somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুন্দরবন সংলগ্ন রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রতিবাদে ঢাকা --> রামপাল ৪০০ কিলোমিটারের লংমার্চ

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৪/৯/২০১৩
সুন্দরবন সংলগ্ন রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রতিবাদে ঢাকা --> রামপাল ৪০০ কিলোমিটারের লংমার্চ আজ থেকে শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক চরিত্র তাতে কোন ইস্যু তৈরিতে দেশের সার্থের চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনা বেশি গুরুত্ত পায়।
এ ক্ষেত্রে সেটি হচ্ছেনা তা কিভাবে বলা যায়? এটি বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র নয়তো?
অথবা স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছেনা তো?
ইন্টারনেট এখন প্রোপাগান্ডায় ছয়লাব। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা তা বোঝা দুরূহ।
আর, আমরা বাংলাদেশিরা আবেগতাড়িত হয়ে কোন বাছবিচার ছাড়াই কোন এক পক্ষকে সমর্থন দিয়ে ফেলি।

এই ইস্যুতে অন্তত ২০টি আর্টিকেল পড়ার সুযোগ হয়েছে। আজ তার সারাংশ পেশ করছি। আশাকরি আপনাদের কাজে লাগবে এ ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার করতে।

রামপালে বিদুতকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে যারা যুক্তি দেখাচ্ছেন তারা বলছেন-
> বাংলাদেশের জন্য নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন অত্যান্ত জরুরি।

> সুন্দরবন থেকে রামপালের দুরত্ত ১৪ কিলোমিটার যা কিনা নিষিদ্ধ ১০ কিলোমিটার এলাকার বাইরে।

> যারা এর প্রতিবাদ করছে তারা সরকারের সাফল্য চায়না বা দেশের উন্নয়ন চায়না।

> শুধু শুধু ভারত বিরোধিতার কারণেই রামপালে বিদুতকেন্দ্র স্থাপনের প্রতিবাদ করা হচ্ছে।

> পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা সুন্দরবন ধ্বংসের ভূল তথ্য দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে

> বিরোধী শক্তি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য খামোখা এর বিরোধিতা করছে।

# জুন ২০১৩ এর বিবিসি সংলাপে এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়-

খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক ও আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হারুন অর রশীদ বলেছেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে যৌক্তিক একটি কাজ। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের কোন বিকল্প নেই। কারণ উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য

# শিক্ষাবিদ আনোয়ারুল কাদির ও দৈনিক পূর্বাঞ্চলের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ফেরদৌসী আলী বলেন, কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের প্রয়োজন আছে । সুন্দরবন আরও অনেক কারণেই ক্ষতির শিকার হচ্ছে। একটু ক্ষতি হলেও রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র না করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।

পোর্টের কারণেও তো সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রামপালে কাজটা করা যায়। একটু ক্ষতি হতে পারে কিন্তু ক্ষতির চেয়ে লাভ বেশি । ক্ষতি একটু হবে তবে সেটা ব্যাপক আকারে হবেনা।

# এই মাসের প্রথম সপ্তাহে (সেপ্টেম্বর ২০১৩) প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এসে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন- “কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান হলে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবে না, বরং সুন্দরবন সুরক্ষিত হবে। ...পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা সুন্দরবন ধ্বংসের ভূল তথ্য দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে”

# এসম্পর্কে মাননীয় বন মন্ত্রীর বক্তব্য “বিদ্যুৎ কেন্দ্র তো সুন্দরবনে হচ্ছে না,তাই সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবেনা”

---

এ প্রকল্পের বিপক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছে তাদের যুক্তি-
> বিকল্প আরও অনেক স্থান আছে তাই রামপালে বিদ্যুতকেন্দ্র চাইনাঃ
রামপাল ছাড়াও দেশে বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য অনেক বিকল্প যায়গা আছে, কিন্তু সুন্দরবন আমাদের একটাই। ভবিষ্যতে কি হয় বলা যায়না, তাই বিদ্যুতকেন্দ্র অন্য জায়গায় স্থানন্তর করা হোক।

> বাংলাদেশের লাভ কমঃ
এই প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৭০ ভাগ আসবে বিদেশি ঋণ থেকে । বাকি ৩০ ভাগের ১৫ ভাগ বহন করবে ভারত এবং বাকি ১৫ ভাগ বহন করবে বাংলাদেশ। কিন্তু বিদেশি ৭০ ভগের সুদসহ সব মূলধন পরিশোধ করার দায়িত্ব এককভাবে বাংলাদেশের। অর্থাৎ মাত্র ১৫ ভাগ বিনিয়োগ করে ভারত শতকরা ৫০ ভাগ অংশের মালিকানা পাবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কয়লা যোগানোর সব দায়িত্ব বাংলাদেশের । সময়মতো কয়লা না পাওয়া গেলে বা যে কোনো কারণে বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ থাকলে বা কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে ভারত কোনো দায় নেবে না

> ভারতেই নিষিদ্ধঃ
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটায় তাই সাধারণত বিশ্বের অন্যান্য দেশে সংরক্ষিত বনভূমি ও বসতির ১৫-২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয় না। যে ভারতের এনটিপিসি বাংলাদেশের সুন্দরবনের পাশে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে সেই ভারতের ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন অ্যাক্ট-১৯৭২ অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৫ কি. মি. এর মধ্যে ইআইএ গাইড লাইন ম্যানুয়াল ২০১০ অনুসারে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৫ কি. মি. এর মধ্যে কোনো বাঘ/হাতি সংরক্ষণ অঞ্চল, জীব বৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল , জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণীর অভায়ারণ্য থাকা যাবে না । আবার ভারতীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত গাইড লাইন-১৯৮৭ অনুসারে কোনো সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যায় না ।

> সুন্দরবন হতে স্বল্প সঙ্কট দূরত্বঃ



ইআইএ প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রস্তাবিত রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পটি সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিমি দূরে এবং সরকার নির্ধারিত সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার ইনভায়রনমেন্টালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) থেকে ৪ কিমি বাইরে বলে নিরাপদ হিসেবে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু জিআইএস সফটওয়্যার দিয়ে মেপে দেখা যায়, এই দূরত্ব সর্বনিম্ন ৯ কিলোমিটার হতে সর্বোচ্চ ১৩ কিলোমিটার।

> তিনটি অভিযোগঃ
এই প্রকল্পকে নিয়ে প্রধানত তিনটি প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে । প্রথমত, অসম এবং অস্বচ্ছ চুক্তি যাতে মালিকানা এবং জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয় । দ্বিতীয়ত, আমাদের জাতীয় গর্ব এবং অমূল্য সম্পদ সুন্দরবনের ওপর হুমকি। তৃতীয়ত, অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে কাজের শুরু ।

> কয়লা পরিবহনজনিত কারন:
পরিবেশের জন্য আরেকটি হুমকি হচ্ছে, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানিকৃত কয়লা সুন্দরবনের ভেতর দিয়েই পরিবহন করা হবে। সমুদ্রপথে বছরে ৪৭ লাখ ২০ হাজার টন আমদানি করা কয়লা প্রথমে বড় জাহাজে করে সুন্দরবনের ভেতরে আকরাম পয়েন্ট পর্যন্ত আনতে হবে, তারপর আকরাম পয়েন্ট থেকে ছোট ছোট লাইটারেজ জাহাজে করে কয়লা পরিবহন করে প্রকল্প এলাকায় প্রতিষ্ঠিতব্য কয়লা বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে। এতে করে সুন্দরবনের ভেতরে হিরণ পয়েন্ট থেকে আকরাম পয়েন্ট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার নদীপথে বড় জাহাজে বছরে ৫৯ দিন এবং আকরাম পয়েন্ট থেকে রামপাল পর্যন্ত প্রায় ৬৭ কিমি পথ ছোট লাইটারেজ জাহাজে করে বছরে ২৩৬ দিন পরিবহন করতে হবে!

> উৎপাদিত বর্জ সুন্দরবনেই যাবেঃ
এখানে বছরে ৪৭ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা পোড়ানোর ফলে ৭ লাখ ৫০ হাজার টন ফ্লাই অ্যাশ ও ২ লাখ টন বটম অ্যাশের বর্জ্য তৈরি হবে। এই ফ্লাই অ্যাশ, বটম অ্যাশ, তরল ঘনীভূত ছাই বা স্লারি বিপজ্জনক মাত্রায় পরিবেশদূষণ করে। যে যাই বলুক এগুলোর স্থান হবে সুন্দরবনের নদীগুলোতে।

> বিকল্প স্থান থাকা সত্তেও রামপালের ব্যাপারে ভারতের অতিআগ্রহ আর সরকারের অনড় অবস্থান অনেকেই বাঁকা চোখে দেখছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র যেখানেই স্থাপিত হোক না কেন, উৎপাদিত বিদ্যুৎ ন্যাশনাল গ্রিডেই আসবে।

বাংলাদেশে সাগর সংলগ্ন জেলা মোট ১৫টি । বিকল্প জায়গার কি এতই অভাব?

----
ফেসবুকে আর ব্লগে অনেক রকমের তথ্য পাবেন। পড়ে আপনার মতামত প্রকাশ করুন।

প্রকল্পের পক্ষের বক্তব্য পড়ুনঃ
http://www.bagerhatnews.com/?p=829
Click This Link

প্রকল্পের বিপক্ষের বক্তব্য পড়ুন:
এই প্রকল্প নিয়ে ছোট খাটো PHD করে ফেলেছেন এক ভদ্রলোক। নীচের এই লিঙ্কে দেখুন -
Click This Link

লং মার্চের সমর্থনে লিখেছে-
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৯
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×