somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুরু হলো পথ চলা

০৫ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৫:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শরতের শিশির ভেজা আজকের সকালের আকাশও মেঘহীন। ম্যাপল ও পাইন গাছের ফাঁক দিয়ে ঝকঝকে উত্তাপহীন এক ফালি সরু রোদ ওর চোখমুখে এসে চিকচিক করছে। ঠিক সময়ে আসা স্কুল বাসের সামনে ওর সমবয়সী অনেকের সাথেই পরিচয় করিয়ে দিলাম। শক্ত করে ধরে রাখা কচি হাতটা ছেড়ে দিতেই বুকের ভেতর কোথায় যেন খচখচ করে উঠল। ওর মা এ পর্যন্ত তিনবার চোখ মুছেছে। ভেতর থেকে বলা হল জুনিয়র কিন্ডার গার্টেন স্টুডেন্টরা আগে উঠবে। লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখে সাদা মহিলা ড্রাইভারকে বললাম, ‘হার নেইম ইজ সামারাহ্, শি ইজ এ ব্র্যান্ড নিউ জে.কে স্টুডেন্ট’।

হাঁটি হাঁটি পা পা করে সামারাহ্ বেড়ে উঠছে। আজ ওর জীবনের প্রথম শিক্ষালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু। সপ্তাহ খানেক ধরে উত্তেজনায় ছটফট করছে সে। যেদিন স্কুলব্যাগ কিনে দিলাম এক মূহুর্তের জন্যও কাঁধ থেকে সরেনি। আয়নার সামনে গিয়ে বারেবারে দাঁড়ায়। এপাশ ওপাশ ঘুরে ফিরে দেখে। অনাবিল আনন্দ ও উদ্দীপনায় রাতে ঘুমাতেও পারেনি। ব্যাগের ভিতর কি কি ভরবে, পানির বোতলটা কোন পাশে থাকবে, খাবারইবা কিভাবে রাখবে, এই ব্যাগের সাথে ক্লাসমেটের আর কারো ব্যাগ যদি মিলে যায় তবে চিনবে কেমনে, টিচারইবা ব্যাগটি দেখে কি বলবে, এরকম কত যে নিষ্পাপ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছি আমি! বিরক্ত হইনা। আমার অফিস-ব্যাগ যেইখানে রাখি ঠিক তার পাশেই ওর স্কুল-ব্যাগটা রেখে স্থির নয়নে অবলোকন করে বারবার।

ক’দিন আগে বাবা ও ছেলেকে নিয়ে চমতকার একটা এটাচমেন্ট ই-মেইলে কে যেন পাঠিয়েছে।

বারান্দার রেলিং-এর উপরে একটি কাককে দেখিয়ে বাবা তাঁর তরুন ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘মাই ডিয়ার সান, বলতো ওটা কি?’
ছেলের সহজ উত্তর, ‘কাক, বাবা’
একই প্রশ্ন আবারো, ‘প্রিয় বত্‌স, ওইটার নাম কি?’
‘বললাম তো কাক, বাবা।‘
বাবা আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘কি নাম পাখিটার?’
‘তুমি কি শুনছো না? বললাম তো কাক’
আবারো, ‘পাখিটার নাম কি যেন?’
পিতার প্রতি ছেলের এবার বিরুক্তি চরমে। বলে, ‘তোমাকে আমি আর কতবার বলব, এটা কাক, এটা কাক, কাক, কাক, কাক, কা...ক, কা....ক, কা........’

বাবা এবার ছেলেকে ডাকেন। বেডরুমে আদরের ছেলেকে নিয়ে গিয়ে তাঁর পুরোনো দিনের ডায়েরীর পাতা উল্টিয়ে দেখান। ওর বয়স যখন তিন বছর, বারান্দার ঠিক সেই স্থানটিতেই একটি কাক বসেছিল।

ছেলে আজকের মতই পিতার কাছে জানতে চেয়েছিল ‘ওইটা কি, বাবা?’
‘কাক, মাই ডিয়ার সান’, বাবার উত্তর।
ছেলে বাবাকে বারবার একই প্রশ্ন করে চলে। একবার, দুইবার, তিনবার নয়, ছাব্বিশ বার। বিরুক্তিহীনভাবে বাবা
প্রতিবারই ছেলের প্রশ্নের উত্তর অবলীলায় সঠিকটাই দিয়েছেন। শুধু তাই নয় প্রতিবারই ছেলেকে কোলে তুলে গালে একটি করে চুমোও।
বাবা আজ ডায়েরীতে লাল কালি দিয়ে বড় বড় করে লিখলেন, ‘এই রিটায়ার্ড বয়সে বিশ বছরের ছেলে তাঁর সেই প্রশ্নের উত্তর তিনবারও দিতে পারল না’।

আমি সামারাহ্‌র দিকে তাকিয়ে ওর মত করে ভাবার চেষ্টা করি। চুপচাপ ওর কান্ডগুলো পরখ করি।
‘বাবা, আমি কিন্তু অনেক বড় হয়ে গেছি’।
জিজ্ঞেস করি, ‘কত বড় হয়েছো, মা? আমার সমান?’
‘না, তোমার চেয়ে একটু ছোট। আমি তো আর বেবি না, আমি হলাম বিগ গার্ল, সাওদা হল বেবি’। ঈশারা করে ওর এক বছর বয়সের বোন সাওদাকে দেখায়।

স্কুল বাসে চড়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কল্পনা করছে কার্টুন বোঝার পর থেকেই। ‘আমি কিন্তু তোমার গাড়ীতে চড়ে যাব না। বাসার সামনে যে স্কুলবাসটা আসে, ওইটাতেই যাব। আর হ্যাঁ, বাসের ভিতর থেকে তোমাদেরকে ‘বাই’ দিব। তোমরা কিন্তু আমার সাথে আসবা না। ঠিক আছে।‘
আমি বলি, ‘ঠিক আছে। তুমি তো আমার বড় মেয়ে!’
‘আর শোনো, তোমরা আমার জন্য ওয়েট করবা। স্কুল থেকে যখন ফিরব, তখনি একসাথে বাসায় আসব, তার আগে না কিন্তু, ও.কে? আচ্ছা, আমার জন্য তোমাদের মন খারাপ হবে না? সাওদা তো আমাকে মিস করবে’।পাকামো করে আরো বলে, ‘কিন্তু কি আর করা! আমাকে তো স্কুলে যেতেই হবে। তাই না?’

এদেশে চার বছর বয়স থেকে জুনিয়র কিন্ডার গার্টেন স্কুলে যাওয়ার নিয়ম। বছরে মোট দুইটি স্কুল সেশন। শরত (Fall) শুরু হয় সেপ্টেম্বর থেকে আর শীতেরটা (Winter) শুরু জানুয়ারী । গ্রীষ্মে (Summer) না গেলেও চলে। জুনিয়র কিন্ডার গার্টেনে নতুনদের ভর্তি হয় সেপ্টেম্বরের শুরুতে। জন্ম তারিখ যদি সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের শেষদিনেরও কোন এক দিনের মধ্যে পরে, তবুও সে ওই সেশন ধরতে পারবে, যদিও তার বয়স চার বছরের কম। মাত্র ছয়দিনের জন্য সামারাহ্কে পরের সেশন থেকে যেতে হচ্ছে। অবশ্যি পাশের ইসলামিক সেন্টারে আমরা ওকে আগেই দিয়েছি। আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত প্রায় দুই ঘন্টা করে সপ্তাহে চারদিন আরবী শেখে। বাংলাদেশী একজন ছাত্রও নাই, উপমহাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের শিশুরাই ওর ফ্রেন্ড। প্রথম দিকে আশপাশে থাকতে চাইতাম।‘পার্সোনালিটি’তে সম্ভবত খুব আঘাত লাগত। ‘বড়’ দাবী করে আমার প্রস্থান নিশ্চিত হয়ে তবেই ও ওস্তাদের কাছে ফিরত।

আমি আমার শৈশবে সাড়ে চার বছর বয়সের জীবনের স্মৃতি হাতড়াতে থাকি। এমন অনুভূতি কি হয়েছিল? ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের সিটিজেন মেয়ের তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক বাবার জীবনে এরকম অনুভূতি কি হয়েছিল? না হয়নি। গ্রামে আমাদের বাড়ীর গা লাগানো মাদ্রাসা। মামা-খালাদের সাথে কবে যে খেজুর পাতার উপর বসে ছাত্রজীবন শুরু হয়ে গিয়েছিল মনেই নেই। মাদ্রাসা থেকে চার বছর পর পালিয়ে গেলাম প্রাইমারী স্কুলে। উদ্দেশ্য প্রাইমারী স্কুলের ফার্স্ট বয়কে টপকানো। সহপাঠিদের টিটকারী ‘মাদ্রাসায় ফার্স্ট হওয়া খুবই সহজ, প্রাইমারীতে গেলে পারবা না’! সেই যে শুরু হয়ে গেল আর থামেনি পথ চলা। ব্যাক-প্যাক, বাথরুম ট্রেইনিং, লাঞ্চ-ব্যাগ, হাইজেনিং ট্রেইনিং সেগুলো স্বপ্নেও ছিলনা।

স্কুল অফিসিয়ালি শুরুর আগে কর্তৃপক্ষ ছাত্র/ছাত্রী সবাইদের একদিন ডেমো দেন।আমরা প্যারেন্টরা ক্লাস রুমে বসে দেখলাম ক্লাস টিচার কিভাবে পড়াচ্ছেন। কাঁচি দিয়ে পেপার কাটা, ক্রেইয়ন দিয়ে ছবি আঁকা, গ্লু দিয়ে কাগজ লাগানো, টবে সানফ্লাওয়ারের বীজ রোপন ইত্যাদি। কার্টুন ও গানের তালে তালে বর্ণমালার পরিচয় দিতে গিয়ে দেখলাম ভীষন মনোযোগী তরুনী টিচার যেন স্টুডেন্টদের চেয়েই বেশী নাচছেন।

আরেকদিন ছিল ‘প্যারেন্ট-টিচার-স্টুডেন্ট’ সিটিং। এটা ঠিক ক্লাস শুরুর এক সপ্তাহ আগে। মেয়েকে নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন ও পরামর্শগুলোই মূলতঃ টিচারের সাথে শেয়ার করা।তিনি আমাদেরকে অভয় দিয়ে বললেন, ‘সিনিয়র স্টুডেন্টরা ভেরী কো-অপারেটিভ। তারা ওদের খুব হেল্প করবে। এক একজনকে বাস থেকে সোজা নিয়ে আসবে ক্লাস রুমে। এভাবেই তাদের কাজ ভাগ করে দেয়া হয়েছে। চিন্তা করোনা’। সামারাহ্র ক্লাস টিচার মিস পিকুলা লাঞ্চ ব্যাগ, ব্যাক-প্যাক, এক্সট্রা প্যান্ট-শার্ট, জুতা (দূর্ঘটনা সামাল দেয়ার জন্য স্কুল থেকে পরামর্শ দেয়া হয় কাছে রাখতে) ইত্যাদি রাখার জন্য প্রত্যেক ছাত্রদের জন্য বরাদ্ধকৃত ক্যাবি আমাদের দেখালেন । তিনি একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে লিখতে বললেন মেয়ের যেসব দিকটা আমাদের ভাল লাগে সেসব। কাগজটা হাতে নিয়ে একটু ভাবি। এমন লোককেও জানি প্রথমদিনেই হেড টিচারের কঞ্চির কষাঘাত আমাদের গ্রামের অনেককে আর স্কুলমূখী করতে পারেনি। সকাল ৯ টা থেকে একটানা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ভিন্ন দেশের সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশে সামারাহর প্রথম জীবনে ছন্দময়তা আসবে তো? অস্থির হয়ে যাই।

কানাডার স্কুলিং সিস্টেম বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। প্রত্যেক বোর্ড যে একই নিয়ম মেনে চলবে তা কিন্তু নয়। অনেক জায়গায় জে.কে হাফ-ডে’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে। কিন্তু আমাদের অঞ্চলে ফুল-ডে। পার্থক্য হল প্রত্যেক দিনের বদলে ফুল ডে ওয়ালাদের ক্লাস হয় সপ্তাহে মাত্র দুইদিন প্লাস দুই সপ্তাহে এক শুক্রবার।

আজ ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮। সামারাহ্‌র স্কুলের যাওয়ার চুড়ান্ত দিন। আগের রাতেই ওর মা যত্নসহকারে মোটামুটি প্রস্তুতিপর্ব সেরে রেখেছে। এখন শুধু স্যান্ডউইচ বানানো বাকি। খুব ভোরে ঘুম থেকে ডেকে উঠালাম। মনে হয় রেডী হয়েই ছিল। ধরমর করে উঠে বলে ‘আজ আমার স্কুল?’ বলি, ‘হ্যাঁ, আজ তোমার স্কুল’। ‘আমি বাসে করে যাব না?’ আমি বলি, ‘হ্যাঁ। তুমি বাসেই যাবা, মা।‘

আজ সামারাহ্ স্কুলে যাবে।
মনে পড়ছে ২০০৪ সালের জানুয়ারির ৫ তারিখ। প্রচন্ড শীত, হিমাঙ্কের নীচে তাপমাত্রা। মিশিগানের আকাশ পরিস্কার। আগের রাতে মুষলধারায় বরফ পড়েছে। ফজরের নামাজ শেষে বাম দিকে সালাম ফেরাতেই ফোন রিং। এমন অসময়ে ফোন? ধরতেই ওপার থেকে হেনরীফোর্ড ক্লিনিকের মিডওয়াইফ রোস্কির কন্ঠ। ‘তোমার স্ত্রীকে এখনই নিয়ে আসো। আজকেই বেবি আউট করব আমরা।‘

ডিঊ ডেট পার হওয়ার তিনদিন পরও পেইন না উঠায় অনাগত বেবির কোন ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্যই তাদের এই পরিকল্পনা।ওর মা তখনো নামাজ পড়েনি।ওজু করছে। ফোনের কথা কিছুই বলিনা। চুপচাপ বসে থাকি। মিডওয়াইফের পরামর্শ অনুযায়ী আগেই একটা ব্যাগ মোটামুটি গোছানো আছে। নামাজ শেষে বললাম, ‘ব্যাগটা নাও, হাসপাতালে যেতে হবে’। ও চমকে উঠে ভয়ার্ত কন্ঠে বলে, ‘কেন?’

গাড়ীর ইমার্জেন্সী লাইট অন করে ফ্রি ওয়ের পাশ ঘেঁষে বিকল্প পথ ধরে ধীরে ধীরে ড্রাইভ করি। তুষারপাতের দরুন রাস্তাটি বেশ পিচ্ছিল। ছেলেপুলেরা থোকা থোকা সাদা বরফ দিয়ে রাস্তার দু’পাশে কৌতুক করে ‘পোলার বিয়ার’ বানিয়ে রেখেছে। সূর্যের নিস্তেজ ও মায়াবী রোদ বরফকণার উপর আছড়ে পড়ে সকালটাকে বেশ মনোরম সাজে সাজিয়েছে। আর আমি ড্রাইভ করছি নতুন জীবনের সন্ধানে। এক মায়ের পেটফুঁড়ে উতসরিত হবে আরো একটি তাজা প্রাণ! কল্পনার রাজ্যে যেন সাঁতার কাটছি আমি!

প্রায় পনের মিনিট পর ডেট্রোয়েট হেনরীফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হলাম। বাচচা-কাচচা হওয়ার সময় বা পরবর্তী সবচেয়ে দূর্দান্ত নিদ্রাহীন দিন-রাতগুলোতে দেশে যেখানে পুরুষ মানুষদের খবরই থাকেনা, সেখানে পরবাসী মানুষগুলোর প্রতিটা মূহুর্তই যেন কাটে চরম ব্যস্ততা, শঙ্কা ও উদ্বিগ্নতায়।চাইল্ড বার্থ ক্লাসে তাই ইনস্ট্রাক্টররা বলেন, 'প্রেগন্যান্ট শুধু মাম্মি নন, ড্যাড্ডিও'। ‘মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত কথাটা’ কেন যে বলা হয়েছে তার প্রমাণও সহজেই মেলে। সন্তান প্রসববেদনার সাথে দুনিয়ার কোন কষ্টেরই বুঝি তুলনা নেই! আমাদের অনুরোধেই হাসপাতালের ডেলিভারী রুমে সাঁটানো ছিল ‘শুধুমাত্র মেয়েরাই ঢুকতে করতে পারবে’ এই ধরনের একটা সাইনবোর্ড। বয়স্ক এক অভিজ্ঞ সাদা মহিলা ছিলেন ধাত্রী। বললেন এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার বাচচা তাঁর হাত দিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। সাথে ছিলেন এক নার্স। ভয়ংকর এই কষ্টের মুহুর্তে বললাম, ‘এই জন্যই মনে হয় আমাদের নবী বলেছেন, জননীর পায়ের তলায় সন্তানের বেহেশত’। কথাটা শুনে দুইজনই চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘Who is your Prophet?’ নাম বলতেই মিডওয়াইফ বললেন, ‘হি মাস্ট বি এ ওয়াইজ ম্যান’। বিরতিহীন টানা নয় ঘন্টা কষ্ট শেষে ৭ পাউন্ড ৭ আউন্স এবং একুশ ইঞ্চি উচ্চতার সামারাহকে পেলাম বুধবার ৬ই জানুয়ারীর বিকাল চারটা চৌদ্দ মিনিটে।

চোখের সামনে বড় হয়ে স্কুলে যাওয়ার বয়স ওর হয়ে গেল! আজকে অফিসে যাওয়া পিছিয়ে দেই। গতকাল অফিসের সবাই কংগ্রাচুলেশন দিয়েছে। ওর দিকে তাকিয়ে থাকি, মারাত্মক প্যাকড্ সে। পিঠে ‘ব্যাক-প্যাক’, এক হাতে ‘লাঞ্চ ব্যাগ’, অন্য হাতে ইমার্জেন্সী কাপড়চোপড় ও স্কেটস্সহ আরো একটি। সামারাহকে নিয়ে হলুদ রঙের স্কুলবাসের কাছে আসি। কানাডা আসা চার বছর হয়ে গেলেও কোন ধরনের বাস বা ট্রেনে উঠার অভিজ্ঞতা এখনো হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ও অভিজ্ঞের মত নিশ্চিন্তে অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সাথে বাসের কোথায় গিয়ে যেন বসল! দেখতে পাচ্ছিলাম না। উলটো দিকে গিয়ে দেখি জানালার পাশে বসে হাসছে। আমি হাত উঁচু করে উড়ন্ত আদর জানিয়ে দিয়ে বলি‘আল্লাহ হাফেয’। আমাকে 'বা....ই (b....y....e)’ বলে ফেরত দেয়, যার জন্যই মূলতঃ অপেক্ষা করেছিল প্রায় ছয়মাস!

একসময় ২২১ নাম্বারের স্কুলবাসটি ছেড়ে দেয়।ওর অন্তবিহীন পথের এই মুহুর্তটা সূচনা ভেবে কিছু সময়ের জন্য কেন যেন আনমনা হয়ে যাই! দৃষ্টির সীমানার বাইরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি কটকটে হলুদ রঙের চলন্ত বাসটির দিকে তাকিয়ে থাকি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৮:৫৫
১৩টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×