somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প - গাধা, খোঁয়াড় এবং রাজবন্দী ।

০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভদ্রলোক বসেছিলেন পার্কের কোনার খালি বেঞ্চটিতে । তার মত অনেকেই আসেন জায়গাটিতে । তিনিও আসেন – প্রায়শই। কর্মব্যাস্ততার মাঝে উপভোগ করেন নির্জনতাকে । এই বুড়ো বয়সেও তার ব্যাস্ততার শেষ নেই । তাকে ভাবতে হয় সবাইকে নিয়ে । স্ত্রী- পুত্র, সমাজ সংসার- সবাইকে । আসলে যেখানে তার অবস্থান, সেথা হতে ভাবতে হয় বলেই তার ভাবনা ।

তার সার্বিক ভাবনার অনেকটা কিংবা কেন্দ্রবিন্দু যে পরিবার- এ সত্য। পারিবারিক ভাবে তাকে আদর্শ কর্তা, পিতা-স্বামী সবই বলা চলে। এই ‘সবটা’ অর্জনেও তাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে বিস্তর। আসলে, তার এ সংগ্রামই ছিল ‘’সবটা’ অর্জনে। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন ভদ্রলোক।

বিকেলের সোনালী আভায় ঝিলমিল করছে লেকের স্বচ্ছ পানি। একটা গাছ তর পুরো অববয় নিয়ে নুইয়ে পরছে লেকের উপর। সেখানে, মগডালে, তিনতে পাখি বসে আছে পাশাপাশি । পাখিগুলো তার চেনা নয়; কিন্তু বুঝতে পারছেন, মাছ শিকারের আসায় বসে আছে। তবে শিকার পেল কি পেল না তার জন্য ধৈর্যের কমতি নেই পাখিগুলোর। পাখিগুলোর সংগ্রাম এ জন্যই। ভদ্রলোকের মন উদাস হয়ে যায়। সেও সংগ্রাম করেছে এবং পুরোপুরি না হক, অনেকটাইতো পেয়েছে। তবে দীর্ঘশ্বাস কেন ?

দীর্ঘশ্বাস তার নিজের জন্য। চাওয়া-পাওয়ার মাঝেই জীবনকে সীমাবদ্ধ রাখলে সে সীমাবদ্ধতাই ফিরে দীর্ঘশ্বাস হয়ে। কিন্তু সে দীর্ঘশ্বাসের উপলদ্ধি কারও হয়না । ভদ্রলোকেরও হয়নি। বরং ‘চাওয়া’ টা ‘পাওয়া’ তেই তিনি খুশী।

পরিবারের বড় সন্তান তিনি । সব বাবা-মায়ের বড় সন্তানকে ঘিরে যে চাওয়া থাকে, তা পুরন করেছেন। বাবা-মায়ের চাওয়ার পাশাপাশি তার নিজের চাওয়াও ছিল বৈকি।

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তিনি। অন্য সবার মত তার সংগ্রামটিও তৈরি হয় বিত্তকে ঘিরে। শত প্রতিকূলতা সত্তেও লেখাপরা শেষ করেন। শৈশবে বাবা-মার কাছ থেকে শেখা- ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়ি-ঘোড়ায় চরে সে’; সেই গাড়ি-ঘোড়ার স্বপ্নই তাকে হাতছানি দিয়ে নিয়ে এল কর্মক্ষেত্রে। তারপর আবার নতুন আরেকটি সপ্ন- একটি সংসার। আসলে স্বপ্নরা এমনই, একটি পূরণ হলে আর একটি এসে ভীর জমায়। একজীবনে সবার সব স্বপ্নও তাই পূরণ হয়না। অবশ্য তাকে দোষ দেয়ারও উপায় নাই। সবার স্বপ্নগুলার ভিত থাকে একই রকম। ব্যাতিক্রম যারা তারা স্বপ্ন দেখান।

একটি মেয়েকে তিনি ভালোবাসতেন। কিন্তু সে ভালবাসা আগলে রাখতেন নিজের মাঝেই। বিশেষতঃ মধ্যবিত্তের ছেলেমেয়েরা ‘রোমান্টিকতার’ মাদকতায় এগিয়ে থাকলেও সে রোমান্টিকতার প্রকাশটা থাকে ভিন্ন। এ ‘ভিন্নতা’ সমাজেরই সঙ্কীর্ণতা। যারা এই সঙ্কীর্ণতার দেয়াল ভাঙ্গতে চায়, তারা নিজেরাই পরে আছে সে দেয়ালেরই নিচে। তিনি ও পথে যাননি- অন্য সবার মত পাশ কাটিয়ে গেছেন। তাতে অবশ্য তার কোন দুঃখ নেই। বংশীয়, অবস্থাসম্পন্ন সুন্দরী স্ত্রী পেয়ে সে ভালোবাসা মরে গেছে অনেক আগেই। হয়তবা তিনি বিসর্জন দিয়েছেন, কিন্তু নিজের কাছে নিজেই যে প্রতারক তার বিসর্জন বলে কিছু নেই।

তিনি প্রতারনা করেছেন নিজ জীবনের জন্য। জীবনে- যেখানে জীবনের চেয়ে জাগতিক সূরটাই বেশী আন্দোলিত হয়, জীবন সেখানে চাপা পড়বেই বৈকি। জাগতিক সূরটা মোহ- ভুলিয়ে দেয় সবাইকে। তার জীবনটাও অন্য সবার মত মোহাবিষ্ট।

সে মোহাবিষ্ট সপ্নের আবেশে তার সংগ্রামের পথটাও আবর্তিত হল নতুনভাবে। খেয়ে-পরে একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকা। কিন্তু এই একটুর কোন পরিসীমা নেই। নিন্দুকেরা যাই বলুক, কর্মক্ষেত্রে তিনি ছিলেন নিষ্ঠাবান। অন্তত তার আশেপাশের সবাই তাই বলে। তিনিও বেশ জানতেন, কিভাবে কি ‘অর্জন’ করতে হয়। তাই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে যখন স্ব পরিবারে অবস্থান নেন, কেউ কোন মন্তব্য করেনি। প্রতিবেশিরাও খুশি- এরকম একটি পরিবার পাশে পেয়ে। বখাটেরাও খুশি, চাঁদাবাজরা খুশি, খুশি বুদ্ধিজীবী এবং রাজনীতিবিদরাও। আমলাতান্ত্রিক পরিবার তো মহাখুশি। খুশি সবাই।

তার সেই মধ্যবিত্ত পরিবারের বর্তমান বাবা-মাও খুশি। ছেলে বৃদ্ধ বাবা মাকে ফেলে স্ত্রী-সংসার করছে শহরে- তবুও খুশি। তার মোটা আয়ের একটা অংশ চলে আসে এখানে- বেশ ভালভাবেই কেটে যাচ্ছে তাদের দিন। আত্মীয় পরিজন সবার কাছে গল্প করে বেড়ান তাদের সুযোগ্য সন্তানের। মধ্যবিত্তের যেখানে পান্তা আনতে নুন এরও প্রয়োজন ছিল বৈকি, সেখানে নুন এবং পান্তা দুটোই মিলে যাচ্ছে সহজে। পরিচিতদের সবার কাছে গর্বভরে মাথা তুলতে পারেন, যে মস্তক সারাজীবন নতই ছিল। পরিচিতরাও তাদের গর্ব কে মূল্যায়ন করে। তারা সবাইও জড়িত কোন না কোন ভাবে এ গর্বের সাথে। তারা উৎসাহ পায়, সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছে- পেয়েছে প্রতিযোগিতায় নামার প্রতিযোগীকেও।

তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। তিনি মহানুভব- সবারই তাই ধারনা। তাদের ‘ধারণা’ কে অর্জনে দান করতেন অল্প বিস্তর। সব মিলিয়ে সবার চোখে তিনি আদর্শ; সে ব্যক্তি সমাজ পরিবার কিংবা দেশ- সবার।

নিজের ছেলেকেও বলতেন সে কথা।

শৈশবে বাবা-মার সংগ্রাম তিনি দেখেছেন। দেখেছেন জীবন-যুদ্ধে তারা কত অসহায়। সংগ্রামের ধারাটা একই রকম। এবং যারা পিছিয়ে পরে, এগুতে থাকা দলের কাছে তারা সবসময়ই অসহায়- কৈশোরে এসে উপলদ্ধি করেন এ চরম সত্যটি। তাই তার সংগ্রামের আবর্তও তৈরি হয় সবার মত একই। পাল্লা দিয়ে তিনি পৌঁছে যান তার আশেপাশের সবার আগে। সেখানে পৌঁছে আবিস্কার করেন- ধারাটা চিরন্তনই বটে। একসময় তিনি পৌঁছে যান- কিন্তু এখানে গন্তব্য বলে কিছু নেই। সেখানে এসে তিনি হারিয়ে ফেলেন কিম্বা ভুলে যান একই পথে যারা পিছিয়ে আছে তাদের। তবে তিনি স্বার্থপর নন যদিও স্বার্থটাই মুখ্য। অন্য সবার মত তার সহানুভূতিগুলো এ স্বার্থেরই অংশ।

তার বাবা-মার স্বার্থ ছিল তিনি আদর্শ মানুষ(?) হবেন। তার পরিবারের স্বার্থ ছিল তিনি আদর্শ কর্তা (?) হবেন। তার আশেপাশের মানুষের স্বার্থ ছিল তিনি মহানুভব(?) হবেন । এবং সবার উপরে তারও স্বার্থ ছিল এই স্বার্থগুলি। এ স্বার্থ নিয়েই তার সংগ্রাম! এ সংগ্রামই জীবন(!!), এবং এ জীবন-জীবনধারা নিয়েই তার সমাজ (!!!). . . . . . ।

ভদ্রলোক ভাবছিলেন তার বর্তমান পরিবার নিয়ে। বড়ছেলে পড়ালেখা করছে। ছেলেকে তিনি গড়ে তুলেছেন তার আদলে। একদিন সেও মানুষ হবে। তার হবে একটি আদর্শ পরিবার এবং সে হবে সে আদর্শ পরিবারের আদর্শ কর্তা।

সে হবে মহানুভব, কারন সে এই সমাজেরই একজন।

সমাজ- তিনি নিজেও গর্ব করবেন ছেলেকে নিয়ে।







বাউন্ডুলে লোকটি পার্কের এ পথ ধরেই যাচ্ছিলেন। তার ‘বাউন্ডুলে দৃষ্টিভঙ্গি’ পার্কের বেঞ্চে বসা ভদ্রলোকেও দেখতে পেল না। পার্কের সর্পিল রাস্তা শেষ হয়েছে সচ্ছ জলরাশির ছন্দ-হিল্লোল লেকে। নুইয়ে পড়া গাছের ডালে যে তিনটি পাখি বসে ছিল, তারা চলে গেছে। পাখিগুলো থাকলে মুগ্ধ করে দিত বাউন্ডুলে কে। । তবে সে মুগ্ধ, এমনকি বর্ণনার ভাষাও তার অপ্রতুল। লেকের ও পাড়ে দুটো কৃষ্ণচূড়া গাছ দাড়িয়ে আছে পাশাপাশি। অনেক গাছের মাঝে আলাদা দিপ্তিময়- সহজেই দোলা দেয় মন কে। সবুজ ভুমির ‘পরে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম-রক্তাভতায় শিহরিত নীলাকাশ। বাউন্ডুলের মন উদাস হয়ে যায়।

'ঘোলা পানির আবর্তে কাটছিল তার দিনগুলো। সময়ের সাথে একাত্ম হয়ে যখন তার ঐকান্তিক অভিপ্রায়, ঠিক সেই সময়টা যেন চেনা-জানা কাছের আপনদের হঠকারিতায়; ঝড়ের শেষে নিরহারা পাখির মত আর্তনাদ করে ফিরে অসময়ে বহমান তার সত্তার বিমর্ষতাগুলি। জীবনটা ক্ষুদ্র; এতটাই ক্ষুদ্র যেন বিশাল সমুদ্র সফেনের সাথে একবিন্দু অশ্রুরাশির তুলনা, অথচ সেই বিন্দু কণার ব্যাপ্তিকাল পৃথিবীর সময়াবর্তের অনেকগুলো দিন, মাস-বছরের হিসাব পেড়িয়ে... আরও দূরে... অনতিকাল দেখার অন্মেষায়- প্রতিটা মুহূর্তের সেই নিজেকে পৃথিবীর বুকে নিজেকে প্রতিষ্ঠা কিংবা আপন অস্তিত্বকে মায়া-ঘৃণা অথবা পাপিষ্ঠাচারের হিসাব পেড়িয়ে আপন সত্তার উল্লাসিত মিছিলে আজকের নির্জন রাস্তার বন্ধুর পথের বাঁধনহারা একাকি পথিক সে; অথচ কি আশ্চর্য- বিন্দুকনার সে হিসাবনিকাশের পাতাটা যখন জীবন ডায়েরি থেকে উল্টায়, বিস্ময়ে থমকে যেতে হয় একটা মুহূর্তের জন্য- কতটা পথ আজ পারি দিয়েছে সে; তবুও পথের শেষ প্রান্ত- যেখানে ঘিরে তার অনন্ত মায়াজালের সপ্নবিহার- একটি স্বর্ণালী বিকেল, যে বিকেলের প্রতিটা সেকেন্ড তার নিজের-আপনার-একান্তেই অন্যের অভিপ্রায় ছাড়িয়ে আপনার; অথচ সেই সপ্নের স্বর্ণালী বিকেলের সন্ধানে বিমর্ষ রাস্তায় দেশ-জনপদ পেড়িয়ে আরও দূরে- কিন্তু বিকেলটা এখন মরীচিকা; ক্ষুদ্র বিন্দুকনার হিসাবটাও আরও জটিল হয়ে যাচ্ছে তাই। পাখীরাও স্বপ্ন দেখে ঝড়ের শেষে ছিন্ন পালকের সত্তা থেকে উঠে এসে আবার নতুন করে সাজাবে তার আপন ধরণী; তার প্রচেষ্টা সফল হয়, কিন্তু সফল হয়না উদ্ভ্রান্তের নিজের- যখন স্বর্ণালী বিকেলের স্বর্ণাভার পিছু পিছু যেন আলোকবর্তিতা হাতে কোন সিদ্ধপুরুষ তার অন্ধকারের বেড়াজাল ছিন্ন করে পথ দেখাবার প্রয়াস পায় তার বিকেলের, ঠিক তখনই কোন অন্ধকারের প্রেত অট্টহাসি হেসে তার অশুভ-প্রচণ্ড একটা টর্নেডো আঘাত হানে উদ্ভ্রান্তের পথের সপ্নতে। বিকেলের স্বর্ণাভা বিলীন হয়ে যায়- ঘোরের আবর্তে পড়ে সে নিষ্ঠুর প্রহসনে বিশ্বচরাচরের মাঝে একাকী মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে নির্জন রাস্তায়। সপ্নের সে রাস্তাটা মুহূর্তেই হয় কণ্টকিত,বিষাদময়। যতদূর দৃষ্টি যায়- কেউ নেই, কোথাও কেউ নেই- অন্ততঃ সবটুকু না হোক, একটু আশ্বাসের বানী কিংবা মুখ থুবড়ে পড়া তার সত্তার ধূসর-বিবর্ণ পাণ্ডুলিপির মলিন পৃষ্ঠাগুলোতে সামান্য সময়ের জন্য হলেও দৃষ্টি বুলিয়ে যাক কেউ- তবুও কেউ দেখে না, কেউ শোনায় না মুক্তির গান, কেউ দেখায় না পথের ঠিকানা। সপ্নের রাস্তার ধুলোময় পথে সুধুই পরে থাকে ইতস্ততঃ কালের আবর্তে হয়তবার হারিয়ে যায় পাণ্ডুলিপির সে পৃষ্ঠাগুলো। ............ তবুও অন্ধকারের দম্ভ চূর্ণ করে সূর্যের একচিলতে প্রথম স্বর্ণাভা তার স্নেহের পরশ বুলিয়ে যায় সমব্যথী কে। আলোকবর্তিকা হাতে চলে তার সিদ্ধপুরুষ, পিছু পিছু আবারও সে। তারপর অচেনা পথ ......... পথের ধূসর প্রান্তর ... ...... প্রান্তরের নীল গদ্যভুমি ......... ।'

কৃষ্ণচূড়ার ‘পরে অসীম দিগন্তে বিক্ষিপ্ত বিহঙ্গরা চলছে আপন গন্তব্যে। বাউন্ডুলের কোন গন্তব্য নেই। সমাজ পরিবার সংসার- সবকিছু থেকে আজ সে নির্বাসিত। তারকাছে পুরোটাই অর্থহীন। কি লাভ মিছে মিছে এর পিছনে সংগ্রাম করে। সবাই যেখানে আপন অস্তিত্বের সংগ্রামে ব্যাস্ত, সেখানে অস্তিত্বটাই তার কাছে অর্থহীন মনে হয়। সবাই ছুটছে। বাউন্ডুলেও ছুটছে । তবে তার এই চলা অনন্ত সুন্দরের উদ্দেশে, যেখানে শ্রেণী বিভাজনের কালো রূপরেখা নেই, নেই অসত্য আর অসুন্দরের মিথ্যে প্রলয় ঝঙ্কার । এ জীবন কে সে উপভোগ করতে চায় ধরিত্রীয় বিশালতার সাথে। পিছনে দেখার অবকাশ নেই। তবুও মনের আঙ্গিনায় অবাক্ত বেদনার ঝড় উঠে। কখনও দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে তপ্ত পৃথিবীর বুকে। এ পৃথিবী নিষ্ঠুর-স্বার্থপর- তার অশ্রুর কোন মূল্য নেই এর কাছে। সে অশ্রু ফেলবে সেই পৃথিবীতে, যে পৃথিবী তার অশ্রুধারায় সিক্ত হয়ে মহিমান্বিত করবে নিজেকে।

সে পৃথিবী- সে জীবনের সন্ধান সে পেয়েছে, তাইতো তার এই ছুটে চলা। এখানে তার সবাই আপন- ঘাসের উপর বিন্দু বিন্দু শিশির জল থেকে অনন্ত গ্রহ নক্ষত্রের মাঝে হারিয়ে যাওয়া হঠাত আগমনী ধুমকেতু- সবাই। সৃষ্টির প্রতিটি বিন্দুকনার মাঝে খুজে পাওয়ার প্রয়াস নিচ্ছে নিজেকে। অকৃপণ ধরিত্রিই তার আলোর দিশারী।
বাউন্ডুলের মন চলে যায় সেই সপ্নের জগতে। সে ছলছে প্রান্তর হতে প্রান্তরের পথে। সেখানে বিশাল বিশাল লাল কৃষ্ণচূড়া অভিবাদন জানাচ্ছে বাউন্ডুলে পথিককে। সবুজ ঘাসের গালিচার ‘পরে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া তাদের অসংখ্য পুস্প পল্লবের বারিধারার ন্যায় অভিবাদনে শিহরিত সে। ধরিত্রীর পুরোটাই আজ সেজেছে তার সর্বশ্রেষ্ঠ রূপে। বিকেলের স্বর্ণাভা তার অপার্থিবতাকে বিলিয়ে যাচ্ছে অকাতরে.........।

স্বর্ণলী সেই বিকেল হাতচ্ছানি দিয়ে ডাকছে বাউন্ডুলে কে ।






গাধাটাও ঘাস খাচ্ছে আপন মনে। পার্কের ঘাসগুলো বেঁড়ে উঠেছে লকলকিয়ে এবং গাধাটাও সেগুলো নিবৃত্ত করে উদর পূজা চালাচ্ছে। ঘাসগুলোর বেড়ে উঠা যেন গাধার জন্য, আর গাধারও জন্ম যেন এ ঘাস খাওয়ার জন্য। সামান্য দুরত্তে বসা ভদ্রলোক কিংবা লেকের ধারের উদাসী দৃষ্টির বাউন্ডুলের প্রতি তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই । নেই ভ্রুক্ষেপ পারিপার্শ্বকতার ‘পরেও- রাত দ্রুত ঘনিয়ে আসছে।

গাধাটির মালিকও হয়তবা একটু পরে চলে আসবে গাধাটিকে নিয়ে যেতে। তারপর তার অবস্থান হবে খোঁয়াড়ে, এবং সেখানে রাত্রি যাপনের পরে তার পরবর্তী দিনটিও শুরু হবে পূর্ব দিনের মত।
ভদ্রলোক এবং বাউন্ডুলে লোকটি চলে গেল গাধার পাশের রাস্তা দিয়ে। গাধাটির প্রতি তাদের কোন আগ্রহ নেই। গাধাটিও নির্বিকার- খালি পার্কে ঘাস খেয়ে চলছে আপনমনে।

রাতের অন্ধকারে গাধাটিকে আর দেখা যাচ্ছে না। তবে বোঝা যাচ্ছে সে আছে। রাতের নিরবতার মাঝে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে তার ঘাস চিবুনের সব্দ !

মালিক ভদ্রলোকেরও কোন তাড়া নেই- তিনি জানের তার গাধা কখনও পালাবে না।

‘গাধাটি মুক্ত-স্বাধীন এবং গাধা’।








দার্শনিক ভদ্রলোক গল্পটি সবাইকে বলছিলেন। শেষে একটি প্রশ্ন রাখলেন সবার জন্য। প্রশ্নটি হল- উক্ত গল্পের ভদ্রলোক, বাউন্ডুলে এবং গাধার মধ্যে বিশেষ একটি মিল রয়েছে। মিলটি কি ? সবাইকে বেশ চিন্তিত মনে হল। তাদের দৃষ্টিতে গল্পটির কোন মাথা-মুণ্ডই নাই !

একজনকে বেশ উৎফুল্ল মনে হল। হ্যাঁ, তিনি মিল পেয়েছেন এবং সবাই সমর্থনও করলো তাকে। মিলটি হল- তিনটিই প্রাণী !!!

কর্মবাস্ততায় পরিপূর্ণ মুখরিত জনপদ ধরে এগুচ্ছেন দার্শনিক ভদ্রলোক। কেউ কেউ ব্যস্ত তাদের জীবন সংগ্রামে, আবার কেউ কেউ ব্যস্ত সে সংগ্রামকে পাশ কাটাতে এবং এই ব্যস্ততা সমাজ সৃষ্ট গতানুগতিক জীবনধারা।

দার্শনিক ভদ্রলোক দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। পরিচিত অনেকেই দেখছে তাকে, কিন্তু তিনি কাউকে লক্ষ্য করছেন না। তার কেবলই মনে হচ্ছে...... চারপাশের পুরোটাই বিশাল এক খোঁয়াড়... সেই খোঁয়াড়ে অসংখ্য গাধা... তাদের মাঝখানে দাড়িয়ে আছেন তিনি......।

দ্বিতীয় বারের মত দীর্ঘশ্বাস ফেললেন দার্শনিক ভদ্রলোক।

তিনি রাজবন্দী।

(রচনাকাল- ২০০৩, লেখাটি আমার সম্পূর্ণ মৌলিক লেখা। পূর্বে কোথাও প্রকাশিত হয়নি।)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:১২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×