somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা সিনেমা: দ্য জাপানিজ ওয়াইফ

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
|| স্পয়লার এলার্ট ||


ভালবাসা অনুভূতিটা আসলে কেমন? হাজারো মানুষের ভিড়ে কোন মানুষ কে হঠাৎ করে অন্য রকম লাগা। তার জন্য বুকের গভীরে কেমন কেমন অনুভূতি। মনে হয় যেন, "এই সেই মানুষ যাকে আমার করে চাই। এই মানুষটাকে ছাড়া জীবনে সব প্রাপ্তির মাঝেও শূন্যতা। মনে হয় যেন সারা পৃথিবীর বিনিময়ে তাকেই চাই।"

এমন অনুভূতি কতোদিন বুকের অলিন্দে জমিয়ে রাখতে পারবেন। এক বছর। এক যুগ। শুধু একটা মানুষের জন্য তীব্র ভালবাসা। ভালবাসার পূর্ণতা হয় বিয়েতে। এক সাথে একই ছাদের নিচে থাকা। পাশ ফিরলেই সেই মানুষকে দেখতে পাওয়া। হাত বাড়িয়ে ছুঁতে পারা। হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাত ধরা। একটা ফুল নিয়ে এসে তার চুলে গুঁজে দেওয়া। গোসলের পরে তার ভেজা চুল আঁচড়ানো দেখা। কথা গুলো হয়তো একটু বেশি কাব্যিক। বাদ দিলাম সব। বাস্তবতায় চলে আসি। অফিস থেকে ফিরলেন। কেউ আপনার জন্য টেবিল সাজালো। বিদ্যুৎ বিল, ছেলেমেয়ের টিউশন ফি, বাসা ভাড়া সব নিয়ে কথা বলা। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা যতো যাই হোক দুইজনে এক সাথেই থাকা। সুখ দুঃখ যাই থাকুক ভালবাসার মানুষকে চোখের সামনে দেখতে পাওয়া।

কিন্তু হাজার হাজার মাইল দূরে থাকে যদি আপনার ভালবাসার মানুষ। যাকে কখনো নিজের চোখে দেখেন নাই। হাত ছুঁয়ে গল্প করতে পারেন নাই। সেই মানুষের জন্য কতোদিন ভালবাসা বুকে আগলে রাখতে পারবেন?

পত্রমিতালী দিয়ে পরিচয় হাজার মাইল দূর জাপানের মিয়াগির সাথে স্নেহময়ের। চিঠিতে চিঠিতে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। একজন আরেকজন কে এটা ওটা উপহার পাঠায়। হঠাৎ করে ফোনে কল। ইংরেজি তে কথা বলতে গিয়ে শব্দ খুঁজে না পাওয়া। কথাও পরিষ্কার না শোনা। তবুও কতোনা প্রাণ ছুঁয়ে যায় ওদের ভালবাসা দেখে। সামান্য এক স্কুল মাস্টার স্নেহময়। প্রায় প্রত্যন্ত এক গ্রামে থাকে সে। এক সময় ওরা চিঠি লিখেই বিয়ে করে। মিয়াগি আংটি পাঠায়। স্নেহময় পাঠায় শাখা। কতো গভীর ভালবাসা মানচিত্রের দুই প্রান্ত থেকে জীবনের সুতোয় সংসার বুনে যায় দুই জনে। সময় গড়ায় গড়াতেই থাকলো। ওদের বিয়ের ১৫ বছর পূর্ণ হলো। ভাবতে পারেন এই ১৫ বছরে মাত্র তিনবার ফোনে কথা হয়। ৬০০ এর উপরে চিঠি আদান প্রদান হয়। জাপানী রীতি অনুযায়ী বিয়ের ১৫ বছর হওয়ায় মিয়াগি তাঁর স্বামীর জন্য বিশাল এক বক্স করে অনেক গুলো কাগজের ঘুড়ি পাঠায়। জাপানের ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি। স্নেহময় পাঠায় ফুল।

একসময় মিয়াগির ধরা পরে ক্যানসার। অনেক দিন থেকেই অসুস্থ থাকে সে। প্রথম দিকে জানতে পারেনা কি অসুখ। স্নেহময় তবুও যতোটুকু শুনেছে সেভাবে ওর জন্য ওষুধ পাঠায়। মিয়াগি সবই খুব যত্ন করে খায়। স্নেহময় খুব দুশ্চিন্তায় থাকে স্ত্রী কে নিয়ে। চাকরী থেকে ছয় মাসের ছুটি নেয়। এখানে ওখানে যায় রোগের ওষুধের জন্য।

এক ঝরের রাতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফেরে স্নেহময়। বৃষ্টি বাদল মাথায় নিয়েই সে এক ক্যানসার স্পেশালিষ্ট এর কাছে যায়। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে নিউমোনিয়া বাধিয়ে ফেলে। গ্রামের সবাই জানে স্নেহময় মানে মাস্টার সাহেবের জাপানী বউয়ের কথা। প্রায় সময় বিভিন্ন জিনিস চিঠি পত্র আসতো বলে। শুধুমাত্র একজন কে ভালবেসে তাকে চোখের দেখায় না দেখেও দুইটা মানুষ কি প্রচণ্ড ভালবাসায় জীবনের সেরা সময় গুলো পার করে গেল। ভালবাসার সাথে যৌনতার অনেক বড় একটা সম্পর্ক আছে। কিন্তু ওদের মাঝে এই ব্যাপারটা ঘটার কোন সম্ভাবনাই ছিলোনা। এটা যেন ওদের কাছে কোন মূখ্য কিছুই নয়। শুধু ভালবাসাই যেন ওদের কাছে সবকিছু। আমায় যদি কেউ বলে এভাবে কি কোন সম্পর্ক রাখতে পারবো কিনা। আমি বলবো- না। কখনোই সম্ভব না আমার পক্ষে এতোটা গভীর করে কোন মেয়েকে ভালবাসা। এতোটা মানুষিক শক্তিও আমার নাই। যা আছে স্নেহময় আর মিয়াগির। মেয়েদের কথা জানি না। কিন্তু কেন যেন মনে হয়, একটা মেয়ের ভালবাসা ঠিকই এমনই হয়। যৌনতা প্রাকৃতিক নিয়মেই সবার প্রয়োজন। কিন্তু মেয়েরা অন্যভাবে ভালবাসতে পারে। কোথায় যেন পড়েছিলাম, একটা মেয়ে যেখানে ভালবেসে মন দিতে পারে সেখানে শরীরটা দেওয়া তার কাছে কিছুই না। কিন্তু ৯৯ ভাগ পুরুষ ই শরীরটাই চায়। অস্বীকার করবোনা আমিও ৯৯ ভাগেই পরি। এই জন্যই এই স্বর্গীয় অনুভূতির প্রেম আমার জন্য নয়। আর স্নেহময় সেই ১ ভাগের মানুষ যে জানে ভালবাসা কি। কতোটা যত্ন তাকে বাঁচিয়ে রাখা যায়।

বিধাতার হিসাব আমরা ঠিক বুঝি না। নিউমোনিয়ায় মারা গেল স্নেহময়। মিয়াগির জন্য সহজ সরল প্রত্যন্ত এক গ্রামের সামান্য স্কুল মাস্টার যেই ভালবাসা ধারণ করে ছিলো তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করাটাও দুর্বোধ্য। ঠিক একই রকম ভালবাসাও ধারণ করেছিল মিয়াগি। স্বামীর মৃত্যুর পরে ক্যানসারের রুগি মিয়াগি দেশে আসলো। ঠিক বাংগালী বিধবা নারীর মতো সাদা শাড়ি পরে। ক্যানসারের কারণে চুল পরে যায় তার। গ্রামের মানুষ মিয়াগিকে দেখেই বুঝতে পারে কোন বাড়িতে সে যাবে। মিয়াগির জানা ছিল না হয়তো বিধবা মেয়েরা হাতের শাখা খুলে ফেলে। বিধবা সাজে তার হাতে শাখা ছিল। যেটা তার বৈবাহিক অধিকার বলেই মনে হয়েছে আমার। স্নেহময়ের ঘরে এসে দেখতে পেলো তার দেওয়া সব কিছুই খুব যত্নে রাখা আছে। স্নেহময় কে ওর বুনে দেওয়া মোজা গুলোও। কতোটা ভালবাসা বুকে লালন করতে পারলে এভাবে দুজন দুজনের হয়ে থাকা যায় আমার জানা নেই।

এই সিনেমার অনেক কিছুই আমি ইচ্ছে করেই বলিনি। অনেক চরিত্রের কথাই। শুধু মানুষ দুটোর প্রচণ্ড ভালবাসার কথাই বললাম। যারা দেখেননি তাদের জন্য অনুরোধ থাকলো দেখার জন্য। যদিও পুরো সিনেমার সবকিছুই বলে দিয়েছি। সবকিছু জানার পরেও আমার বিশ্বাস আপনাদের দেখে এতোটুকু খারাপ লাগবেনা। পছন্দের সিনেমা কিন্তু আমরা বারবার দেখি। অর্পণা সেন খুব দুর্দান্ত এক সিনেমা বানিয়েছেন। পছন্দের সিনেমার তালিকায় যোগ হলো আরো একটি ভাল সিনেমা।

যারা দেখেন নাই তাদের জন্য ইউটিউব লিংক:

https://youtu.be/oCSkfqn5Gos
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৫৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×