somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবার কলকাতা ৫

২২ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আবার কলকাতা ৪

পিয়ারলেস হসপিটাল

হোটেলের কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্টে ঘুরে ফিরে তিন মেনু, ব্রেড-বাটারের সাথে জেলি আর ডিম, অথবা আলুপরাটা আর আচার কিম্বা পুরি-সব্জি। আগের দু’বার রুমের সাথে ফ্রি ব্রেকফাস্ট ছিলোনা। মর্নিংওয়াক থেকে ফেরার সময় ফুটপাথ থেকে অথবা যেকোন খাবারের দোকান থেকে নাস্তা নিয়ে আসতাম।এবার যেহেতু কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট তাই সে ঝামেলা নেই। আবিদ রুমে এসেছিলো ব্রেকফাস্ট নিয়ে তাঁকে বললাম, ‘একটা ট্যাক্সি লাগবে, সাদা ট্যাক্সি’। সে বলল, ‘স্যার আপনি এসি চাচ্ছেন কীনা বলুন, এসি ছাড়াও কিন্তু সাদা ট্যাক্সি আছে। আপনি একটু রিসেপসনে বলে দিন ওখানে ইয়াসমিন ম্যাম আছে ওনার খোঁজে ট্যাক্সি আছে’।
রিসেপসন থেকে ইয়াসমিন বলল স্যার কোথায় যাবেন বলুন, বললাম পিয়ারলেস হসপিটাল। সে বলল ওটা তো অনেক দূর স্যার বেশি টাকা লেগে যাবে তাঁর চেয়ে এসপ্লানেড থেকে মেট্রোয় চাপুন না কবি সুভাষ পর্যন্ত ২০ টাকা নেবে তারপর একটা অটো নিলেই চলবে।
বললাম এই গরমে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত যাওয়াটাই তো ঝামেলা। এত দূর হাটতে গেলে ঘেমে গোসল হয়ে যাবে, এত টুক রাস্তায় ট্যাক্সি যেতে চাইবে না, আর অটো নেবে ৫০ টাকা, মেট্রোতে আমাদের চারজনের লাগবে ৮০ টাকা তারপর আবার অটো, অত ঝামেলায় গিয়ে লাভ নেই আপনি ট্যাক্সি বলে দ্যান। হাসতে হাসতে সে বলল, আর বলতে হবে না স্যার নিচে নেমে আসুন শাহজাদাকে বলে দিচ্ছি।
শাহজাদা এই হোটেলের সিকিউরিটির পুরণো লোক, বিচিত্র কারণে আমাদের পরিবারের সবাইকে সে পছন্দ করে। সম্ভবত আগের ট্রিপে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া মিষ্টির ভাগ সে পেয়েছিল। দীপাকে সে মান্যি করে আমার চেয়ে বেশি। শাহজাদা ট্যাক্সি থামিয়ে দাঁড়িয়েছিল, বলল ম্যাডাম রোদের তেজ বাড়ছে এখন এসি ট্যাক্সি পাওয়া মুসকিল। বরাত জোরে পেয়ে গিয়েছি, যদি মিটারে না যেতে চায় তবুও না ছাড়াই ভালো।
ড্রাইভারকে দেখে বাঙালি মনে হল। সে বলল, বাঙালি না স্যার একেবারে বাঙাল, নাম শিবু সাহা। ঢাকায় বাড়ি ছিলো আমার ঠাকুর দার। ‘মিটারে যাইবেন না ফিক্স কইরা লমু? ভাষাটা আপনাদের মত হচ্ছে তো ?

এম্বেসেডরের বদলে সুজুকি

হাসি পেয়ে গেল শিবুর কথা শুনে যদিও ভানু বন্দোপাধ্যায়ের ভাষায় কথা বলছে সে, কিন্তু উচ্চারণের কসরততের জন্যে মনে হচ্ছে সারেগামাপা’র কুমার শানুর গলা শুনছি। বললাম পারফেক্ট হচ্ছে। শিবু সাহাকে বেশ আনন্দিত মনে হল, বলল স্যার ৩০০ টাকা দিয়ে দেবেন, মিটারেও যেতে পারি একই রকম পড়বে। বললাম ঠিক আছে মিটার চলুক কিন্তু তিনশ’ টাকায় দেবো।
– তাহলে আর শুধু শুধু মিটার উঠিয়ে কী লাভ ? চলুন স্যার তাড়াতাড়ি পৌছে দোব।
শিবু সাহা কোনদিন ঢাকায় যায়নি। ঢাকার কোথায় তার ঠাকুরদার বাড়ি ছিলো তাও জানে না। এসব নাকি তার ঠাকমা জানেন। শিবু সাহার বাবা গত হয়েছেন বছর বিশেক আগে, শেষদিন পর্যন্ত একবার বাপের ভিটে ঘুরে আসার শখ ছিলো তার। শিবুর সেসব বালাই নেই কলকাতায় মানুষ হয়েছে সে।‘এখানই তো সব আত্মীয় স্বজন বাংলাদেশে যাবো কেন?
আমাদের ইন্ডিয়ায় তো স্যার এখন মার্সিডিজও তৈরি হচ্ছে স্যার, ৩৩ লাখ টাকায় পাওয়া যায়, আমি যে সুজুকি চালাচ্ছি এটাও কিন্তু খারাপ নয় স্যার লিটারে মেরেকেটে ১৩ চলে যায়।
আমি তার কাছে এসব শুনতে চাইনি নিজে থেকেই বলে যাচ্ছে সে। ‘আর যে হলুদ ট্যাক্সি দেখছেন স্যার এম্বেসেডর এগুলো উঠে যাবে আর পাঁচ বছরের মধ্যে। গাড়ি দেখতে হলে সল্ট লেকে যেতে হবে, আডি, হূন্দাই কী নেই সেখানে’।

মির্জা গালিবেই আমি বেঙ্গল হুন্দাই এর অফিস দেখেছি, সেকথা আর বললাম না।

সায়েন্স সিটির কাছেই

শিবু সাহা তার দেশের প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত। এসব শুনতে ভালো লাগেনা। একটু পরে ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে গেলাম, বিষয়টা বিরক্তিকর, তবে শিবু ধরার এটিই মওকা বললাম, কলকাতায় যে ট্র্যাফিক জ্যাম মার্সিডিজ বেঞ্জ একটু বড় হলেই ভালো রাস্তায় আরাম করে ঘুমিয়ে নেওয়া যাবে।
শিবু সেসব গায়ে মাখলোনা। বলল, স্যার ইএম বাইপাশটা চালু হলেই দেখবেন জ্যামট্যাম ভোজ বাজির মত হাওয়া।
– সেটা হচ্ছে কোথায়?
– কেন স্যার এই যে পিলার গুলো দেখছেন এতো এর ওপর দিয়েইতো ফ্লাই ওভার গিয়ে বাই পাশের সাথে মিলবে।
আমরা তখন গড়িয়ার কাছে সত্যজিত রায় ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনষ্টিটিউটের সামনে আটকে আছি। ইএম বাইপাসের কাজ আসলেই দ্রুত এগোচ্ছে ৬ মাস আগে শুধু কত গুলি খুঁটি দেখেছিলাম, এবার দেখলাম রাস্তাও অনেকটাই এগিয়েছে। এই ফ্লাইওভার সল্টলেক পেরিয়ে বিধান নগর হয়ে এয়ারপোর্ট। ভারত আমাদের চেয়ে ২৩ বছর আগে স্বাধীন হয়েছে বলে মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম। তবে রাগ হচ্ছিল শিবু সাহার উপর, তোর কাছে এসব উন্নয়নের ফিরিস্তি কে জানতে চেয়েছে?

সত্যজিৎ রায় ফিল্ম এন্ডটেলিভিসন ইন্সটিটিউট

শিবু আমার মনের কথা শুনতে পারছিলো না নিশ্চিত। আমাকে চুপ থাকতে দেখে বলল, স্যার পিয়ারলেস হসপিটালে এলেন কেন এখন এখানে কেউ যায়? কত ভালো হসপিটাল হয়েছে এপোলোতে যেতেন। এবার শিবুকে একটু গোল লাইনে ঠেলে দেবার সুযোগ পেলাম, ‘এপোলোতো আমাদের ঢাকাতেই দুটো আছে, আমরা না গেলে আপনাদের পিয়ারলেস টেস চলবে?’
হাসলো শিবু,’এবার বায়ে মোড় নিলেই পিয়ারলেসের রাস্তা।ডাক্তার দেখাতে এলে স্যার কসবার দিকে থাকা ভালো। এখান থেকে সারে ৬ কিলো মিটারের মত কসবা, ভালো হোটেল পাবেন, সার্ভিস এপার্টমেন্ট আছে। তবে মির্জা গালিবে থাকার লাভ হচ্ছে মার্কেট টার্কেট সব এক জায়গায় পাওয়া যায়। তবে হাসপাতাল কত দূরে বলুন তো! পিয়ারলেস তো ১৪ কিলো মিটারের কম না। আর সব ভালো ভালো হাসপাতাল গুলো এর আশে পাশেই।
শিবু যাই বলুক, পিয়ারলেস হাসপাতালের চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আমার কাছে খারাপ মনে হয়নি। ১৯৯৫ সালে পিয়ারলেস গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতাল বিশ বছরে অনেক এগিয়েছে। ৬০০ টাকায় রেজিস্ট্রেশন করে এখানে ডাক্তার দেখাতে হয়ে। ভারতীয়দের জন্যে সম্ভবত আরও কম টাকা লাগে। ঝামেলা হয় ওষুধ নিয়ে ডাক্তাররা বারবার বলে দেন হাসপাতালের ডিস্পেন্সরি থেকে ওষুধ কিনতে। যে ওষুধ বাইরে অন্তত ১০ পার্সেন্ট ডিসকাউন্টে পাওয়া যায়।

তিনতলা হাসপাতালের দোতলার দরজায় গাড়ি থামলো। শিবু বলল, আমার নাম্বারটা রেখেদিন স্যার ।যদি কাছেপিঠে থাকি, ফোন পেলে হাজির হয়ে যাবো
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৪:১৬
৮টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×