somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শামান সিম্ব্রী
একটু পাগলাটে টাইপের আত্বকেন্দ্রিক ছেলে আমি।ছোটবেলা থেকেই পাগল পাগল কথাটা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি,মেনেও নিয়েছি।বিদ্যালয় জীবনটা তেমন সুখের ছিল না,তেমন একটা মনে রাখার চেষ্টা করিও না।সিনেমা পাগল,সিনেমা নির্মানের স্বপ্ন দেখি,আর অদক্ষ লেখনীর মাঝে পাগলামি করে বেড়াই

মরিচিকাঃ ১ম পর্বের পর

০৬ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের পর্বঃ কেদার মিত্র

এই শহরে একজন নায়ক আছেন, হ্যা নায়ক। নাহ তিনি মঞ্চের কিংবা যাত্রার কোন প্রিন্স নন আবার কোন সঙ্গীত শিল্পীও নন, নন কোন রাজনীতিক নেতা কিংবা নবাব পরিবারের নবাবজাদা। তিনিও একজন শিল্পী, যাদু শিল্পী, কেউ কেউ বলেন তিনি সত্যিকারের যাদুকর ইংরেজীতে যাকে বলে উইজার্ড। শহরের ছেলে বুড়ো এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের রমনীগনও তার যাদু দেখার জন্য মঞ্চে হাজির হয়। কত চমৎকার চমৎকার অবাক করা ব্যাপার দেখায় লোকটা। বীজ থেকে চোখের পলকে গাছ বড় করে তাতে কমলা ফলান যেন তেন বিষয় না! পাখিগুলিকে অদৃশ্য করে আবার ফিরিয়ে আনে, এইতো সেদিন নিজেই অদৃশ্য হয়ে অন্য দড়জা থেকে বের হলেন। কিভাবে এসব করেন কেউ জানে না, সবার কৌতুহলই তাকে যেন নায়ক বানিয়ে দিয়েছে। মি উইলিয়ামের মৃত্যুতে পুরো শহরে থমথমে ভাব দেখা যাচ্ছে কিছুদিন যাবৎ। ইংরেজ সরকারের পুলিশ বাহিনী পুরো শহর চষে বেড়াচ্ছে, কাউকে সন্দেহ হলেই গ্রেফতার করছে, চিটাগং এ কয়েকবছর আগে এরকম ভয়ানক অবস্থা বিরাজ করেছিল এখন তার থেকেও বেশী উদ্বেগজনক অবস্থা এখানে। প্রশাসনের বাঙ্গালীরাও ভয়ে ভয়ে আছে। আজকের শো খুব ভাল নাও চলতে পারে ভেবেছিলেন রনজিৎ দাস। তিনিই আজ কেদার মিত্রের শো এর উদ্যোক্তা। শহরের যে অবস্থা তাতে শো খুব ভাল চলার কথা নয় কিন্তু সন্ধ্যা হতেই একে একে লোক জড় হতে থাকল। সকলের আকর্ষন কেদার মিত্রের সবথেকে রোমাঞ্চকর যাদু " Sawing a woman in half" দেখবে। কত ভয়ানক ও রোমাঞ্চকর যাদুরে বাবা, একটা মেয়েকে একটা বাক্সের ভিতর প্রবেশ করিয়ে তাকে দুইভাগ করে আবার তাকে জোড়া লাগায়! কি আশ্চর্য ব্যাপার। কেউ কখনও শুনেছে আগে এসব যাদুর কথা? এসব যাদুকররা নাকি বিভিন্ন দেশে গিয়ে এসব শিখে আসে। কেউ কেউ বলে কেদার মিত্র কামরুপ কামাক্ষা থেকে এসেছে আবার কেউ বলে সদুর ইউরোপের কোন দেশ থেকে এসব শিখেছে। কার কথা সত্যি কে জানে? এসব ভাবার থেকে সকলেই অপেক্ষায় তাদের নায়কের জন্য। কিছুক্ষনের মধ্যে শুরু হবে কেদার মিত্রের খেলা আর অবাক হবে পুরো কক্ষ। একে একে বাতি নিভতে শুরু করল আর সরে যেতে শুরু করল মঞ্চের পর্দা। মঞ্চ অন্ধকারাচ্ছন্ন, হঠাৎ করে জ্বলে উঠল মঞ্চের বাতি কিন্তু সেখানে কেউ নেই। কোথা থেকে অদৃশ্য মন্ত্র জপার শব্দ শুনতে পেল সবাই, সবাই এদিকে ওদিকে তাকাতে থাকল, হঠাৎ করে দর্শকের সামনে উদয় হলেন কেদার মিত্র। যাদুর মাধ্যমেই যাদুকরের উদয় একেই বলে যাদুকর। শুরুতেই তিনি একজন দর্শককে ডাকলেন, বরাবরের মত আজও ডেকেছেন একজন মহিলাকে। অপুর্ব সুন্দর একজন নারী, যার পরনে আছে মেমসাহেবদের মত গাউন, দেখেই মনে হয় কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে অথবা স্ত্রী। তার হাত ধরে আস্তে আস্তে নিয়ে আসলেন কেদার মিত্র। মঞ্চে আসার পর রমনীর হাতে একটি রিভালবার দিলেন তিনি। রিভালবারে মাত্র একটা বুলেট, ঘোড়ায় চাপ দিলেই গুলি বের হবে আর তা হাত দিয়ে অক্ষত অবস্থায় ধরে ফেলবেন কেদার মিত্র। সকলে হতভম্ব। পুরো কক্ষে পিনপতন নিরাবতা বিরাজমান। হঠাৎ করে বিকট শব্দে প্রকম্পিত হল পুরো কক্ষ, অধিকাংশই ভয় পেয়ে গেলেন, মেয়েটা ঘোড়ায় চাপ দিতেই বের হয়েছে বারুদ কিন্তু অবাক ব্যাপার কেদার মিত্র দ্বাড়িয়ে আছে ঠায়, তার হাতে গুলিটা। নাহ! এতো চমৎকার যাদু। মুহুর্তেই মুহুর্মুহু করতালিতে ভরে গেল চারপাশ। একে একে বিভিন্ন ভ্রমেই সকলকে বিস্মিত করে যাচ্ছেন কেদার মিত্র কিন্তু এখনও তাদের কাঙ্ক্ষিত যাদু দেখাল না কেদার। কিন্তু অপেক্ষার পালা শেষ। কেদার হাততালি দিতেই একজন সাদা চামড়ার নারী প্রবেশ করলেন মঞ্চে, তার পরনের পোষাক দেখে কেউ কেউ লজ্জায় রক্তিম বর্ন ধারন করল। তারা অবশ্যই বাঙ্গালী,কোন কোন বাঙ্গালী মনে মনে বললেন এসব স্লেচ্ছ নারীদের না আনলেই কি না? অন্যদিকে ইংরেজ দর্শকরা চুপচাপ বসে আছে। তাদের ভিতরটা উত্তেজনায় কাপছে।
একে একে কেদার মিত্রের দুই সহাকারিও এসে গেল।দুই সহকারি মেয়েটাকে ধরে একটা টেবিলে শুইয়ে দিল, এরপর দুইটা আঙ্গাটা দিয়ে তাকে বাধল, উক্ত নারীর চোখেও প্রচন্ড ভয়, এমনকি তার মুখটাও বেধে ফেলা হল। এরপর তার উপর দুটি বাক্স রাখা হল। শেষে তার হাত দুটিও বাধা হল। এখন কোন কিছুই আর নাড়ান সম্ভব না সেই মেয়েটির পক্ষে। এরপরই বন্ধ করে দেয়া হল বাক্সের দড়জা। সকলের ভিতর পিনপতন নিরাবতা। ভয় যেন গ্রাস করে আছে তাদের। এরপরই কেদার মিত্র একটি কড়াৎ বের করলেন। সকল দর্শক হতভম্ব হয়ে গেল। কেদার মিত্র ও তার নারী সহকারি মিলে কড়াৎ চালাতে থাকল সেই বাক্সের উপর দিয়ে। করাৎ চালাতে চালাতে মেয়েটার শরীর ভেদ করে ফেলল। তাতেও সে তুষ্ট নয়। ২ টা ব্লেড নিয়ে আসল আরেক সহকারি। সেই ব্লেড দুইটি একে একে দুই বাক্সের মাঝে প্রবেশ করালেন। মেয়েটা বেচে আছে তো? নাকি মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেছে সে। এবার তারা দুইটা বাক্স আলাদা করে সকলকে দেখালেন। আলাদা করার পর কেউ কেউ পারলে চিৎকার করে উঠছে। আবারও সেই বাক্সকে সঠিক স্থানে এনে বসালেন কেদার মিত্র ও তার সহাকারি। সবার দম যেন বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর ধীরে ধীরে ব্লেড উঠিয়ে ফেলা হল বাক্স থেকে। এরপর প্রমান করার পালা, তিনি কি সফল নাকি ব্যর্থ। বাক্স খোলা হল। একি! একি হল? মেয়েটা বেঁচে আছে আর তার পেটেও কোন দাগ কারো চোখে পরল না। মুহুর্তেই করতালিতে ভরে উঠল চারপাশ। সকলে অভিবাদন জানাচ্ছে কেদার মিত্রলে। সাহেবরা এসে করমর্দন করছে, পুরস্কারে ভুষিত করছে কেদার মিত্রকে।
আজকের শো শেষ! সবাই ঘরে ফিরছে। কেদার মিত্র বের হল। একা একাই ছড়ি নিয়ে হেটে যাচ্ছে, নিয়ন আলোয় জ্বল জ্বল করছে কার্জন হলের কাছের রাস্তা। কেদার মিত্রের হাতে একটি লাল গোলাপ সে যাচ্ছে কোথাও।
ও হ্যা বলা হয়নি হি হ্যাজ এ ডার্ক সিক্রেট।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×