রাতের বেলা বিশেষ করে উইকেন্ড নাইটে রুম থেকে শুনতে পাই “আ-ই, ছিং খাই-মেন, উ-অ হেন তৈ-পু-ছি / খালা, প্লিজ গেট খুলেন, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত” রাত ১১ টা বাজলেই ডরমের গেট বন্ধ হয়ে যায়, আর তাই চৈনিক ছেলেরা এভাবেই আর্জি জানায় কর্তব্যরত দারোয়ান মহিলাকে। আমি অনেক সময় ছয় তলার বারান্দা থেকে তাদের আকুতি-মিনতি দেখি আর ভাবি চৈনিকরা স্টুডেন্ট থাকাকালীনই রুলস্ & রেগুলেশনে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং ছেলে-মেয়ে সবার জন্য একই নিয়ম।
.
ATM বুথ গুলোতে কোন দারোয়ান নিযুক্ত নাই, এই ১টি উদাহরণ থেকেই বুঝা যায় আইন-শৃঙ্খলার অবস্হা। ছিনতাইয়ের ঘটনা এখনও নজরে পড়ে নি কিংবা কোন ফ্রেন্ডের শিকার হওয়ার কথা শুনি নি। তবে পকেটমারের ঘটনা অহরহ ঘটে কারন এখানে পিকপকেট খুবই সহজ। প্যান্টের পেছনের পকেটে ইয়া বড় বড় মোবাইল রাখে যার আধেকটাই বের হয়ে থাকে কিংবা মহিলারা তাদের ভ্যানিটি ব্যাগের চেইন ই লাগায় না।
.
ব্যাংকগুলো সারা বছরই খোলা, বন্ধ বলে কোন শব্দ তাদের ডিকশনারীতে নাই যত বড় ফেস্টিভ্যালই হোক। মোবাইল অপারেটরের সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের customer care service সপ্তাহের ৭ দিনই খোলা থাকে।
.
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নাই, একটা উদা থেকেই ক্লিয়ার হবে, এমএসসি তে আমার এক পাকিস্তানি ক্লাসমেটের mark-sheet এর attested copy দরকার। অফিসে গিয়ে বলল, ইউনি ওয়েব থেকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে ঐ লোকই রেজিস্টারের সীল মেরে দিল, ২ মিনিটও লাগে নাই [সব ছাত্রের তথ্যই ওয়েবসাইটে আছে এখানে চুরি করার কিছু নাই ]। চীনে ফরেন ইনভেসমেন্টের ক্ষেত্রেও খুব দ্রুততার সাথে জমি, অবকাঠামো সহ যা যা দরকার সব দেয়।
.
শিক্ষকরা ছাত্রদের বাবা-মায়ের ফোন নম্বর জানে, আগের ইউনিতে দেখেছিলাম প্রফেসর এমএসসির এক পোলার মা কে খবর দিয়ে এনে তার সামনে পড়ালেখা বিষয়ে ঝাড়ি দিচ্ছে। স্টুডেন্ট থাকাকালীনই সুপিরিয়রের কথা মেনে চলার প্রশিক্ষণ পায় ফলে জব লাইফে গিয়ে বস্ এর কথা হুবহু মনে চলে এবং যাই কিছু করুক বাবা-মা কে সব বলে এমনকি gf-bf ব্যাপারও
.
অফিসের বস্ রা থাকে সব সময় দৌড়ের উপর, যে যত বড় অফিসার তার টেনশন তত বেশি। ব্যাংকে ম্যানেজার সীল নিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে, যখন যে কাউন্টারে সীল-ছাপ্পর মারার দরকার পড়ে সেখানে ছুটে যায়। মেট্রো ষ্টেশনে কন্ট্রোল রুমে ষ্টেশন মাস্টার কিংবা বিমান বন্দর ইমিগ্রেশনে বড় অফিসার অলটাইম পিঠ সোজা করে দাঁড়ায় থাকে।
.
৬ জন মিলে [বাপ-মা দাদা-দাদী নানা-নানী] ১টা বাচ্চার যত্ন নেয়, বাচ্চাকে উচ্চ শিক্ষিত বড় মানুষ বানানোর চেষ্টা করে, বাজারে ১ সবজি বিক্রেতার কাছে শুনেছি তার ছেলে ইউনিতে পড়ে। পাড়া-মহল্লার ছোটো খাটো দোকানারের পোলাপানও ব্যাচেলর করতেছে। পাড়া-মহল্লার ছোটো খাটো দোকানারের পোলাপানও ব্যাচেলর করতেছে। আগামী ৩০/৪০ বছর পরে চাইনিজদের যে ইয়াং প্রজন্ম আসতেছে সেখানে ৩০/৪০ কোটি গ্র্যাজুয়েট যুবক-যুবতী থাকবে যা দিয়ে চীন পুরো দুনিয়াজুড়ে দাপিয়ে বেড়াবে.
.
যোগাযোগ ব্যাবস্হা কতটা উন্নত তা একটা উদা থেকেই ক্লিয়ার হবে, হাইওয়েতে কোন ট্রাফিক মোড় নাই, গাড়ি নন স্টপ চলে। বড় বড় সিটি তো বটেই প্রায় সব প্রাদেশিক রাজধানীতেই মেট্রো আছে। চৈনিকদের ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এক্সট্রা টাইম হিসাব করতে হয় না।
যে কোন কিছু ঘরে বসে কেনা যায় টিস্যু থেকে সামুদ্রিক মাছ, চৈনিকরা অনলাইনে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে মহল্লার খাবার দোকানগুলোও ই-শপ খুলেছে। খাবার বহনকারী অনেকে ওয়াকিটকি সাথে রাখে মূল দোকানের সাথে যোগাযোগের জন্য।
.
যে কাজ অনলাইনে করা যায় সেটার জন্য no paper খরচ, যেমন- মহল্লার কোন দোকান থেকে SIM কেনার সময় passport/ National ID card এর ছবি তুলে WeChat/ QQ এ সংশ্লিষ্ট জায়গায় পাঠিয়ে দেয়, আপনাকে প্রিন্টেট ছবি-টবি কিচ্ছু দিতে হয় না. ইউনিতে অফিসিয়াল নোটিশ ছাত্রদেরকে WeChat/ QQ গ্রুপ / ই-মেইল করে জানানো হয়।
.
ডায়নিংয়ে ছাত্ররা লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নিয়ে আসে, আবার খাওয়া শেষে ট্রে, বাটি, চপষ্টিক জায়গা মতো জমা দেয়। এখান থেকেই নিজের কাজ নিজে করতে অভ্যস্ত হয়। কেউ গাড়ির জন্য ড্রাইভার রাখে না, বাসার ছুটা কাজ করার জন্য কাজের মেয়েও খুঁজে না। কোন অফিসেই পিয়ন নাই, গ্লাসে পানি ঢেলে খাওয়া থেকে শুরু করে ফটোকপি, প্রিন্ট নিজেকেই করতে হয়।
.
যে সমাজের মানুষ গরিব সেখানে অপ্রকাশ্য তো বটেই প্রকাশ্য ঘুষ কন্ট্রোল করাও অনেক কঠিন। আমার আগের ইউনির প্রফেসর তার ছাত্রদের জন্য অনেক পার্টির আয়োজন করতো, বেড়াতে নিয়ে যেত। কিন্তু শি-চিন-ফিং প্রেসিডে্ট হওয়ার পর সকল ধরনের সরকারি খরচে খুব কড়াকড়িভাবে হিসাব নেওয়া হয়, মারিং-কাটিং কমে গেছে আর তাই সরকারিভাবে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনও কমে গেছে.
.
পাস করার আগেই ছাত্রদের চাকরি হয়ে যায়, জব ফেয়ারে অংশ নিতে কোম্পানিগুলো ক্যাম্পাসে আসে। ম্যান পাওয়ার অলসভাবে বসিয়ে রাখে না।
.
বিয়ে করার ক্ষেত্রে মেয়েদের ডিমান্ড ছেলের অবশ্যই বাড়ি থাকতে হবে, এজন্য ছেলারা প্রচুর পরিশ্রম করে ফ্ল্যাট বাসা কেনার জন্য। আর উচ্চশিক্ষিত ভালো চাকুরে মেয়েদের ডিমান্ড আরও একধাপ বেশি, বাড়ির পাশাপাশি গাড়িও থাকতে হবে।
.
এক ভাতে টিপ দিলে সব ভাতের খবর পাওয়া যায়, এই প্রবাদ বাক্যটি চীনাদের ক্ষেত্রে ১০০% প্রযোজ্য। ব্রাশ করার সময় সরাসরি টেপ থেকে মুখে পানি নিবে না, আলাদা মগে নিবে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই, এতে পানি অপচয় হয় না। মুখে ক্রিম মাখার ক্ষেত্রেও দেখবেন সব মেয়ে একই সিস্টেম ফলো করছে। চৈনিকরা সবাই একি মতের, একি পথের
সৌজন্যেঃ Habibur Rahman