অ্যান্টনি-ক্লিওপেট্রা
ইতিহাসের অন্যতম অমর প্রেমগাথার নাম, মার্ক অ্যান্টনি-ক্লিওপেট্রা। ঐতিহাসিক এবং একই সঙ্গে দারুণ নাটকীয় এই প্রেম হয় অনিন্দ সুন্দরী মিসরীয় রানী ক্লিওপেট্রা আর তার প্রধান সেনাপতি অ্যান্টনির মধ্যে। শক্তিশালী এবং ঐতিহাসিক চরিত্র দুটির মাঝের এই অমর প্রেম আকর্ষণীয়ভাবে আমাদের কাছে তুলে এনেছিলেন Shakespeare তার জাদুকরী লিখনীর মাধ্যমে। রাজকীয় ঘাত-প্রতিঘাত, জয়-পরাজয় উপেক্ষা করে তারা বিয়ে করেছিলেন। পরবর্তীতে রোমানদের সঙ্গে যুদ্ধরত অ্যান্টনির মনোবল ভাঙার জন্য তাকে যুদ্ধের ময়দানে মিথ্যা সংবাদ শুনিয়েছিলেন, শত্রুরা ক্লিওপেট্রাকে হত্যা করেছে। তারপর অ্যান্টনি নিজ ছুরিতে মৃত্যুবরণ করেন, অন্যদিকে অ্যান্টনির মৃত্যু সংবাদ শুনে ক্লিওপেট্রাও নিজ ছুরি দিয়ে আত্দহত্যা করেন। Shakespeare তাদের জন্য বলেছিলেন, �great love demands great sacrifices!�১৬২৩ সালের প্রথম মুদ্রিত হয় এই নাটকটি।
মেরি অ্যান্ড পিয়েরি কুরি
রোমান্টিক জুটি বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রোমিও-জুলিয়েট ও প্যারিস-হেলেনের কাহিনী। অথচ দুনিয়া কাঁপানো এমন অনেক জুটি রয়েছে, যাদের প্রেমকাহিনী স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ইতিহাসের পাতায়। এরকম একটি জুটি মেরি অ্যান্ড পিয়েরি কুরি। এ জুটির ছিল না কোনো লোকদেখানো কাজকর্ম, না ছিল বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ। ছিল না কোনো পুরাণিক ট্র্যাজেডি, দেবদেবীর হস্তক্ষেপ, কিংবা ছিল না কোনো অবৈধ কাহিনী। কিন্তু ছিল বিশ্বাস ও ভালোবাসা। এরা ছিলেন একে-অপরের অনুপ্রেরণা! মানবতার কল্যাণেই এগিয়েছে তাদের প্রেম। পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের রিসার্চে অনুমতি দেয়নি বলে ১৮৯১ সালে রিসার্চ করতে মেরি গিয়েছিলেন ফ্রান্সের সর্বরনে। মেধাবী মেরিকে লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি সবখানেই আবিষ্কার করেন আরেক মেধাবী, ল্যাবরেটরি ডিরেক্টর পিয়েরি কুরি। কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর ১৮৯৫ সালে তারা বিয়ে করেন। ১৮৯৮ সালে এই বৈজ্ঞানিক যুগল আবিষ্কার করেন পলোনিয়াম আর রেডিয়াম। পদার্থবিদ্যায় এবং রেডিও অ্যাক্টেভিটিতে অবদানের জন্য এ দম্পতি ১৯০৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯০৪ সালে পিয়েরি কুরি মারা যাওয়ার পর মেরি স্বামীর দেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং কুরির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। অবশেষে ১৯১১ সালে মেরি কুরি পৃথিবীর একমাত্র নারী যিনি দ্বিতীয়বারের মতো এবং ভিন্ন বিষয়ে নোবেল অর্জন করেন।
রোমিও-জুলিয়েট
Never was a story of love nor woe that of Jliet and her Romeo.� সবাই-ই মেনে থাকেন এই জুটিই প্রেমের ইতিহাস বা গল্পগুলোর মধ্যে সর্বাধিক প্রচার বা সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। যেন ভালোবাসার অপর নাম রোমিও-জুলিয়েট। William Shakespeare-এর কালজয়ী ট্র্যাজেডি হলো এই �Romeo and Juliet! দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি, বংশীয় অহংকার ভেদ করে দুজন তরুণ-তরুণীর প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়া। পরবর্তী সময়ে পরিবারের বাধা, মানসিক সংশয় উপেক্ষা করে নানা নাটকীয়তার মধ্যে তাদের বিয়ে করা। সবশেষে, তথ্যগত ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিষপানে আত্দহত্যা। সব মিলিয়ে, রোমিও-জুলিয়েট কাহিনী হয়ে গেছে অমর এক প্রেমগাথা! যুগে যুগে অসংখ্য নাটক, সিনেমা বানানো হয়েছে এইtimeless love� নিয়ে।
ডার্সি অ্যান্ড এলিজাবেথ
বিখ্যাত ইংরেজ উপন্যাসিক ঔধহব অংঃবহ-এর কালজয়ী প্রেমের গল্প হলো 'চৎরফব ধহফ চৎবলফরপব'। এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হলো তৎকালীন ইংরেজ ধনী সমাজের এক তরুণ ডার্সি। উচ্চ শিক্ষিত, প্রচণ্ড অহংকারী, স্বভাবে নাক উঁচু, আর বংশমর্যাদায় গর্বিত এই ডার্সির ঘটনাচক্রে এবং নানা নাটকীয়তার মধ্যে সাধারণ-মধ্যবিত্ত এক পরিবারের মেয়ে এলিজাবেথের সঙ্গে পরিচয় হয়। এলিজাবেথ ছিল মি. অ্যান্ড মিসেস বেনেটের পাঁচ মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। মি. অ্যান্ড মিসেস বেনেট সব সময় তাদের মেয়েদের প্রচণ্ড স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে নাক উঁচু ডার্সি সব সময় এলিজাবেথকে তাদের সামাজিক এবং পারিবারিক অবস্থান নিয়ে ব্যঙ্গ, অপমান করতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে এলিজাবেথের রূপ ও গুণে মুগ্ধ হয়ে সেটা ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ডার্সির অভিজাত পরিবার তা মেনে নেয় না, ওদিকে এলিজাবেথের পরিবারেও ঘটতে থাকে নানা অঘটন। অবশেষে নানা নাটকীয়তার পরে ডার্সি-এলিজাবেথের মিলন হয়। নাটকীয়তা, হাস্যরসে ভরা, ইংরেজ সমাজের হরেক রকম দিক, লেখকের চমৎকার বর্ণনায় এ উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে ইংরেজি সাহিত্যের অমর এক সৃষ্টি।
ভিক্টোরিয়া-আলবার্ট
হাজার বছরের পুরনো ইংরেজ সিংহাসন, আর তাদের হাজার হাজার প্রেমকাহিনীর ভিড়ে বলা হয়ে থাকে কুইন ভিক্টোরিয়া আর প্রিন্স আলবার্টের প্রেমকাহিনী অতুলনীয়। কুইন ভিক্টোরিয়া তার স্বামী প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত তার জন্য শোক করেছেন। ভিক্টোরিয়া তার চাচা শরহম ডরষষরধস-এর মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সালে ইংরেজ সিংহাসনের দায়িত্ব নেন। ১৮৪০ সালে কুইন ভিক্টোরিয়া তার ফার্স্ট কাজিন প্রিন্স আলবার্টকে বিয়ে করেন। অনেক কটু কথায় কান না দিয়ে তারা সুখী পরিবার গঠন করেছিলেন। তারা একে-অপরকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। তাদের ছিল ৯ জন সন্তান। ১৮৬১ সালে স্বামী আলবার্ট মারা যাওয়ার পর তিন বছর পর্যন্ত জনগণের সামনে আসেননি ভিক্টোরিয়া। পরে জনগণের চাপে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন দিস্রাইলের নেতৃত্বে ১৬৮৮ তে নতুন পার্লামেন্ট ঘোষণা করেন। ১৯০১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, তিনি যেখানেই যেতেন, কালো কাপড় পরে যেতেন।
লাইলী-মজনু
প্রেম কাহিনী অথবা রোমান্টিক জুটির কথা উঠলে আমাদের দেশে সবার আগে যাদের নাম উচ্চারিত হয় তারা হলেন লাইলি-মজনু। মধ্যযুগীয় ইরানি কবি �Nizami of Zanje� নামে যিনি পরিচিত, তিনি আরবীয় সামাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে রচনা করেন,�Layla and Majnn is a tragic tale abot nattainable love�| । প্রেমের ইতিহাসে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে ওঠে দুটি চরিত্র_ লাইলী ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে। অধরা প্রেমের এক বিয়োগন্ত গাঁথা এ কাব্য। কাব্য লিখিত হওয়ার আগে শতাব্দী থেকে শতাব্দীতে এই মিথ আরবে প্রচলিত ছিল। পাণ্ডুলিপি এবং সিরামিকে মূর্ত চিত্রে জীবন্ত হয়ে ছিল এই মিথ। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে লাইলী এবং কায়েস একে-অপরের প্রেমে পড়েন। তাদের প্রেম সমাজের নজরে এলে দুজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করা হয়। নিঃসঙ্গ কায়েস মরুপ্রান্তরে নির্বাসনে যান। বিরহকাতর কায়েসের ক্ষ্যাপাটে আচরণের জন্য তাকে ডাকা হতো মজনু (পাগল) নামে। মরুভূমিতে এক বৃদ্ধ বেদুইন লড়াই করে লাইলীকে পাওয়ার জন্য কায়েসকে প্রেরণা দেন। লাইলীর গোত্র ক্ষমতাচ্যুত হয়, কিন্তু তারপরও লাইলীর বাবা কায়েসের সঙ্গে লাইলীর বিয়েতে সম্মতি দেন না। কথিত আছে, লায়লির পিতা মজনুকে আহত করলে লাইলীও আহত হতো, এমনই ছিল তাদের সেই স্বর্গীয় প্রেম। কিন্তু মজনুকে মরুভূমিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে বেদুইনের দল মজনুর হার না মানা ভালোবাসা দেখে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তারা লাইলীর বাবাকে যুদ্ধে হারিয়ে দেয়। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। লাইলীকে তার পিতা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর লাইলী মজনুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু প্রচণ্ড দুঃখ আর অনাহারে মজনু মারা যায়। লাইলীও তার ভালোবাসা মজনুর পথ অনুসরণ করে। মৃত্যুর পর তাদের পাশাপাশি সমাধিস্থ করা হয়। স্বর্গে গিয়েও ভালোবাসার মানুষকে চাওয়ার তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের আকুতি এই কাহিনীকে অমর করে রেখেছে। 'দুই দেহ এক আত্দা' নামক বহুল প্রচলিত কথা এই যুগলের অনুপ্রেরণায় পাওয়া।
ওডিয়াস-পেনেলোপ
গ্রিক ইতিহাসের প্রেমকাহিনীর কথা উঠলে সবার আগে উচ্চারিত হয় প্যারিস ও হেলেনের সেই অমর কাহিনী। কিন্তু এই ইতিহাসে আরও অনেক প্রণয় ও আলোচিত জুটি রয়েছে, যারা এখনো মাথা উঁচু করে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিচরণ করছে। ওডিয়াস-পেনেলোপ ঠিক এরকমই একটি জুটি। অন্যান্য গ্রিক প্রেমের গল্পের মতোই এ জুটির প্রেমও ছিল ত্যাগ আর বিসর্জনের। এ জুটি তাদের মিলনের জন্য অপেক্ষা করেছিল দীর্ঘ ২০ বছর! তাদের বিয়ের কিছু পরই ওডিয়াসকে যুদ্ধে চলে যেতে হয়। কিন্তু স্বামীর প্রত্যাবর্তনের আশায় আশায় পেনেলোপ তার জন্য অপেক্ষা করেছিল ২০ বছর। এর মধ্যে তিনি ১০৮ জন রাজাকে প্রত্যাখ্যান করেন, অপরদিকে ওডিয়াসও স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। তিনিও অনেক দেবীর প্রেম ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। Homer রচিত এই এপিকে তিনি প্রমাণ করেছেন, 'ভালোবাসার অন্য নাম- অপেক্ষা!' তিনি বলেছেন, �remember that tre love is worth waiting for!�
প্যারিস-হেলেন
প্যারিস-হেলেন। এদের সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। কালজয়ী এ প্রেমের কারণেই পুরো ট্রয় নগরী ধ্বংসলীলায় পরিণত হয়। গ্রিক পুরাণের ফ্যাক্ট এবং ফিকশনের অপূর্ব এক সংমিশ্রণ হলো এই কাহিনী। গ্রিক লেখক কালজয়ী হোমারের জগদ্বিখ্যাত এপিক 'ইলিয়াড'-এ ফুটে উঠেছে প্রেম মানে না কোনো বাধা। প্রেমের নাই কোনো পরিধি। এই প্রেমকে কেন্দ্র করে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে দুই জাতির মধ্যে। ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেওয়া সেই যুদ্ধের নাম হলো, �Trojan War!� যে যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল পুরো একটা শহর- ট্রয়! ইতিহাসে যা 'ডধৎ ভড়ৎ ঐবষবহ' কিংবা 'ঐবষবহ ড়ভ ঃৎড়ু' নামে বিখ্যাত। গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী অনন্য এই সুন্দরী হেলেন ছিলেন ট্রয় নগরীর পার্শ্ববর্তী, স্পার্টার রাজা মেনেলাসের স্ত্রী। ট্রয়ের ছোট রাজকুমার প্যারিস তাকে চুরি করে তার রাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন। এতেই বেধে যায় ১২ বছর ধরে চলা এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ। স্পার্টার পক্ষে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন রাজা অ্যাগামেনন। এমনকি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন গ্রিক দেব ও দেবীরা! ট্রয় রাজকুমার হেক্টর, প্যারিস, দেবতা অ্যাখিলিস, স্পার্টার রাজা মেনেলাসসহ অনেকেই নিহত হন। প্রেমের জন্য এত রক্তপাত আর ধ্বংস পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। তাই তো প্রেমপূজারীরা ইতিহাস কাঁপানো এই জুটিকে এখনো দেবতা তুল্য স্থান দিয়ে থাকেন।
Source: internet
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৫০