মৌমাছি পালন করে চাষীরা লক্ষ লক্ষ টাকা বাড়তি আয় করছেন বলে অনেক খবর অনেক দিন ধরেই কর্ণগোচর হয়েছে। বাড়তি আয় এই কারণে যে, ফসল ফলানোর পাশাপাশি চাষীরা মৌমাছি পালন করলে লাভজনক হয় বলে এই ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে থাকেন। তাই, একটু খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, প্রচার হওয়া কথাগুলো সত্যি। আসলেই মধু চাষে আছে অনেক টাকা, এমনকি কোটিপতি হওয়াও সম্ভব! এবারেও এই সম্ভাবনার দুয়ার কিভাবে খোলা যাবে তা ধাপে ধাপে বর্ণনা করছি।
ধাপ-১ঃ
মধু চাষ কিভাবে করতে হয়, তার উপর একটি ট্রেইনিং নিয়ে গ্রাম্য এলাকায় অর্ধেক বিঘা জমি লিজ নিয়ে নিন।
ধাপ-২ঃ
এপিস মিলিফেরা জাতে মৌমাছি সংগ্রহ করুন। এর আগে, ১৫টি বাক্স দিয়ে একেকটি মৌ-কলোনী স্থাপন করতে হবে।
ধাপ-৩ঃ
মৌ-কলোনিগুলো সব সময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও শুকনো রাখুন। বিশেষ ভাবে মোমপোকা'র আক্রমন থেকে আপনার মৌ-কলোনিগুলোকে রক্ষা করতে হবে। এজন্যে প্রতিকার ব্যবস্থা নিন। এছাড়াও, মৌমাছির একরাইন রোগ হতে পারে। সেজন্যে প্রয়োজন মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে, আপনার ট্রেইনিং থেকে পাওয়া শিক্ষা কাজে দিবে।
ধাপ-৪ঃ
মৌ আহরণ করুন। সংগ্রহের দিক থেকে মধু'র তিনটি মৌসুম আছে- মধু মৌসুম, অর্ধ মৌসুম এবং মন্দা মৌসুম। মধু মৌসুম হচ্ছে- অক্টোবর, ডিসেম্বর - জানুয়ারী, মধ্য ফেব্রুয়ারী - মধ্য মার্চ এবং মধ্য এপ্রিল - মধ্য জুন। অর্ধ মৌসুম হচ্ছে- সেপ্টেম্বর ও নভেম্বরের ১৫-৩০ তারিখ, ফেব্রুয়ারী ও এপ্রিলের ১-১৫ তারিখ এবং ১৬ জুন - ১৬ জুলাই। আর, মন্দা মৌসুম হচ্ছে- নভেম্বরের ১-১৫ তারিখ, ১৫ জুলাই - ১৫ সেপ্টেম্বর এবং মার্চের ১৫ - ৩১ তারিখ। মন্দা মৌসুমে চিনির সিরাপ এক কাঠি সহকারে বাক্সগুলোর কাছে রাখতে হবে।
ধাপ-৫ঃ
ঠিক মত শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দিন।
হিসেব-নিকেশঃ
একেকটি বাক্স থেকে বছরে ৩/৪ বারে ৬০-৭০ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। পাইকারী মূল্য ৪০০ টাকা হলে বছরে একটি বাক্স থেকে ২৪,০০০ - ২৮,০০০ টাকার মধু আসে। এভাবে গড়ে ২৬,০০০ টাকা করে আসলে ৬০টি বাক্স থেকে আসবে ১৫,৬০,০০০ টাকা।
এখন, এই ৬০টি বাক্সে মৌমাছি সংগ্রহের জন্যে প্রতি বাক্সে বিনিয়োগ করতে হবে ৫.৫ হাজার টাকা। এছাড়া, মধুর বাক্সগুলো দেখা-শোনার জন্যে দরকার ১ জন মানুষ। শুধু মধু আহরণের সময় ৪-৫ জন মানুষের দরকার পড়বে। তবে, এক্ষেত্রে আপনাকে তাঁদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। সেই হিসেবে, লোকবলের জন্যে প্রতি বছর খরচ হবে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। তাহলে, ১ম বছর জমির লিজসহ আপনার বিনিয়োগ করতে হবে সর্বমোট ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।
এখন, আয় থেকে ব্যয়ের হিসেব বাদ দিলে ১ম বছর শেষে আপনার হাতে থাকবে ১০,৮০,০০০ টাকা। এরপরের বছরগুলোতে ১৪,১০,০০০ টাকা। এভাবে, মাত্র ৮ বছরে আপনি কোটি টাকার মালিক হতে পারবেন।
লেখককে ধন্যবাদ পাঠানোর ঠিকানাঃ
[email protected]
===
২য় প্রকাশ
========