somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিপ্পি সংস্কৃতির ইতিহাস

০৩ রা মে, ২০১৫ দুপুর ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে এদের কেউ কেউ বলতে লাগল ‘আই অ্যাম হিপ্পি’। আবার কেউ কেউ ওদের বলত হিপ্পিস্টারস।ষাট ও সত্তর দশকে মার্কিন তরুণ প্রজন্মকেই মূলত হিপ্পি বলা হয়ে থাকে। এই তরুণ প্রজন্মের চোখে ছিল বিপ্লবের স্বপ্ন, ছিল সমাজ পরিবর্তনের আকাঙ্খা । এভাবে হিপ্পি আন্দোলন শুরু। ততদিনে মিউজিক্যাল স্টাইলও বদলে গেছে। জ্যাজ ও সুইং জায়গায় এসেছে রক এবং রক অ্যান্ড রোল। যে কারণে বলা হয় বিট সংস্কৃতি থেকেই হিপ্পি সংস্কৃতির উদ্ভব।এই তরুণ প্রজন্ম এক স্বপ্নাতুর আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল এবং সে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল মার্কিন দেশ থেকে দেশান্তরে। সে সব দেশেও সৃষ্টি হয়েছিল বিদ্রোহ মনোভাবাপন্ন এক নবতর স্বাপ্নিক আন্দোলনের। যদিও আন্দোলনটি সুসমন্বিত ছিল না। ছিল না লিখিত ইশতেহার কিংবা একক কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব; ছিল কেবল পরিবর্তনের জন্য হাহাকার আর কর্পোরেট-প্রভাব, ভোগবাদ, ভিয়েতনাম যুদ্ধের রক্তাক্ত অভিলাষ পরিত্যাগ করে এক যৌথ পরিভ্রমণশীল সহজ জীবনধারায় ফিরে যাওয়ার আতীব্র আকুতি। সানফ্রানসিসকোর হাইট-অ্যাশবারি। সানফ্রানসিসকো ছিল হিপ্পি বিপ্লবের কেন্দ্র। ষাটের দশকের গোড়ায় সংগীত, সাইকোঅ্যাকটিভ ড্রাগস, যৌনস্বাধীনতা, সৃজনশীলতা এবং প্রগতিশীল রাজনীতির কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। সানফ্রানসিসকোর হাইট-অ্যাশবারি; এখানেই ১৯৬৭ সালের গ্রীষ্মে মার্কিন সমাজের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে এক লাখ সংস্কৃতি কর্মী ও হিপ্পিদের এক মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই মহাসমাবেশ ‘দ্য সামার অব লাভ’ নামে পরিচিত। ওই একই সময় হিপ্পিরা নিউ ইয়র্ক, লস এঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া এসব শহরে জড়ো হয়ে নিজেদের উপস্থিতি তুলে ধরে। এর ফলে হিপ্পি-দর্শন এর প্রতি মার্কিন জনগণ সচেতন হয়ে ওঠে। বিংশ শতকের তিরিশ বছরের মধ্যে দু-দুটি ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হলো। মার্কিন সমাজে অর্থনৈতিক মহামন্দা সাধারণ জনজীবন বিপযস্ত হলো। এসব মর্মান্তিক ঘটনার ফলে সচেতন কবি-সাহিত্যিকের মনে প্রতিষ্ঠানবিরোধী আন্দোলনের ভাবনা উঁকি দেয়। তারা ভাবল আসলে সমাজ মানুষের ওপর মূল্য আরোপ করে মানুষের অবশ্যই সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব অস্বীকার করা উচিত। এভাবে পঞ্চাশের দশকে-বিশেষ করে মার্কিন সাহিত্যমহলে প্রতিষ্ঠানবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে। এই আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন কবি অ্যালেন গিনসবার্গ।
পঞ্চাশের দশকের কবিদের কবিতায় ক্ষোভ আর হতাশা এবং বিশ্বের অসঙ্গগতি প্রকাশ। এদের যে ঞযব ইবধঃং বলা হত তার কারণ এই কবিতার সুরারোপ ও তালের প্রয়োগ। পঞ্চাশের দশকে এ আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। কফি হাউসগুলোয় আড্ডা চলে। আজো কফিহাউসগুলো কবিতার পাঠ হয়। এসব ছন্নছাড়া দের পরনে সর্বদা শীর্ণ পোশাক, মুখ ভরতি দাড়িগোঁফ, লম্বা চুল আর চোখে লালচে সানগ্লাস। দিনভর মূলত জ্যাজ ও সুইং সংগীত ডুবে থাকতো।
তবে হিপ্পি শব্দের প্রকৃত মানে অনেকেই জানে না। সান ফ্রানসিসকো ক্রনিকলের কলাম লেখক হেরব কায়েন শব্দটি জনপ্রিয় করে তোলেন। হিপ্পিদের বিটনিকসদের নতুন প্রজন্ম বলা হল। হিপ্পিরা বিটনিকসদের কফিহাউসভিত্তিক সংলাপ আড্ডা ছড়িয়ে দিল আমেরিকার পথে প্রান্তরে। সীমানা পেরিয়ে গেল। নিউজিল্যান্ডের নামবাসা থেকে মেক্সিকোর আভানডারো। সবর্ত্রই বিদ্যমান সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ আর বিতৃষ্ণা। আর যৌথ পরিভ্রমণশীল সহজ জীবনধারায় ফিরে যাওয়ার আকুতি।
হিপ্পিদের অনেকেই যিশু, বুদ্ধ, হেনরি ডেভিড থুরো এবং মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত। হিপ্পিরা শান্তিপ্রিয়। তারা ষাট দশক জুড়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করছে। ১৯৬৪ সালের ২২ এপ্রিল ডাবলিউ এন বিসির টিভির চ্যানেল ফোর-এ এক জন ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদকারীকে দেখা গেল নিউইর্য়ক শহরের রাস্তায় অবস্থান ধর্মঘট করছে। প্রতিবাদকারীর পরনে টিশার্ট, ডেনিম জিন্স ও লম্বা চুল। পুলিশ অফিসার ও রিপোর্টাররা তাকে বলছে হিপ্পি। আর এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো মার্কিন টিভিতে হিপ্পি শব্দটি উচ্চারিত হল। হিপ্পিরা এমন এক বিশ্বজনীন বিশ্বাস-ব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছে যা প্রতিষ্ঠিত সামাজিক, রাজনৈতি এবং নৈতিক কাঠামোকে ছাপিয়ে যায়।
হিপ্পি-দর্শনের মূলে রয়েছে প্রেম ও স্বাধীনতা-যা বিদ্যমান দমনমূলক পুরোহিততান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোয় নেই। এ কারণেই অনেকে ষাটের দশকের হিপ্পি আন্দোলনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছিল। কারণ হিপ্পি আন্দোলন ছিল প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতা-কাঠামোর বিরুদ্ধে বিপ্লব। যদিও হিপ্পিরা নিজেদের ক্ষমতার ভিত্তি স্থাপন করতে চায় না। হিপ্পিরা অন্যদের ওপর তাদের বিশ্বাস চাপিয়ে দেয় না। তারা নিজেদের জীবনধারা ও যুক্তি দিয়ে পৃথিবীকে বদলাতে চায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৫ দুপুর ২:০৮
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×