somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীনতা যুদ্ধ ও আজকের বাংলাদেশ : : ০১

২৪ শে জুলাই, ২০০৮ রাত ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলার উদ্ভব অনেক আগে থেকেই । বাংলার চিরসবুজ সৌর্ন্দর্য সব সময় ছিল আকর্ষনীয় । অনেক আগে থেকেই বাংলার ধনসম্পদ ও প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন ব্যবসা করার উদ্দেশ্য এখানে আসে এবং কিছুদিন থাকার পরে তারা বসতি গেড়ে এ বাংলাকে শাসন করে মূলত এখান থেকে সম্পদ শোষন করতে চাইত । এভাবে বাংলায় বিভিন্ন জাতির আগমন ঘটৈ আর বিভিন্ন ভাষার উৎপত্তি ঘটে । আর তখন বাংলার মানুষ ছিল খুব সুখে-শানি-তে । লোকজনের ছিল গোয়ালভরা গরু ,ডোলভরা ধান ,আর পুকুরভরা মাছ । ফলে তাদের ভাষার মাধ্যম ছিল বাংলা । তবে বাংলা ভাষার জন্ম প্রায় এক হাজার বছর আগে। এক বিরাট জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষা ছিল বাংলা। বাংলার ছিল নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। তাছাড়া ছিল লোকগাথা, গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও ছনার বচন। বিশেষ করে এই পূর্ব বাংলা (বাংলাদেশ) ও পশ্চিম বাংলার (কলকাতা) মানুষের মুখের ভাষা ছিল বাংলা। এই উপমহাদেশের মানুষজন বহুকাল আগে থেকেই বিশ্বের অন্যান্য জাতি দ্বারা শাসিত ও নির্যাতিত হয়ে আসছিল। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর থেকে ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশে শাসন শুরু করে। তারা এখানকার মানুষদের সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিল। প্রায় দু’শ বছর ইংরেজদের অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে এখানকার মানুষজন তাদের সহায়-সম্বল ও জীবন রক্ষার তাগিদে এক বিশাল আন্দোলন গড়ে তোলে। এ সময় পূর্ব বাংলায় যারা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের মধ্যে হাজী শরীয়ত উল্লাহ, তিতুমীর ও সূর্যসেন, এই তিনজনকে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ইংরেজ সরকার ‘ডাকাত’ নামে আখ্যায়িত করেছিল। মূলতঃ এই তিনজনই পরবর্তীতে পাকিস-ানীদের বিরূদ্ধে জাতির জেগে উঠার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল এবং শেষে দেশের স্বাধীনতায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিল। অবশেষে এই উপমহাদেশের মানুষদের আন্দোলনের চাপে ইংরেজরা এই উপমহাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস'তি নেয়। ঠিক তখন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ’দ্বিজাতি’ তত্ত্বের প্রবর্তক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ইংরেজদের কাছে একটি প্রস-াব রাখেন। প্রস-াবটি ছিল, মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলো ‘পাকিস-ান’ ও হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলো ‘ভারত’ এই দুটি রাষ্ট্রে বিভক্তকরন। ফলে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় ভারত ও পাকিস-ান নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র। কিন' বাংলা ভাষায় কথা বলা এক বিরাট জনগোষ্ঠী হিন্দুশাসিত ও হিন্দু ধর্মের অনুসারী হওয়ায় তারা কলকাতায় থেকে যায় এবং ভারতের অধীনস- হয়। যে অংশ আগে পূর্ব বাংলা নামে পরিচিত ছিল তা পরে পূর্ব পাকিস-ান হয়ে যায় এবং পাকিস-ানের অধীনস- হয়। অনেক আগে থেকেই পাকিস-ানীরা আসলে জানত যে পূর্ব পাকিস-ান নিজেই একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠন করবে।

ঐ সময় পশ্চিম পাকিস-ানের লোকজন ছিল অত্যন- চতুর ও লোভী। তারা পূর্ব পাকিস-ান থেকে সব সম্পদ লুন্ঠন করে এই পূর্ব পাকিস-ানের মেরুদন্ড চিরদিনের জন্য ভেঙ্গে দিতে চেয়েছিল।

কোনো জাতির রাজনৈতিক চেতনা এবং জাতীয়তাবোধ সমূলে ধ্বংস করতে সর্বাগ্রে সে জাতির ভাষা, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির উপর আঘাত হানতে হয়। পাকিস-ান সৃষ্টির পর পাকিস-ানী শাসকগোষ্ঠী একই উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিতভাবে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উপর আঘাত হানে। ১৯৪৭ সালের পর তারা এই পূর্ব পাকিস-ানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাসেম্বলীতে জোর করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে এক অর্থহীন ঊর্দু জাতীয় সংগীত পরিবেশন করত। তার কিছু অংশ হলঃ

পাক সার জমিন সাদ বাদ
কিছোয়ারে হাছিন সাদ বাদ
তুনিশানে আযমে আলী শান
আর যে পাকিস-ান।
মারকাযে একিন সাদ বাদ।

এই জাতীয় সংগীত পূর্ব পাকিস-ানের মানুষেরা হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করতে পারে নি। ফলে বাঙালীরা ধীরে ধীরে এক অর্থহীন জাতীয় সংগীত গাওয়া থেকে মুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করে। দীর্ঘ ৫ বৎসর আন্দোলনের পর পূর্ব পাকিস-ান ও পশ্চিম পাকিস-ানের নেতারা উভয়ে মিলে এটার পাশাপাশি আরেকটি জাতীয় সংগীত গাওয়ার কথা বিবেচনা করে।
তার কিছু অংশঃ
পাকিস-ান জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ
পূর্ব বাংলার শ্যামলিমায়
পঞ্চ নদীর তীরে অরুনিমায়
ধূসর সিন্ধু মরু সাহারায়
ঝান্ডা জাগারে আজাদ।
পাকিস-ান জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ।


মূলত ভাষা আন্দোলনের পরেই একসংগে দুটি জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হত। এটাও পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। আর কোনো দেশেই মৌলিক অধিকার ভাষার উপর এভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয় নি, যা পাকিস-ানী শাসকগোষ্ঠী করেছিল। প্রায় ১২০০ মাইল ব্যবধানে দুটি অংশ নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না কিন' পাকিস-ানীরা শুধুমাত্র জোর করে এই পূর্ব পাকিস-ানের সাথে রাষ্ট্র গঠন করে শাসনকার্য চালিয়ে যেতে চেয়েছিল।


আজ যে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় তা অনেক আগেই ইংরেজ শাসনামলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেছিলেন। বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর চাপে তা গাওয়ার সাহস কারো হত না। কিন' স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র মুক্তিযুদ্ধের সময় এটিকে বাঙালীরা এক বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল। এ বেতার কেন্দ্র থেকেই মানুষ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর ডাক শুনতে পায়। যুদ্ধ শুরু হলে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিদিন রণাঙ্গনের খবরাখবর জানানো ছাড়াও দেশাত্ববোধক গান, নাটক, কবিতা ও সর্বপ্রথম ’আমার সোনার বাংলা’ জাতীয় সংগীত প্রচারের মাধ্যমে বাংলার জনগণকে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে রেখেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় রেডিওতে খবর শোনা ছিল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তবুও বাঙালিরা ঘরের বাইরে পাহারাদার রেখে বাড়ির ভিতরে খুব আসে- আসে- খবর শুনত। তবুও বাঙালিরা থেমে থাকে নি।
------------------------------------------------------------------------------
(চলবে)
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×