পুলিশের অভিধানিক অর্থ হলো ;
P-Polite (বিনয়ী),
O-Obedient (অনুগত),
L-Loyal (বিশ্বস্ত),
I-Intelligent (বুদ্ধিমান),
C-Courageous (সাহসী),
E-Efficient (দক্ষ)।
ইংরেজী ৬টি অক্ষরের সমন্বয়ে লেখঅ POLICE যার প্রতিটি অক্ষরের একটি করে অর্থ রয়েছে। যার বাংলা করলে দাঁড়ায়-বিনীয়, অনুগত, বিশ্বস্ত, সাহসী, দক্ষ ইত্যাদি। এ বিশেষণগুলো যে কি পরিমান ভারী তা শুধু যারা পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত রয়েছে তারাই অনুধাবন করতে পারে। যার কারণে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে এ বাহিনীকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে। আমিও এ বাহিনীর একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে নিম্নে তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরলাম ।
১। পুলিশই একমাত্র বাহিনী যার প্রতিটি সদস্য ২৪ ঘন্টা কর্তব্যে নিয়োজিত থাকে।
২। এ বাহিনীর সদস্যরা ঈদ, পূজা, কিংবা কোন সামাজিক বা জাতীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ছুটি ভোগ করতে পারেনা। বিভিন্ন ধর্মীয়/সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য কোন ছুটি পায় না। অন্যরা যেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে বাড়ীতে গিয়ে আত্মীয়স্বজনদের সাথে আনন্দ সেয়ারিং করতে পারে। তদস্থলে পুলিশ তাদের নিরাপদে বাড়ীতে গমনাগমনের জন্য অতিরিক্ত ডিউটি করে থাকে।
৩। এ বাহিনীর সদস্যদের নিয়মমাপিক কোন সাপ্তাহিব বাৎসরিক ছুটি নাই। এমনটি বাৎসরিক নির্ধারিত ২০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটিও সকল পুলিশ সদস্য ভোগ করতে পারেনা।
৪। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যাদের থানা পর্যায়ে নেই নিজস্ব অফিস ভবন বা আবাসিক ভবন। নেই পর্যাপ্ত যানবাহন ব্যবস্থা।
৫। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যার প্রতিটি সদস্য সারা বছর দৈনিক ১৮/২০ ঘন্টা ডিউটি করে থাকে।
৬। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যার প্রতিটি সদস্য ঝড়-বৃষ্টি, উত্তপ্ত রৌদ্র, শীত-কুয়াশা, আধার-আলো, রাত-বিরাতে সাবক্ষনিকভাবে ডিউটিতে নিয়োজিত থাকে।
৭। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যার প্রতিটি সদস্য রাত্রে রাষ্ট্রের নাগরিকগণ যাতে নিবিঘ্নে ঘুমাাতে পারে, তাই তারা রাত জেগে পাহারা দিয়ে থাকে।
৮। পুলিশের ৮০/৯০% সদস্য কোন এসি/নন-এসি অফিস নয় বরং রাস্তার কাঁদা ও ধূলাবালুতে ডিউটি করে থাকে।
৯। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যার ৯৫% সদস্যই ধুলা-বালি বাহিত ও শব্দ দোষণ রোগে আক্রান্ত।
১০। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যার সদস্যরা তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে অন্যান্যদের মতো আদর-সোহাগ করার কোন সুযোগ পায় না। ভোরে যখন ডিউটিতে আসে তখন দেখে ছেলে-মেয়ে ঘুমিয়ে আছে এবং গভীর রাত্রে ডিউটি শেষে যখন ক্লান্ত শরীর বাসায় গমন করে তখন ঘুমন্ত অবস্থায়ই ছেলে-মেয়েদেরকে দেখে।
১১। অন্যরা যখন বিভিন্ন পালা-পার্বনে ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়ায় পুলিশ তখন ডিউটিতে নিয়োজিত থাকে। আর ছেলে-মেয়েদেরকে মিথ্যা আশ্বাসের বানী শুনায়।
১২। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যার সদস্যরা তাদের বাবা-মাম/আত্মীয়-স্বজন মারা গেলে তাদেরকে শেষ দেখাও দেখার সুযোগ পায় না।
১৩। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যারা সারাক্ষণ জনতার সাথে থেকে জনতার সমস্যা মোকাবেলা করে।
১৪। পুলিশ এমন্ই এক বাহিনী যার প্রতিটি সদস্য দেশ ও জাতীর জন্য তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের মানষিকতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করে থাকে।
১৫। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যার সদস্যরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে উত্তপ্ত রৌদ্রের মধ্যে হাতে প্লেট নিয়ে দুপুরের খাবার খায়।
১৬। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যার সদস্যরা উত্তপ্ত রৌদ্রের মধ্যে তীব্র যানজট নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব পালন করে। অপর দিকে বাসে/প্রাইভেট কারে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা ব্যক্তিটি যানজট নিয়ন্ত্রণকারী পুলিশ সদস্যটিকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে থাকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যটি সে দিকে ভ্রক্ষেপ না করে তার কর্তব্যের প্রতি অটল থেকে তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
১৭। পুলিশ এমই এক বাহিনী যার সদস্যরা দৃষ্টিহীনকে পথ দেখায়, অনাহারীকে আহারের ব্যবস্থা করে, পথ হারাকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়, প্রতিবন্ধীকে রাস্তা পারাপারে সহায়তা করে। উৎশৃঙ্খল জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্রে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রখার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে।
১৮। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যার সদস্যরা দুই পক্ষের সংর্ঘষ্য ঠেকাতে গিয়ে প্রতি পক্ষের নিক্ষিপ্ত বল্লম নিেরে বুকে ধারণ করে।
১৯। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যে বাহনীর নিকট রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ের নাগরিকের শেষ ভরসারস্থল।
২০। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যারা রাষ্ট্রের জাতীয় বাজেটের কোন ক্ষতি করেনা। বরং তাদের বরাদ্ধকৃত বাজেটে এক তৃতীয়াংশ রাষ্ট্রের কোষাগারে ফেরত দিয়ে থাকে।
২১। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যে বাহিনীর প্রতিটি সদস্য জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে মিছিল-মিটিং,হরতাল-অবরোধ,কিংবা দুর্ধর্ষ অপরাধী ধরতে সার্বক্ষনিকভাবে সজাগ থাকে।
২২। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যার প্রতিটি সদস্য তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সার্বক্ষনিকভাবে জবাবদিহীতার মুখোমুখি হতে হয়।
২৩। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যার প্রতিটি সদস্যকে অন্যায় কাজের জন্য শাস্তির সম্মুখিন হতে হয়।
২৪। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যার প্রতিটি সদস্যকে ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে থেকে জীবন যাপন করতে হয়।
২৫। পুলিশ এমনই এক বাহিনী যার প্রতিটি সদস্যকে নিজের মানবাধিকারের চিন্তা বাদ দিয়ে অন্যের মানবাধিকার বাস্তবায়নে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হয়।
এমনই এক বাহিনীর সদস্য হয়ে আজ আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। তাই এ বাহিনীকে ৩০% এর পরিবর্তে ১০০% ঝুঁকি ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হলে পুলিশের চাকুরী হবে আরো আকর্ষণীয়, সম্মান-জনক এবং সত্যিকার অর্থে সেবামূলক পেশা। কারণ একটি সত্যিকার ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের দর্পন বলা চলে পুলিশ বাহিনীকে। যে রাষ্ট্রের পুলিশ যতবেশী স্বয়ং সম্পূর্ণ সে রাষ্ট্র ততো বেশী উন্নত-যেমন গ্রেট বৃটেন,আমেরকিরা ইত্যাদি। এ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য সীমিত সুযোগ সুবিধার মধ্যে থেকে নিরলস/নিঃস্বার্থ ভাবে দেশের সেবা করে যাচ্ছে। অসৎ দু/চারজন পুলিশ সদস্যের জন্য পুরা পুলিশ বাহিনী কোন ভাবেই দায়ী হতে পারেনা। কারণ বাংলাদেশ পুলিশে সৎ/যোগ্য পুলিশের সংখ্যাই সবচাইতে বেশী। তাই আমি আমাদের দেশের শিখিত তরুন শ্রেণীকে আহবান জানাচ্ছি এ বাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের সেবা করার জন্য । সেদিন বেশী দুরে নয়, যে দিন এ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের জন্যই রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি নাগরিক গর্ববোধ করবে।
আসুন দেশকে ভালবাসি, দেশের মানুষকে ভালবাভি। আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের নিজ-নিজ অবস্থানে থেকে দেশের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করি এবং জানান দেই যে, আমি বাঙ্গালী, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার অহংকার I LOVE YOU BANGLADESH.
--বাংলাদেশ পুলিশ জিন্দাবাদ....।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২০