somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইরা

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটি কি করবে বুঝতে পারছেনা,তার খুব কান্না পাচ্ছে,অসম্ভব টেনশন লাগছে। হাটতে পারছেনা ,পায়ের গতি কমে যাচ্ছে ভয়ে ,তবুও সে প্রানপনে চেষ্টা করছে যত দ্রুত সম্ভব বাসায় পৌঁছতে।ভয়ে তার প্রচন্ড পানির পিপাষা পেয়েছে।ভয় পেলে মানুষের পানির পিপাষা পায় ,তবে তার কান্নার কারণে পিপাসার
মাত্রা আরো বেড়ে গেছে ,এখন তাকে যত দ্রুত সম্ভব বাসায় ফিরতে হবে।

এমন চরম বিভ্রান্তিকর অবস্থায় সে এর আগে পড়েনি,তাই কি করবে বুঝতে
পারছেনা,ঘটনার শুরু আরো ছয় মাস আগে।

সকাল সাতটায় স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে,গলির মুখে বের হয়ে বড় রাস্তায়
যাবে এমন সময় একটি মোটর সাইকেল তার সামনে এসে থামল,একটা ছেলে তার সামনে
এসে দাড়িয়ে সানগ্লাস খুলে প্রশ্ন করে,
- কি নাম তোমার
- জ্বি ইরা
নিচু গলায় উত্তরটা দিয়ে ইরা লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখে,ফর্সা করে ছেলেটা,সুঠাম শরীর,একটা হলুদ টি শার্ট পরা,বয়স পঁচিশ হবে,
- তো ইরা,কোন ক্লাসে পড় ?

ইরা কি বলবে বা কি করবে বুঝতে পারছে না,সে খুব মৃদুভাষী মেয়ে,আর সবসময়
আস্তে আস্তে কথা বলে,সে মাথাটা নিচু করে উত্তর দিলো
- ক্লাস নাইন,
- তোমাকে একটা কথা বলার জন্য থামিয়েছি,
- জি বলুন....
- তুমি যে কত সুন্দর তুমি জানো ?
ইরা এবার ভয় পেয়ে গেল,সে কোনো কথা না বলে হাটতে লাগলো,ছেলেটি তার পথ
আগলে দাড়িয়ে তার হাতে একটি প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল
- এটা তোমার জন্য,একটা মেকাপ বক্স এখানে আছে,তুমি সাজলে তোমাকে আরো
সুন্দর লাগবে,আর হ্যা,আমার নাম সজল,ওই যে বাড়িটা দেখছ সেটা আমাদের,এখন যাই পরে দেখা হবে,
ইরা কি করবে বুঝে উঠার আগেই ছেলেটি বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।

ইরা প্যেকেটটা ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে চলে গেল,সে এই ঘটনাটা কাউকে বলেনি,তার
কাছে খুব খারাপ লেগেছিল সে প্যাকেটটা ফেরত দিতে পারেনি বলে।

এর পর ছেলেটি প্রায়ই ইরার সাথে রাস্তায় কথা বলত,সাথে একজন করে বন্ধু থাকত, একেকদিন একেক বন্ধু,তার বেশিরভাগ বন্ধু যাওয়ার সময় ইরাকে নিয়ে খারাপ
মন্তব্য করত,ইরা সেটা লক্ষ্য করতো

এসব ঘটনা সে তার বাবা মাকে লজ্জায় বলেনি,তার ভয় হয় এসব শুনার পর যদি ওই
ছেলেটিকে তার বাবা কিছু বলে ? তাহলে ছেলেটি হয়ত কোনো খারাপ কিছু করে
ফেলতে পারে,এর কিছুদিন পর একদিন দেখে সজল রাস্তায় একা.ইরাকে দেখার পর সজল
এগিয়ে এসে বলে
- ইরা চলো বাইকে উঠো
- মানে ?
ইরা কিছুটা জোরে কথাটা বলে,ছেলেটি তার পকেট থেকে একটা মোবাইল বের করে
ইরাকে দিয়ে বলে
- এটা রাখো,আর বাইকে উঠো আমি তোমাকে পৌছে দিচ্ছি,
ইরা এবার তার ব্যাগ খুলে সেদিনের সেই মেকাপ বক্সের প্যাকেটটা ওই ছেলের হাতে দিয়ে বলল
-কি পেয়েছেন আপনি? প্রত্যেকদিন আমাকে আপনি ডিস্টার্ব করেন কেন? আর এই বক্সটা আমি আপনাকে আরও আগেই ফেরত দিতাম,কিন্তু আপনাকে একা পাইনি তাই দিতে পারিনি, আর কোনদিন আমাকে ডিস্টার্ব করবেননা।
একথাগুলো ইরা একনাগাড়ে বলে থামল , ভয়ে তার বুকটা কাঁপছিল,
ছেলেটি ওই প্যাকেটটা আর মোবাইলটা হাতে নিয়ে খুব শান্ত ভাবে বলল
-ইরা, আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি তুমি জাননা, রাগ করোনা, এগুলো রাখো।
এটা বলেই সে ইরার হাত ধরে বাইকে তোলার জন্য টানাটানি করল......
ইরা লজ্জায় আর ভয়ে সেখান থেকে চলে গেল,ঘৃণায় তার লাল মুখটা কালো হয়ে গেল।

তারপর ইরা ভেবেছিলো তার বাবাকে কথাগুলো বলবে, কিন্তু সে অপেক্ষা করতে চাইল, ইরা ভেবেছিলো ছেলেটি এবার হয়ত আর তার সামনে আসবেনা, কিন্তু সেদিন স্কুলে যাওয়ার সময় ইরাকে আবার আটকালো।ছেলেটি খুব স্বাভাবিকভাবে ইরাকে বলে
-আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো, সেদিন তোমাকে জোর করায় তুমি আমাকে বকা দিয়েছ তাই না,
-মোটেও না আমি আপনাকে ভালবাসতে যাব কেন?
- দেখো তুমি এখনো হয়ত বলছনা,আমি আমার বাবাকে তোমার বাবার কাছে পাঠাবো, বিয়ের ব্যাপারে তাঁরাই দিসিশন নিবেন।
- আপনি এমন করছেন কেন? আমি আপনাকে ভালো করে বলছি প্লিজ এসব বন্ধ করুন, আমাকে ডিস্টার্ব করা বন্ধ করুন,
একথা বলেই ইরা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল, ছেলেটি হাসছিল, তার হাসি ইরার কাছে বড় বিতখুটে লাগছে,

আজ সকালে ইরা আবার স্কুলে যাচ্ছে, আজকে ইরার কেমন একটু বেশীই ভয় ভয় লাগছিল, এত ভোরে সাধারানত ঢাকার রাস্তায় বেশী মানুষ থাকেনা, কিন্তু আজকে মনে হচ্ছে রাস্তাটা একটু বেশী ফাঁকা, আজকেও কি ওই ছেলেটা আসবে? এটা ভাবতেই দেখে ছেলেটি সামনে হাজির,
-শুনো ইরা আজকে ক্লাস শেষে তোমাকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাব, আমার একটা বন্ধুর বিয়ে ,
-অসম্ভব আমি মরে গেলেও যাবনা।
এবার ছেলেটা প্রচণ্ড চিৎকার করে বলতে লাগল,
-ওই মেয়ে তোমার এত ভাব কিসের? থাকতো ভাড়া, আমি বাড়ির মালিক, তোমার বাপ কি করে ?চাকরি করে, আমার কিসের অভাব? টাকা বাড়ী গাড়ি সবই আছে, দেখতে কি আমি খারাপ? এই গলির যত মেয়ে আছে সবাই আমার সাথে শুতে চায়, অথচ তুমি? আমার সাথে ভাব মেরো না, স্কুল শেষ করে আসো দেখমু কেমনে আমার সাথে না যাও।

ইরা এখন তাই খুব ভয় পাচ্ছে, ভয়ে তার খুব পানির পিপাসা লেগেছে, সে আজকে পুরো ক্লাস করেনি, আগেই বাসায় চলে যাচ্ছে, আজকে বাসায় গিয়েই সব কিছু আব্বু আম্মুকে খুলে বলবে সে, তাই সে বাসার উদ্দেশে হাঁটছে।কিন্তু আজকে বাসাটাও অনেক দূরে মনে হচ্ছে, কাঁদতে কাঁদতে তার লাল গালটা একদম রক্ত লাল হয়ে গেছে।
আচ্ছা ওই ছেলেটা কি এখনই এসে আমাকে ধরবে? না, সে মনে হয় বুঝবেনা আমি যে আজকে তাড়াতাড়ি ফিরে যাচ্ছি, ইরা মনে মনে ভাবতে লাগল আর তার হাঁটার গতি আরও বাড়িয়ে দিল,আর সে মনে মনে ঠিক করল যদি আসেও সে কোন কথা না শুনেই বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিবে!সে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে হাঁটছে......
হঠাৎ পিছন দিক থেকে একটি বাইক এসে তার সামনে থামল, ইরার চোখ বড় হয়ে গেল, সে ভয়ে আঁতকে উঠল।ইরা চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিল "বাঁচাও...... বাঁচাও"

©শামীম মোহাম্মদ মাসুদ
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×