দেশের পত্রিকাগুলোতে সুসংবাদের চেয়ে দুঃসংবাদ বেশি দেখা যায়। রাষ্ট্রের সমাজের ও মানুষের নিরাপত্তাহীন জীবন যাপন দেখে মনে হবে রাষ্ট্রের কোন আইন নেই, সমাজে কোন নিয়ম নেই, মানুষের নিজেদের মধ্যে ন্যায়-অন্যায়ের কোন বালাই নেই। সম্প্রতি পারিবারিক কলহ, অসমপ্রেম, যৌনতা ও পরকীয়া প্রেম যা সমাজ অসমর্থিত ক্রীয়াকলাপ তা এখন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসমস্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক দিন থেকেই (সম্প্রতি বেশি) পূত-পবিত্র শিশুদের জীবন দিতে হচ্ছে। নারী-পুরুষের অনৈতিক আচরণ ও সমাজের হিংস্রতার কারণে অনেক শিশুর অপমৃত্যু হচ্ছে। পাশাপাশি ভ্রুণ হত্যা আজকাল তরুণ-তরুণীদের কাছে ফ্যাশনে রূপ নিচ্ছে। এ সমস্ত ক্রিয়াকলাপ দেখে মনে হয় সমাজের এই স্খলন মানুষকে কোন পথে নিয়ে যাবে!
সামাজিক অবক্ষয়ের কিছু নমুনা নিম্নরূপ
সহনশীলতার অভাব : সমাজে পারস্পারিক সহনশীলতার অভাবে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। যেমন- স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সহনশীলতার অভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। বর্তমানে আমাদের সমাজে এক ভয়াবহ ভারসাম্যহীনতাও বিরাজ করছে। সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যার ফলে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে।
নগরায়ণ ও শিল্পায়ন : নগরায়ন ও শিল্পয়নের ফলে গ্রামীণ সমাজে ভাঙ্গন ধরেছে। ফলে মূল্যবোধের অবনতি ঘটছে। বর্তমানে নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রসারে বস্তি জীবনের বিকাশ হচ্ছে। পরিবেশেগত কারণে বস্তির শিশু-কিশোররা অনেক সময় অনৈতিক কাজ করে এবং অশ্লীলতা ও কুরুচিপূর্ণ চলচ্চিত্র ও নাটক সামাজিক অবক্ষয়ের জন্যে ও অনেকাংশে দায়ী।
বেকারত্ব ও দারিদ্রতা: বেকারত্বের কারণে অনেক সময় যুব সমাজ অন্যায় পথে ধাবিত হয়, লিপ্ত হয় চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাই ইত্যাদি জগন্যতম কাজে। ফলে সমাজে যুব সমাজের চরিত্রের অবক্ষয় ঘটে। দারিদ্রতা : অর্থনৈতিক বিপর্যয় বা দারিদ্রতার কারণেও সামাজিক মূল্যবোধ লোপ পাচ্ছে।
উপযুক্ত শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব : উপযুক্ত শিক্ষা না থাকায়, অপর দিকে ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবেও সমাজে বিপর্যয় ও হতাশা দেখা দেয়। এতেও সামাজিক অবক্ষয় ঘটে থাকে।
পেশী শক্তির প্রভাব : সমাজে পেশী শক্তির জয়জয়কার বা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্বৃত্তায়নের কারণেও সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে।
রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের অভাব : রাষ্ট্র ব্যক্তির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে ও আইনের শাসন না থাকলে সামাজিক অবক্ষয় ঘটে এবং সুশাসনের অভাবেও সামাজিক অবক্ষয় ঘটে থাকে।
মাদকের আগ্রাসন : বর্তমানে আমাদের দেশে মাদকের আগ্রাসন এতো বৃদ্ধি পেয়েছে যে, যুবক- বয়স্ক থেকে শুরু করে এখন শিশুরাও পর্যন্ত এর ছোবলে আক্রান্ত। ফলে সামাজিক অবক্ষয় দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সামাজিক অবক্ষয় রোধে আমাদের গণমাধ্যম, ব্লগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সামাজিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠায় ব্যক্তি জীবনে কতিপয় গুণাবলী অর্জন করা প্রয়োজন, সেগুলো হচ্ছে উদ্যোগ, উদ্যাম, নিয়মানুবর্তিতা, আগ্রহ, নিষ্ঠা, অধ্যবসায়, শিষ্টাচার, সততা ও পরিশ্রম। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই উপরে উল্লেখিত গুণাবলী সুপ্তাব্যবস্থায় থাকে। এই সুপ্ত গুণাবলী জাগ্রত করতে সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যম, ব্লগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গণমাধ্যম প্রত্যেক মানুষকে তার মানবীয় গুণাবলী বিকাশ ঘটাতে ও অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমি মনেকরি রাষ্ট্র মানুষের মৌলিক অধিকার ও ন্যায় বিচার আরোও গ্রহণযোগ্য করবে তা না হলে ধর্মীয় শিক্ষাদেন ইমাম-মোল্লা ও ধর্মীয় বোদ্ধারা আজ যে বেপথে চলছে এরকম চলতে থাকলে সমাজ কোন পথে যাবে? তাই যেসমস্ত ভন্ড, ধার্মিক বা যারা ধর্মের নামে শিক্ষাদীক্ষা জ্ঞানদান করেন তাদের অপকর্মের যথার্থ বিচার না হয়, তাহলে মানুষের নৈতিকতা নিশ্চিন্ন হয়ে যাবে। সমাজ স্বাভাবিক ও আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করতে হলে ধর্ষককে বিচারের কাঠ গড়ায় আনতে হবে। যা সময়ের দাবি।