somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাড়িওয়ালির অশরীরি মেয়ে - শেষ পর্ব

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বারবার কলিংবেলের শব্দে খানিকটা বিরক্তি নিয়েই দরজা খুলল শানুর বাড়িওয়ালি । দারোয়ানকে দেখে যেইনা একটা ঝাড়ি দিতে যাবে অমনি দেখে পেছনে একটা বয়ষ্ক লোক আর একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে । দারোয়ানের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন কি হইছে, ওনারা কারা । মনে মনে ভাবছিলেন হয়ত ঘর ভাড়া নিতে চাচ্ছে নাকি, ছাদের এক পাশের রুম দুটাত খালি, আর ভাড়া চাইলে দিয়ে দেয়া যায় ভাবলেন তিনি, যদি কেবল বাপ আর ছেলে থাকে , নাকি কেবল ছেলে থাকবে - বাপকে সাথে করে এনেছে বাসা ভাড়া নিতে সুবিধা হবার জন্য । অবশ্য ছেলে একা থাকলেও সমস্যা নেই, উপরেত এমনিতেই একটা ছেলে থাকে । অনেক দিন ধরে ঐ বাসা খালি পড়ে আছে, এখন তাড়াতাড়ি ভাড়া হয়ে গেলেই হয় ।

দারোয়ান বেশ জোরেই বলা শুরু করল, উনি ছাদের ঘরে থাকে যে ছেলে, শানু ভাই, উনার আব্বা, সাথে উনি শানু ভাইয়ের বন্ধু । তিন দিনে ধইরা শানু ভাই এর কোন খবর নেই । তাই ওনারা আসছেন খবর নিতে ।

বাড়িওয়ালি কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন, বলে কি, না জানি আবার কোন বিপদে পড়তে যাচ্ছেন । এমনিতেই চারিদিকে ছেলে পেলের যে হারে জঙ্গী দলে জড়ানোর খবর পেপারে আসছে, তাতে এই শানু ও যদি ঐ দলে যোগ দেয় তাহলেত পুলিশ নিয়মিত হানা দিয়ে তার বিল্ডিং এর খবর করে ছাড়বে, ভাড়াটিয়ারা সবাই না জানি আবার এই ঝামেলা দেখে বাসা ছেড়ে দেবার নোটিশ দিয়ে বসে। নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বললেন হয়ত কোথাও ঘুরতে টুরতে গেছে, মোবাইলে চার্জ নেই তাই খবর পাওয়া যাচ্ছেনা ।

তিনি দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলেন লাস্ট কবে শানুকে দেখেছে । দারোয়ান বলল তার মনে নেই ।
অমনি সবার সামনে দারোয়ানকে একটা ঝাড়ি দিয়ে বললেন, তুই থাকিস কোথায়, বিল্ডিং এর লোকজন কে আসল কে আসলনা সেটা জানসনা কেন।

কাঁদ কন্ঠে শানুর বাবা বলা শুরু করলেন, ছেলের জন্য আমরা একটা মেয়ে পছন্দ করেছিলাম। তাও মাসখানেক আগের কথা, সে এখন বিয়ে করবেনা এই বলে অনেক দিন পার করে দিয়েছিল । শেষে ছেলে নিজে থেকেই মাকে জানাই সে বাড়িতে আসবে, মেয়ে পছন্দ হলে বিয়ে করবে । শুক্রবার সকালে তার বাড়ি রওয়ানা হবার কথা ছিল । সকালে আমরা ফোন দিলাম অনেকবার, ফোন ধরে নাই । ভাবছি হয়ত বাসে ঘুমায়, তাই টের পায় নাই । এরপর সন্ধ্যা থেকে আর ছেলের মোবাইলে কল যায়না । আমরাত টেনশনে । ছেলের মা বলল হয়ত আবার মত বদলাইছে তাই ফোন বন্ধ করে বসে আছে ।

শনিবার গেল, রবিবারেও ছেলেরে ফোনে পাইনা । পরে তার বন্ধুদেরকে ফোন দিলাম, তারাও কেউ কিছু জানেনা । শেষে কালকে রাতের বাসে আমি রওয়ানা দিলাম, সকালে ওর বন্ধুর মেসে যাইয়া ওরে নিয়ে এই বাসায় আসলাম ।

বাড়িওয়ালি কি ঘটনা ঘটতে পারে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেননা, তার সাহেব, ছেলে, মেয়ে কেউই ঘরে নেই । তিনি বললেন, তো এখন কি করতে চান আপনারা।

দারোয়ান বলল, ওনারা শানু ভাইর রুমে যাইয়া দেখতে চায়, এই জন্যই আপনার কাছে নিয়ে এলাম ।

দারোয়ানের উপর তার মেজাজ আবার চড়ে গেল । একটা ছেলে তিন দিন ধরে ঘরে আসেনা, তুই এটা খেয়াল করবিনা, বসে বসে আর ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া দিন কাটাস । তোরেত আর চাকরিতে রাখা যাবেনা । বিল্ডিং এ চুরি ডাকাতি হয়ে গেলেও তুই টের পাবিনা । সেদিন আমার গাড়ি ভাঙ্গল, আর তুই রুমে ঘুমাইতেছিলি ।

দারোয়ানও হালকা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, আমার ঘুমের সাথে গাড়ির কি সম্পর্ক, আমি জেগে থাকলে কি ফুলের টব গাড়িতে না পড়ে অন্য কোথাও পড়ত । চাকরি না থাকলে আর কি, আরেকটা খুইজা নিমু, দারোয়ানের চাকরির অভাব নাই ।

তাদেরকে আর আগাতে না দিয়ে শানুর বাবা বলল, আপা আমরা একটু ওর ঘরটা দেখে আসি ।

কি মনে করে বাড়িওয়ালি নিজেও তাদের সঙ্গে চললেন ।

লিফট থেকে নেমে প্রথমে দারোয়ান, তারপর শানুর বাবা, বন্ধু, সবার শেষে বাড়িওয়ালি সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠছেন, কারো মুখে কোন কথা নেই । সবাই শানুর ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল । দেখে মনে হচ্ছে দরজা লাগানো । দারোয়ান বাইরে থেকে কয়েকবার শানু ভাই শানু ভাই বলে জোরে ডাক দিল । জানালার পর্দা ঢাকা থাকয় কিছু দেখা যাচ্ছেনা । ডাকাডাকি থামিয়ে সে দরজায় ধাক্কা দিতেই খুলে গেল । আর অমনি চিতকার করে বলল, ঐ যে শানু ভাই শুইয়া আছে ।

হুড়মুড় করে তারা তিন জন রুমে ঢুকল, শানুর কোন সাড়া শব্দ নেই । দারোয়ান কাছে গিয়ে শানুর হাত ধরে টান দিল, না কোন সাড়া নেই ।
হায় আল্লাহ, মইরা গেছে নাকি, জোরে বলে উঠল সে । বাড়িওয়ালির কানে যেতেই তার বুক ধক করে উঠল।
তিনি রুমের বাইরে থেকেই বলে উঠলেন, নেড়েচেড়ে দেখ, তাড়াতাড়ি নামিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যা।
শানুর বাবা আর বন্ধু বিষ্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে, তাড়া নড়াচড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, কোন সাড়া নাই দেখে । দারোয়ান শানুর মুখে কাছে কান এগিয়ে নেয়, বুকে হাত রাখে । চিতকার দিয়ে বলে উঠে, এখনও মনে হয় বাঁইচা আছে, তাড়াতাড়ি ধরেন, হাসপাতাল নিতে হইব ।
চিতকারে শানুর বাবা আর বন্ধুর সম্বিত ফিরে আসে, তিনজনে মিলে শানুকে ধরাধরি করে লিফটের দিকে এগিয়ে যায় তারা ।


********************************************************

এখনও বেঁচে আছে শুনে বাড়িওয়ালি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, যাক আল্লাহ বাঁচাইছে, নতুন কোন ঝামেলার হাত থেকে, হাসপাতাল নেয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকলেই আর বড় কোন ঝামেলা হবার সম্ভাবনা নেই । স্বস্তি নিয়ে তিনি কিছুক্ষন ছাদে হাঁটাহাঁটি করেন, ছাদে লাগানো গাছগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন ।

হঠাত তার মনে হল ছেলেটার রুমে গিয়ে দেখিত আসলে ঘটনা কি, বিষটিষ খেল নাকি , এ যুগের ছেলে পেলে, বিয়ে না করলে নাই, তাই বলে বিষ খাওয়ারতো কথা না। রুমে ঢুকে তেমন কোন বিশেষ কিছু তার চোখে পড়লোনা । বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন গোছানো ছেলে দেখা যায়, রুম মোটামুটি গুছিয়ে রাখা । কম্পিউটার টেবিলও পরিচ্ছন্ন, চেয়ারে খালি একটা শার্ট ঝুলছে । এমন সময় ঘরের দরজাটা হালকা নড়ে উঠল কিনা তিনি ঠিক বুঝতে পারলেননা, দরজার দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি । বাইরে বাতাস ও নেই যে দরজা নড়বে । তার মনে হল কেউ আস্তে করে বেড়িয়ে যাবার সময় কিংবা চুপিসারে ঘুরে ঢুকতে দরজায় হাত রাখলে যেমন হয় তেমন হয়েছে ব্যাপারটা ।

এই ভাবনাকে প্রশ্রয় না দিয়ে তিনি পাশের রুমের দিকে গেলেন । একদিকে ছোট্ট একটা ওয়্যারড্রোব ছাড়া রুমে আর কিছু নেই । বাড়িওয়ালির চোখ ওয়্যারড্রোব এর উপর গিয়ে পড়ল। তিনি কাছে গিয়ে কিছুটা চমকে গেলেন । ওয়্যারড্রোবএর উপরে একটা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি আর তার পাশে একটা আলতার বোতল, অর্ধেক আলতা আছে তাতে ।

ঘটনার কিছু তিনি বুঝলেননা, এই ছেলের জন্য বাবা-মা মেয়ে পছন্দ করে তাকে দেখতে যেতে বলেছে, আর এখানে তার রুমে মেয়েদের শাড়ি আলতা । আরেকটা জিনিস তার মাথায় ঢুকছেনা, শানু কি তবে মেয়ে নিয়েই এখানে থাকত, বিয়ের কথা শুনে সে শানুকে বিষটিষ খাইয়ে পালিয়ে গেছে । কিন্তু সেটাই বা কেমনে সম্ভব, দারোয়ানের চোখ, তার চোখ ফাঁকি দিয়ে এই বাসায় একটা মেয়ে বসবাস করবে সেটাত সম্ভব না । তিনি মাঝে মাঝেই বিকেলে ছাদে আসেন, এমন কিছু হলেত তারও চোখে পড়ত । মনে মনে ডিসিশান নিয়ে নিলেন এই দারোয়ানকে ছাটাই করে দিতে হবে ।

এমন সময় তার নাকে একটা গন্ধ পেলেন । লেবু পাতার গন্ধ । অন্য সময় এই মিস্ট গন্ধ তার ভাল লাগত, তিনি ছাদে আসলে লেবু গাছের পাতা ছিড়ে হাতে নিয়ে যান দু একটা। কিন্তু এখন এই গন্ধ কই থেকে আসছে । তিনি নিজের হাতের দিকে তাকালেন। না হাতে কোন লেবু পাতা নেই । গন্ধটা রুম থেকেই আসছে, কিন্তু এই ওয়্যারড্রোব ছাড়াত রুমে আর কিছুই নেই । গন্ধটা কেমন যেন বাড়ছে কমছে । বাড়িওয়ালি ভয় পেয়ে গেলেন । রুমে কি কিছু বা কেউ আছে ।

তিনি তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হয়ে এলেন, দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দিলেন । তার হাত পা কাঁপছে । ছাদের দরজায় এসে ধপাস করে বসে পড়লেন বাড়িওয়ালি ।

লেবু পাতার গন্ধটা এখন আবার পাচ্ছেন তিনি ।



সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×