বাংলাদেশের রাজনীতিতে, বিশেষ করে নির্বাচনী রাজনীতিতে ভারত বিরোধিতা বরাবরই একটা বড় ইস্যু। কিন্তু ভারতের নির্বাচনে বাংলাদেশ কোনো ইস্যু হয়েছে, এটা আগে তেমন শোনা যায়নি। এবার বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি ও সভাপতি রাজনাথ সিং নির্বাচনী প্রচারণায় বারবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তুলেছেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা বিষয়ই তাঁদের বক্তব্য-বিবৃতিতে এসেছে; তা হলো কথিত অবৈধ অভিবাসন।
অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগি, ব্যবসা-বাণিজ্যে বৈষম্যমূলক বাধা অপসারণ, সমুদ্র ও সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির বিকাশে সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক পরিসরে অভিন্ন আঞ্চলিক স্বার্থরক্ষাসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। কিন্তু এত সব বিষয়ে অস্পষ্টতা রেখে ভারতের একমাত্র বিবেচ্য কথিত অবৈধ অভিবাসন।
বিজেপি আগেরবার ক্ষমতায় থাকার সময়ও কথিত অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিষয়টি সামনে এনেছিল। ভারতের নানা শহর থেকে শত শত বাংলাভাষীকে ধরে ধরে বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টায় সীমান্তে এক অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছিল। তখন বিজেপির জোটসঙ্গী ছিলেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনি অবশ্য এখন বলছেন ‘বাংলাভাষী হলেই তারা বাংলাদেশি নয়।’ গত ২১ এপ্রিল দ্য হিন্দু পত্রিকায় শুভজিৎ বাগচি এক প্রতিবেদনে দেখিয়েছেন গঙ্গার গতিপথ পরিবর্তনের কারণে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে বাস্তুচ্যুত মানুষের ভোটাধিকার কীভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তিনি লিখেছেন যে পশ্চিমবঙ্গের দুটি জেলা মালদহ ও মুর্শিদাবাদের দুই-তৃতীয়াংশ বাংলাভাষী মুসলমান। তারা ভারত বিভাগের আগে থেকেই সেখানে বসবাস করেন, অথচ অনেকেই তাদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করতে চান।
এই কথিত অবৈধ অভিবাসন বন্ধের যুক্তিতেই ভারত বাংলাদেশের সীমান্তে গড়ে তুলেছে বিশ্বের দীর্ঘতম কাঁটাতারের বেড়া। পরিবারের বন্ধন, চাষাবাদের জমি, এমনকি ঘরের উঠানও কাটা পড়েছে এই কাঁটাতারের বেড়ায়। আর তাদের সীমান্তরক্ষীদের গুলি চালানোর কারণে এই সীমান্ত ‘বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সীমান্তের’ খ্যাতি পেয়েছে। বিজেপি নেতারা এখনো দাবি করে চলেছেন যে প্রায় দুই কোটি বাংলাদেশি সেখানে অবৈধভাবে অভিবাসী হয়েছে। ২০০৩ সালেও তারা এই সংখ্যাটিই বলত। কিন্তু, সংখ্যাটি যে বিভ্রান্তিমূলক, সে কথা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদভানিই স্বীকার করে নিয়েছেন। ভারত সরকারের পরিসংখ্যান (সূত্র: সেন্সাসইন্ডিয়া ডট গভ ডট ইন) বলছে, ২০০১ সালে সে দেশে মোট অভিবাসী ছিল ৫১ লাখ, যার মধ্যে বাংলাদেশি ৩০ লাখ, পাকিস্তানি নয় লাখ ও নেপালি পাঁচ লাখ। ভারতীয় আদমশুমারির ওই প্রতিবেদন বলছে, এসব অভিবাসীর দুই-তৃতীয়াংশ কুড়ি বছরের বেশি আগে সম্ভবত বাংলাদেশের জন্মের সময় বা ভারত বিভাজনের সময়ে দেশান্তরিত হয়েছে। ভারতের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোয় যে হারে নেপালি পাচকের দেখা মেলে, তার কিন্তু কোনো পরিসংখ্যান নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। ভারত নেপালের সঙ্গে সীমান্তেও কিন্তু কোনো কাঁটাতারের বেড়া দেয়নি। কিন্তু ভারতে এবারের নির্বাচনে বিজেপির বক্তব্যে মনে হয় যেন সে দেশে অবৈধ অভিবাসনের একমাত্র উৎস বাংলাদেশ।
১৬ মের পর ভারতে অবস্থানরত কথিত সব বাংলাদেশিকে দেশত্যাগের জন্য গাঁট্টিবোঁচকা বেঁধে রাখতে বলা এবং ‘বাংলাদেশি সেটলারদের জায়গা করে দিতে আসামে গন্ডার ধ্বংস করার চক্রান্ত হচ্ছে’ বলে যেসব হুঁশিয়ারি মোদি দিয়েছেন (সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, মার্চ ৩১, ২০১৪), তা দেশটির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক নয়।
Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


