
ফুল বুঝেনা রূপকথাদের ধরণ
রাণী কেবল ঠোঁট'টা চেপে হাসে।

ওরা তখন বিচার করতে এল।
ওরা কারা? ওরা কাদের লোক?
'বাদ দাও না? ওসব জানতে হয় না !'
বলেই রাণী বন্ধ করল চোখ।

ওরা তখন তাকে ছিঁড়েই ফেলে!
ইচ্ছেমতন টেনে-হিঁচড়ে ধরে;
কালপুরুষের কোমর থেকে তখন
তিনটা তারা'র একটা খসে পড়ে...

রুপকথাটা শেষ হয় না তবু,
রুপকথা'রা শেষ হতে জানে না।
মাঝরাতে এক তারা'র জন্ম হল
সবাই অবাক, 'মুখটা যেন চেনা!'



এসব গল্প বলতে হবে জেনে
মরতে চেয়েও কবি আজ পারছে না...

***************************************

অ-নামিকা নক্ষত্রের রাতে
মহীনের ওই ঘোড়াগুলি'র মত
'অমর' হয়ে একবার জন্মাতে?
বুঝতে কেমন - মরতে চাওয়ার ক্ষত।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:৩৭
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×