somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৫ বছরের রোডম্যাপ: বাংলাদেশে বেকারত্ব দূরীকরণ পরিকল্পনা

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশে বেকারত্বের হার শূন্যে (০%) নামিয়ে আনতে হলে একটি সুসংগঠিত, সময়োপযোগী এবং বাস্তবমুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এখানে কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি, কৃষি, শিল্প ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন ভিত্তিক একটি সমন্বিত ৫ বছর মেয়াদি রোডম্যাপ তুলে ধরা হলো।

প্রথম বছর: অবকাঠামো ও দক্ষতা উন্নয়ন (ভিত্তি স্থাপন)

জাতীয় কর্মসংস্থান পরিকল্পনা গঠন:
১) সরকার, বেসরকারি খাত ও শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে "কর্মসংস্থান টাস্কফোর্স" গঠন।
২) বেকারত্ব শূন্যে নামানোর লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ।
৩) বেকারদের ডাটাবেস তৈরি ও কর্মসংস্থানের উপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।

কারিগরি শিক্ষা ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট:
১) "একটি পরিবার, একটি চাকরি" প্রকল্প চালু, যেখানে প্রতি পরিবারে অন্তত একজনকে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।
২) কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা (TVET) বাধ্যতামূলক করা এবং প্রতি জেলায় ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন।
৩) ফ্রিল্যান্সিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, AI, ডেটা সায়েন্স ইত্যাদি খাতে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (SME) উন্নয়ন:
১) "স্মার্ট উদ্যোক্তা" প্রকল্প, যেখানে বেকার যুবকদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
২) নারী উদ্যোক্তা ফান্ড গঠন, যেখানে নারীদের বিশেষ সহায়তা দেওয়া হবে।
৩) প্রতিটি উপজেলায় "একটি পণ্য, একটি মার্কেট" (One District, One Product - ODOP) মডেল চালু।

দ্বিতীয় বছর: শিল্প খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি

উৎপাদনমুখী শিল্প সম্প্রসারণ:
১) গার্মেন্টস, চামড়া, ওষুধ শিল্পের মতো রপ্তানিমুখী শিল্পে ১০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
২) বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) এবং শিল্প পার্ক স্থাপন করে দেশীয় শিল্প বিকাশ।
৩) সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে "মেড ইন বাংলাদেশ" ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা।

বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি:
১) মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি।
২) সরকারিভাবে ভাষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং শ্রমিকদের জন্য সহজ ভিসা সুবিধা।
৩) প্রতি বছর ৫-১০ লক্ষ কর্মসংস্থান বিদেশে সৃষ্টির পরিকল্পনা।

কৃষি ও খাদ্য শিল্প আধুনিকায়ন:
১) "স্মার্ট কৃষি প্রকল্প", যেখানে ড্রোন, IoT, এবং AI ব্যবহার করে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো হবে।
২) চুক্তিভিত্তিক কৃষি (Contract Farming) চালু করে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা।
৩) কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তুলে ১৫-২০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি।

তৃতীয় বছর: ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম

ডিজিটাল কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ:
১) "স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচি", যেখানে বেকার যুবকদের অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজের সুযোগ সৃষ্টি।
২) ১০ লক্ষ নতুন ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা, যা বছরে ৫০০ কোটি ডলার আয় আনবে।
৩) ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ই-কমার্স, রিমোট জব ও ফ্রিল্যান্সিং সেবা সম্প্রসারণ।

স্টার্টআপ ও ইনোভেশন হাব:
১) "স্টার্টআপ বাংলাদেশ ফান্ড" গঠন, যেখানে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ ও বিনিয়োগ দেওয়া হবে।
২) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে "ইনোভেশন ল্যাব" স্থাপন, যেখানে নতুন উদ্যোগ ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সহায়তা দেওয়া হবে।
৩) তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৩০-৫০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।

চতুর্থ বছর: বৈদেশিক বিনিয়োগ ও উৎপাদন খাতে প্রসার

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ:
১) "বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট" আয়োজন, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা হবে।
২) বিনিয়োগ বান্ধব নীতি, কর রেয়াত, এবং বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানো।
৩) বৈদেশিক বিনিয়োগের মাধ্যমে ২০-৩০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি।

পর্যটন ও সেবা খাতে কর্মসংস্থান:
১) "ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান" চালু করে পর্যটন খাত থেকে বছরে ১০-২০ লক্ষ কর্মসংস্থান।
২) হসপিটালিটি, ফুড চেইন, এবং কাস্টমার সার্ভিস খাতে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান।

পঞ্চম বছর: ০% বেকারত্ব অর্জন ও টেকসই অর্থনীতি

অর্জিত সফলতাগুলোর মূল্যায়ন ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা:
১) বেকারত্ব দূরীকরণের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও নীতিমালা আপডেট।
২) প্রতিটি গ্রামে অন্তত একটি নতুন শিল্প বা কর্মসংস্থান কেন্দ্র গড়ে তোলা।
৩) স্থানীয় সরকার ও উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও অনুদান চালু।

শতভাগ কর্মসংস্থানের দেশ গঠন:
১) "কোনো কর্মক্ষম ব্যক্তি বেকার থাকবে না", প্রত্যেক পরিবারে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা।
২) সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগে ১ কোটি নতুন চাকরি নিশ্চিত করা।
৩) একটি আত্মনির্ভরশীল, প্রযুক্তিনির্ভর, ও শিল্প-বান্ধব অর্থনীতি গড়ে তোলা।

প্রত্যাশিত ফলাফল (Final Impact)

১) বাংলাদেশে বেকারত্ব হার ০% এ নামিয়ে আনা।
২) ১ কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
৩) ফ্রিল্যান্সিং, কৃষি, শিল্প, ও সেবা খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি।
৪) বাংলাদেশ হবে দক্ষ জনশক্তির বিশ্বব্যাপী সরবরাহকারী দেশ।
৫) একটি উন্নত, স্মার্ট, ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

উপসংহার
এই পরিকল্পনা যদি সরকার, বেসরকারি খাত, এবং জনগণ একসাথে কাজ করে বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে ৫ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ হবে ১০০% কর্মসংস্থানের দেশ। এটি শুধু বেকারত্ব দূরীকরণ নয়, বরং একটি উন্নত, ডিজিটাল, ও অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার পদক্ষেপ।

"একটি কর্মসংস্থানভিত্তিক, দক্ষ জনশক্তির, উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলি!"


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৪:১১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×