somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী নির্যাতন, আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা

২৮ শে জুলাই, ২০১৯ ভোর ৫:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে সুরাইয়া নেওয়াজ লবণ্যে নামের সতেরো বছরের এক অন্ত;সত্তা কিশোরী স্বামী, শাশুড়ির অত্যাচার সইতে না পেরে শরীরে কেরোসিন ঢেলেছে । প্রায় নব্বই ভাগ পোড়া শরীর নিয়ে এক কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার কয়েক ঘন্টার মাথায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন প্লাষ্টিক সাজার্রি ইনষ্টিটিউটে লাইফ সার্পোটে চিকৎসাধীন অবস্থায় মেয়েটি বিদায় নিয়েছে পৃথিবী থেকে। চরম মর্মান্তিক দু:খজনক এ খবরটি গতকাল বাংলাদেশের প্রতিটি গণমাধ্যেমে প্রকাশিত হবার পর আমার মতো অনেকেই মর্মাহত হয়েছেন এবং ঘৃণা প্রকাশ করেছেণ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

২০১০ সালের ৫ অক্টোবর জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিল ২০১০ পাস হওয়ার পর আমারা অনেকেই ভেবেছিলেন পারিবারিক সহিংসতা এবং নারী নির্যাতন কিছুটা হলেও লাঘব হবে। সত্যি বলতে কি উক্ত আইন পাস হবার পর নারী নির্যাতন রোধে তেমন কোন ইতিবাচক ফলাফল আসেনি। যার প্রমাণ বিগত দিনে ঘটে যাওয়া অসংখ্য নারী নির্যাতন, হত্যা এবং আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলার ঘটনাগুলো।

বাংলাদেশের আনাচে কানাচে দৃশ্যের আড়ালে প্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। পারিবারিক কলহ এবং বখাটেদের অপমান সহ্য করতে না পেরে যারা আত্মহত্যা পথ বেছে নিয়েছেন কিংবা সামাজিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন চাপে যারা অত্যাচার দিনের পর দিন যারা সয়ে যাচ্ছেন তাদের সবার খবরা খবর কি গণমাধ্যেমে আসে, আসে না। ভাগ্যগুনে হাতেগুনা যাদের খবরাখবর গনমাধ্যেমের সূত্রে আমাদের কাছে আসে তারা কি সবাই ন্যায্য বিচার পান? অনেকে পান না। উঁচু মহলের অদৃশ্য চাপে অধিকাংশ সময় স্তিমিত হয়ে যায় প্রতিবাদী কন্ঠগুলো, নিষ্প্রাণ হয়ে যায় আন্দোলন গতিপথ। পার পেয়ে যায় দোষী ব্যক্তিরা এবং সমাজে আবারো জন্ম নেয় নতুন কোন এক ঘটনা।


প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশের নারীরা নিজ দেশে কতটুকু নিরাপদভাবে চলাফেরা করতে পারছেন? বিগত দিনে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্কিত ঘটনাগুলো কেন জানি জানান দিচ্ছে বাংলাদেশে রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ- মাদ্রাসা বা কর্মস্থানে নারীরা শতভাগ নিরাপদে নেই। সকাল বেলা যে মেয়ে এক মুঠো স্বপ্ন বুকে ধারণ করে বই, খাতা হাতে স্কুলে যায় বিকেলে সে যে বাড়ি ফিরে আসবে তার কোন গ্যারান্টি এখন আর কেউ দিতে পারে না। কিছুদিন পূর্বে এক রিপোর্টে দেখা গেছে গত এক বছরের মধ্যে ইভটিজিং বা উত্তক্ত্য করার ঘটনায় সারা বাংলাদেশে প্রায় ১৫০টি মামলা হয়েছে এবং সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে ৩৭৭টি। এক হাজার দুই শত জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়া হলেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে ৫২০ জনকে। এ ছাড়া ও পুলিশ কর্মকতারা স্বীকার করেছেন, বখাটেদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিলেও তারা থামছে না। যারা উত্ত্যক্ত হয় তারা সহজে অভিযোগ জানাতে আসে না যার কারণে বখাটেরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

নারী নির্যাতন, নিপীড়ন এবং স্কুল ছাত্রীদের প্রতি বখাটেদের উৎপাত বাংলাদেশে নতুন নয়। বিভিন্ন অঞ্চলে বখাটেদের অত্যাচারে শুনেছি বিভিণ্ন দারিদ্র পারিবারের মেয়েরা রীতিমতো স্কুলে যেতে পারিনি, প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত কাজে একা ঘরের বাইরে যেতে পারেনি। সামাজিক লোক লজ্জ্বার ভয়ে অভিবাবকরা মুখ ফুটে কাউকে কিছু না বলে নীরবে হজম করে গেছেন। মানসম্মানের ভয়ে বিয়ের উপযুক্ত বয়স হওয়ার আগেই অনেকেই তাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। যার ফলে অনেক মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যত অকালে ঝরে গেছে।

প্রচলিত আইনে বখাটেদের ব্যাপারে তিন শাস্তির বিধান রয়েছে। ঢাকা মহানগর আইনের ৭৬ ধারায় এ ধরণের অপরাধের শাস্তি এক বছর কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা। কোন নারীর শালীনতা ও মর্যাদার অভিপ্রায়ে কোন মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি বা কোন কাজ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারাতে এই একই ধরণের শাস্তির বিধান এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ ধারায় যৌন নিপীড়ন ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগে ১০ বছরের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়াও ইভটিজিং বা উত্ত্যক্ত করা বন্ধ করার জন্য নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এবং এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনে ৫০৯ ধারা অন্তভুক্ত করা হচ্ছে। এই ধারা প্রয়োগ করে নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট অপরাধীকে ঘটনাস্থলে বিচার করে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত করতে পারবেন।

নারী নির্যাতন, যৌতুক এবং যৌন হেনেস্তা একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যা নির্মূলের লক্ষ্যে শুধু মাত্র সরকারের উপর নির্ভর না করে পারিবারিক এবং সমাজিকভাবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলন গড়ে তোলা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। ইভিজিং এর শিকার মেয়েদের স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ না করে অভিবাবকদের উচিত তাদেরকে বাহিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া। লিঙ্গ বৈষম্য কথা মাথায় না রেখে পারিবারিকভাবে মেয়েদের মানসিক সার্পোট দিয়ে স্বাধীন ভাবে চলফেরা করতে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে উৎসাহ প্রদান করা অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করি। আসুন, মনের ভেতর কোন ভয় ভীতি না রেখে নারীর প্রতি সব ধরণের সহিসতা বন্ধের লক্ষ্যে প্রতিবাদী হই। বাংলাদেশে নারীদের স্বাধীন এবং নিরাপদভাবে বাঁচার অধিকারটুকু নিশ্চিত করি।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৩:১৭
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×