জানিস রুদ্র, এই শহরের অলি গলিতে আজো মিশে আছে তোর গায়ের গন্ধ। টিএসসি শাহবাগ কিংবা রমনার বকুলতলা। সোহরাওয়ার্দির গুড়ের চা আর বেনসনের ধোঁয়ার মাঝে তোর আমার মুখোরিত সন্ধা গুলো। সবই আজো সিনেমার মতো চোখের পর্দায় ভাসে।
এই তো, এই সেদিনেরই তো কথা। রাত ১১ টায় আমায় মেস থেকে তুলে নিয়ে সোজা চলে গেলি আশুলিয়ায়। চারদিকে থৈথৈ পানি। আকাশে ৫০০ পাওয়ারের পূর্ণিমার চাঁদ। আগে থেকেই ঠিক করাছিলো নৌকা। তুই কেমন করে যে সব কিছু ম্যানেজ করতি আজো বুঝতে পারিনা।
সারা রাত নৌকায় শুয়ে দু'জনে ভাসতে ভাসতে জোছনাবিলাস করলাম। তুই কেমন যেনো ঘোরলাগা গলায় বললি, "দেখিস শাকিল, মায়ের শরীরটা ভাল হলেই মাকে ঢাকায় নিয়ে আসবো। আর মেসের খাবার খেতে হবে না। নীরাকে বিয়ে করে টোনাটুনির ঘর বাঁধবো..."
এইটুকু বলেই থেমে গেলি, তারপরে একেবারেই চুপ আর একটা কথাও বললি না।
খালাম্মাকে ঢাকায় আনার জন্য বাসা ঠিক করলি। নীরাকে নিয়ে টুকটাক কেনাকাটা করলি। দুজন মিলে বেশ গুছিয়ে নিলি ছোট্ট ঘরটা। নার্সারি থেকে টব সহ গাঁদাফুল আর গোলাপের চারা আনলি। কেবল রাস্তাটাই ঠিক মতো পার হতে পারলি না।
আজ ১৭ই ফেব্রুয়ারি। যে তুই বইমেলা এলেই ছটফট হয়ে যেতি নতুন বইয়ের গন্ধ নিতে। সে তুই কেমন করে আছিস রুদ্র। কেমন আছিস সেটা বিধাতাই ভাল জানেন। তার হিসেব মেলাতেই তো অপার্থিবে যাত্রা করেছিস।
জানিস রুদ্র আমি সারারাত একফোটাও ঘুমাই নাই। তোর নীরাও জেগেছিলো। আমাকে ও ফোন দিয়ে শুধু বলেছে, "শাকিল ভাইয়া..." আর একটা কথাও না। নীরার ফোঁপানো কান্নায় ওর প্রতিটা নিঃশ্বাসের কাঁপন আমার বুকে শাবলের মতো গেঁথেছে। আধা ঘন্টা চুপচাপ কেবল তোর নীরার কান্না শুনেছি। এই মেয়েটাকে বলার মতো কোন শব্দ পাইনি। তোর সেই মাউথ অর্গানটা কেবল হাতে নিয়ে বসেছিলাম।
টিএসসি শাহবাগ সোহরাওয়ার্দি সবই আছে। তোর নীরাও আছে-নীরাকে দেওয়া সেই বেগুনী রংয়ের শাড়িটাও আছে। তোর সেই গাঁদাফুলের গাছে অনেক ফুল ফুটেছে। গোলাপ গাছে দুই একটা কুড়িও এসেছে। তোর নীরা তোর রেখে যাওয়া সব কিছুই বেশ যত্নে রেখেছে। কেবল সবকিছুর মাঝখান থেকে অনেক সম্পর্ককে একলা করে স্বার্থপরের মতো তুই ই একা একাই চলে গেলি।
রুদ্র আমি আজো বুঝতে পারিনা কবরস্থানের ছোট্ট একটা জায়গায় তুই কেমন করে আছিস? যে তুই পুরো ঢাকা শহর চষে বেড়াতি। কেন এমন স্বার্থপরের মতো চলে গেলি? কেন গেলি রুদ্র, কেন গেলি?
ইতি
তোর কেউ না।
(চিঠিটা ১৭ ই ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তে লিখা)।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৯