(১) স্বাধীনতা যুদ্ধে জয় লাভ করার পর যুদ্ধ বিধস- বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন করে দেশ গঠনের জন্য বাংলার মানুষ সবাই মিলে এক নতুন সরকার গঠন করে ।সবাই মিলে কাজ শুরু করার উদ্দীপনা গ্রহন করে , কিন' যুদ্ধের সময় ব্যাপক ধ্বংসলীলা,প্রাণহানি,লুটতরাজ ও লোকজনের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার কারনে দেশে ১৯৭২-৭৩ সালে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় ।এ সময় হাজার হাজার লোক খাদ্যর অভাবে মারা যায় । এ জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হয় নি ।
(২) ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের মানুষেরা ভোট দিয়ে বঙ্গবনধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে । কিন' ১৯৭৫ সালে এই বাংলাদেশের কিছু নরপশু,লোভী ও স্বার্থান্বেষী লোক দেশের ক্ষমতা অর্জন ও নিজেদের মান সম্মান বাঁচানোর তাগিদে তারা বাংলার প্রাণপ্রিয় নেতাকে সপরিবারে নিহত করে । ফলে দেশে একটি বিরাট পট পরিবর্তন হয়ে যায় ।ফলে নেতৃত্বের অভাবে সমগ্র দেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে অনেক পিছিয়ে যায় ।
(৩) ১৯৮২ সাল থেকে দেশে বিকেন্দ্রীকরনের একটি উদ্যোগ নেওয়া হয় ।যদিও রাষ্ট্রের ক্ষমতায় তখন এরশাদ সাহেব ছিলেন ।সে সময় ৪৬০টি উপজেলা ,৬০টি জেলা ও ৪টি বিভাগে হাইকোর্ট এবং সরকারি আবাসিক কোয়াটার প্রথম তেরি করা হয় ।প্রতিটি উপজেলায় কোর্ট স'াপিত হয় ,কিন' অপ্রত্যাশিতভাবে তারপরে দেশের ক্ষমতায় আসে বি এন পি ও আওয়ামী লীগ । তারা কেউ কিন' এই বিকেন্দ্রীকরন ব্যবস'াকে পাত্তা দেয় নি ।এটা কিন' আমাদের এই দুই বড় পার্টির একটা রাজনেতিক দেউলিপনার বড় প্রমান । এটা যে আমাদের রাষ্টীয় ব্যবস'ার কত বড় অদক্ষতা তা আমাদের দুই পলিটিক্যাল পার্টি গত ১৫ বছর ধরে সমাধান করে যায়নি ।তারা শুধু কিভাবে ক্ষমতাতে থাকা যায় তার চেষ্টা করেছে এবং সেইভাবে এগিয়েছে । এই বিকেন্দ্রীকরণ কত বড় একটা সুফল ছিল, পুরো দেশ, পুরো জাতি আজকে ২৫ বছর ধরে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
(৪) এনার্জি পলিসির মধ্যে রয়েছে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস ও বিদ্যুৎ । সেই সাথে অন্যান্য যেসব খনিজ সম্পদ আছে সেগুলো হল :কয়লা ,বিজয়পুরের হোয়াইট ক্লে ,চৌদ্দগ্রামে হেয়াইট ক্লে যা সিরামিকের একটি বড় উপাদান ।এছাড়া আরও মিনারেলস আছে, কিন' এগুলোকে যথাযথ ভাবে কাজে লাগানোর জন্য কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি । তার মুল কারন এর জন্য যে সব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার সেগুলো গড়ে তোলা হয় নি ।কারন এসব সিদ্বানে- সব কিছুই এমপি বা মন্ত্রীদের যোগ্যতা নেই এবং তাদের এই বিষয়ে ভাল জ্ঞানও নেই ।যদিও তারা রাজনেতিক নেতা এবং পার্লামেন্টে আসবেন বা যারা প্রধানমন্ত্রী হবেন তারাই দেশ চালাবেন । কিন' তাদেরও তো নির্ভর করতে হবে উপযুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার উপর । যে কোন পরিকল্পনা বা কোন কর্মসুচি নেওয়ার জন্য যে ধরনের দক্ষ জনবল থাকা দরকার বা এসব প্রতিষ্ঠানে এসব কাজ করতে যে উপযুক্ত লোক থাকার প্রয়োজন তা কোন সময়ই করা হয় নি । আমাদের তেল এবং গ্যাস সেক্টরে যোগ্যতাসম্পন্ন লোক পাওয়া যায় না। কিন' এই বাংলাদেশের চাকুরীজীবী লোকেরাই আমেরিকা ও কানাডায় তেল এবং গ্যাস সেক্টরে খুব দক্ষতার সাথে কাজ করছে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস বেশির ভাগই দেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট ও কুমিল্লায়। তবে স্বাভাবিকভাবেই প্রাকৃতিক গ্যাস দেশের পশ্চিমাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া দরকার। অবশ্য পশ্চিমাঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার ১০ বছর আগেও বড় বাধা ছিল যমুনা নদী পার হওয়া। কিন' নদী পার হওয়া তো সম্ভব। সবাই জানে গ্যাস পাইপলাইন সমুদ্রের তলা দিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের তলা দিয়ে ইউরোপ মহাদেশে গেছে। এমনকি ইরান থেকে সমুদ্রের তলা দিয়ে ভারতে আনার কথা বলা হচ্ছে। এভাবে বহু দেশে সমুদ্রের তলা দিয়ে গ্যাস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের এখানে তো যমুনা নদী পার হওয়া কিছুই না। বিদ্যুৎ সেক্টরে একটা নতুন দেশ হিসেবে যে অগ্রগতি হওয়া উচিত ছিল সেভাবে এ সেক্টরকে নিয়ে চিন-া করা হয় নি ।কেননা একটা স্বাধীন দেশের সকল মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস'ার উন্নয়নকল্পে যে ধরনের জাতীয় পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হয় নি ।কারন ,শিক্ষা ,স্বাস'্য সব খাতে উন্নয়ন ছাড়াও একটা দেশ তখনই উন্নতি লাভ করবে যখন তার মাথাপিছু শক্তি খরচের পরিমান বেশি হবে ।আমাদের অর্থনৈতিক অবস'াও আমরা প্রায় ২০ বছর ধরে ৩০০-৪০০ ডলারের মধ্যে । যেখানে শ্রীলংকায় এতবড় গৃহযুদ্বের মধ্যেও তাদের ৮০০ ডলার মাথাপিছু আয়। ভারতে প্রায় ৭০০ ডলার ও পাকিস-ানে ৭০০ ডলার ।আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলো যেখানে তাদের মাথাপিছু শক্তি খরচের পরিমান প্রায় ৫০০০, সেখানে আমাদের ১৫০ ।ভারত ,শ্রীলংকা ও পাকিস-ানে সেখানে তাদের মাথাপিছু বিদ্যুৎ খরচ ১০০০ কিলোওয়াটেরও বেশি, সেখানে আমাদের ২০০কিলোওয়াট । করে দেশটাকে দখল করছে । যদিও আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের একটা বিরাট ভান্ডার আছে , তা হল প্রাকৃতিক গ্যাস । আমাদের এই প্রাকৃতিক গ্যাসটাকে ভালভাবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিতে পারি নি ।এই গ্যাসের ভিতরে থাকে একটি ওয়েট কম্পোনেট নামক কনা যা অত্যন- দামি । শুধুমাত্র দক্ষতা সম্পন্ন লোক এই সেক্টর গুলোতে দায়িত্বে না থাকার কারনে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ওয়েট কম্পোনেন্ট গুলোকে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে । যদি দক্ষ ও সৎ ব্যাক্তি এই দায়িত্বে থাকত তাহলে এই বিশাল ক্ষতি কখনও হতো না ।তাছাড়া দেশের বেকারত্ব বেড়েই চলেছে এবং সঙ্গে সঙ্গে শিল্প কলকারখানা গুলো বন্ধ হতে শুরু করেছে । যদি খামখেয়ালি করে লোকজনের বাড়িতে বাড়িতে গ্যাস লাইনের সংযোগ না দিয়ে বিদ্যুৎ কারখানা , শিল্প কারখান তে সংযোগ দেয়া হত । তাহলেও বিরাট অর্থনৈতিক অগ্রগতি লাভ করা যেত । ইউরোপ-আমেরিকা ও সৌদিআরবে প্রচুর গ্যাস থাকা সত্বেও তারা বাড়ি বাড়ি গ্যাসের সংযোগ না দিয়ে শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে , সিলিন্ডারে করে লোকজনকে গ্যাস সরবরাহ করে । গ্যাস মিটারিং ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে গ্যাসের অপচয় রোধ করতে পারি । আমাদের দেশে গ্যাস ও অয়েল সেক্টরের দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা প্রত্যেকেই যথেষ্ট অদক্ষ । আর এ কারনেই তো আজ দেশের এই দুরঅবস'া ।ভারতে কিন' সেই নেহরুর আমল থেকে সব দক্ষ লোককে বিভিন্ন সেক্টরের দায়িত্বে রাখা হয়েছে , ফলে তারা আজ অনেক উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে । ভারতের আণবিক শক্তিতে প্রথমেই নেহরু ভারতের সবচেয়ে খ্যাতনামা বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাইকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ভারতের পরিকল্পণাই ছিল আণবিক সম্পদের দিক দিয়ে ভারতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। মহাকাশ থেকে শুরু করে পারমানবিক বোমা ,ক্রুজ মিশাইল,পাতাল ট্রেন ,সুপার কম্পিউটার প্রভৃতি ক্ষেত্রে তারা আনর্তজাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে ।অথচ আমরা এখনোও কিছুই করতে পারি নি ।
----------------------------------------------
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১২:৪৭