
১৯৫৮ সালে যখন রিয়াজ পারিবারিক গার্মেন্টস ব্যবসায় যোগ দেয়,তখন মেশিনের সংখ্যা ছিলো ৮টি, উনি শিক্ষিত হয়ে আসেনি,উনি ক্লাস থ্রী পর্যন্ত পড়েছিলেন, যদিও পরবর্তীতে ইংরেজী শেখার জন্য টিউটর রেখেছেন ও চেষ্টা করেছিলেন। সেই সমসময় স্পেশাল করে বানানো হতো শার্ট যা দাম ছিলো ১০০ টাকা, এলিটরা কিনে পড়তে শুরু করায়, ব্যবসা বড় করার প্রয়োজন দেখা দিলো। প্রতিক্রিয়াসরূপ মেশিন গিয়ে পৌছালো ২০ টি, ডিলার ছড়িয়ে পড়লো সারাদেশে।
১৯৬৯ সালে অক্টোবরে "বিশ্ব ভ্রমনের অংশ হিসেবে চন্দ্রবিজয়ীরা তখনকার তেজগাও বিমানবন্দরে পা রাখলো, এর আগেই হয়তো রিয়াজ ভেবেছিলো ' আমার মেশিনের তৈরী শার্ট উপহার দিয়ে " মেইড ইন বাংলাদেশ " ট্যাগ ছড়িয়ে দিবে। এপ্রিসিয়েশন লেটারে সিগনেচার আসলো তিন বিজয়ীর। উর্দু রোডের সেই রিয়াজ স্টোর সামনে অপার সম্ভাবনা দেখতে শুরু করলো। কিন্তু যুদ্ধ লেগে প্লান কিছুটা নস্ট হলেও, ১৯৭৩ সালে বিজ্ঞাপনের জন্য মোহনবাগানের জনপ্রিয় ফুটবলার চুনি গোস্বামী ও নায়ক রাজ রাজ্জাককে বানানো হলো ব্রান্ড এম্বাসেডর, যা কিছুটা আশার আলো জ্বালিয়েছিল।
১৯৭৭ সালে ধীরে ধীরে সবকিছু যখন রিয়াজ গার্মেন্টসের পক্ষে আসলে শুরু করলো তখন মেশিন বেড়ে গেলো। নিজের মেয়েকে কর্মী হিসেবে নিয়োগ নিয়ে তখনকার আর্থ-সামজিক অবস্থার শেকল ভেঙে মেয়েদের সেলাই কাজে আনতে সর্মথ হলো। অবশেষে ১৯৭৮ সালে ফ্রান্সের বায়ারের কাছে ৪লাখ ৩০ হাজার সমমূল্যের ১০০০০ পিস গার্মেন্টস রপ্তানি করে, যা পরবর্তী দুবছরে অর্ডার গিয়ে দাড়ায় লাখের ঘরে।তখন গার্মেন্টস রপ্তানী করতো সিঙ্গাপুর, সাউথ কোরিয়া, বাংলার সুযোগ দেখে জয়েন্ট-ভেন্চার করে নতুন ফ্যাক্টরি স্থাপন করলো সাউথ কোরিয়ান এক কোম্পানি।
২০০৫ সালে রিয়াজ মারা যাবার পর রপ্তানি ব্যবসাও পরকালে চলে যায়,দেখা দেয় : বিভিন্ন প্রজেক্ট সফলতার মুখ দেখে না, ব্যাংক লোন বেড়ে যায় ; পরে পরিবার থেকে এই ব্যবসায় জড়িত না হওয়ার নির্দেশনা আসে। যদিও ছেলে সালাউদ্দিন একটা বায়িং হাউস চালায় বাবার লেগাসি ধরে রাখতে; ছেলে এখন রিয়াজ গার্মেন্টস থেকে শার্ট সেলাই করে বিদেশে পাঠানোর সাহস পায় না।
রিয়াজ শিক্ষিত ছিলো না বিধায় হয়তো বুঝতে পারেনি উনার ব্যবসা হারিয়ে যাবে, উনার সময়েও গুরুত্বপূর্ণ বড় কাজসমূহও করতো সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকান ও সাউথ কোরিয়ার নাগরিকরা, যা এখনও বদলায়নি। কোরিয়াদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দেশে থাকলেই হয়, তাই ওদের আর দেখা যায় না ; এখন এসেছে নতুন অতিথী ভারতীয় শ্রীলংকানরা। সস্তা শ্রম,এনার্জী ও পরিবেশের জন্য ওরা এখন বিনিয়োগ করে,লাভ নিয়ে চলে যায়। দেশ বিদেশ ঘুরে "Made in Bangladesh ' জন্য বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতে নেই,এক্সিভিশনে যোগ দেই, আধুনিক টেকনোলজির মেশানিরারিজ মেলায় যোগ দেই। সেলাই মেশিনে বসে কাপড় বানাই আমরা খুশী,সংলা বন্দর দিয়ে কাপড় জাহাজে তুলে দিয়ে আমরা খুশি হই। ভাগ্য ভালো, রিয়াজ চন্দ্রবিজয়ীদের পেয়েছিলো, বর্তমান ব্যবসায়ীরা কোভিড থেকে প্রণোদনার মধু পেয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




